তিন ওভারের বিরতির পর অধিনায়ক বোলিং আক্রমণে আনলেন ইমরান তাহিরকে। ২২০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে থাকা খুলনা টাইগার্স তখনও কক্ষপথ থেকে ছিটকে যায়নি। অ্যালেক্স হেলসের ব্যাটে ভর করে বিশাল সেই টার্গেট ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন তখনও হয়নি ফিঁকে। কিন্তু সবকিছু এক লহমায় বদলে দিলেন তাহির।
একটা ফুলার লেন্থের বল। সজোরে চালালেন হেলস। বিধিবাম! লং অফ অঞ্চলে শেখ মেহেদীর বিশ্বস্ত হাতে তা বন্দী। ইমরান তাহির এরপর ছুটলেন সাগরিকার বুকে। উচ্ছ্বাস প্রকাশের এটাই যে তার চিরায়ত নিয়ম। বয়সটা ৪৫ ছুঁইছুঁই। তবুও তিনি ছুটে বেড়ান সেদিনের কোন এক ছোকড়ার মতই।
রংপুর রাইডার্সের জার্সি গায়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামে খেলতে নেমেছেন ইমরান তাহির। স্কোরবোর্ডে বিশাল এক রান, তার দলের পক্ষেই। সুতরাং একটু হলেও চাপটা কম ছিল। তবুও প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কুপকাত করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি ইমরান তাহির।
গুণে গুণে ৫টি উইকেট নিজের করে নিয়েছেন ডানহাতি এই লেগস্পিনার। শুরুটা তিনি করেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়কে দিয়ে। ইমরানের স্লটের বলে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে শট খেলেন বিজয়। তবে ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটেনি ঠিকঠাক। মিড-অফে তালুবন্দী বিজয়।
এরপর আফিফ হোসেনও তাহিরের উইকেটে পরিণত হন। সুইপ শট খেলে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ধরা পড়েন আফিফ। যখনই উইকেটের প্রয়োজন পড়েছে ইমরান তাহির রংপুরকে এনে দিয়েছেন উইকেট। চার ওভারের প্রত্যেক ওভারেই একটি করে উইকেট পেয়েছেন প্রোটিয়া এই লেগ স্পিনার।
অ্যালেক্স হেলসের পর সেই একই ওভারে আকবর আলীকে আউট করেন তিনি। তরুণ ক্রিকেটার আকবর আলীকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। সেখানেই থেমে যেতে চাইলেন না ইমরান। এবারের বিপিএল যাত্রা স্মরণীয় করে রাখতে চাইলেন তিনি। তাইতো ব্যক্তিগত শেষ ওভারে নিজের পঞ্চম উইকেট শিকার করেন ইমরান।
খুলনা টাইগার্সের স্বীকৃত শেষ ব্যাটার হিসেবে হাবিবুর রহমান সোহানের উইকেটটিও তুলে নেন ইমরান। তার করা গুগলিতে কাট করতে চেয়েছিলেন সোহান। কিন্তু ব্যাটে লেগেও সে বল আঘাত করে স্ট্যাম্পে। এরপর আর ইমরান তাহিরকে ঠেকায় কে! তিনি আবারও দৌড় শুরু করলেন। যেন ৪০০ মিটার রিলে তে ব্যাটনটা দিতে হবে পরবর্তী কাওকে।
ইমরান অবশ্য ব্যাটনটা রেখে যাচ্ছেন বটে। মাত্র ২৬ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেছেন। ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা থেমে যাবে হয়ত, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। তিনি বয়স বাড়লেও, পারফরম করবার মানসিকতার ব্যাটন দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পরবর্তী প্রজন্মকে অদম্য হওয়ার ব্যাটন দিয়ে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন চিরতরুণ থাকার ব্যাটনও।