ঠিক ১০ টা রান! ১০ রানের কোটা পেরোলেই তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছাতে পারতেন ধ্রুব জুরেল। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে তিনি ৯০ রানের ইনিংসটা খেললেন, তা শতকের চেয়েও নিশ্চয়ই কোনো অংশে কম নয়। রাঁচি টেস্টের তৃতীয় দিন এসে রীতিমতো ধ্রুবতারা হয়ে উঠেছিলেন মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা ধ্রুব জুরেল।
ম্যাচের দৃশ্যপটটাই আগে সামনে টেনে আনা যাক। তৃতীয় দিনের খেলা যখন শুরু, তখন রীতিমতো ব্যাকফুটে টিম ইন্ডিয়া। ইংলিশদের চেয়ে ১৩৪ রানে পিছিয়ে থেকে দিনের শুরু। হাতে রয়েছে ৩ উইকেট। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে রয়েছেন শুধু জুরেল একাই। আগের দিনে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন। তৃতীয় দিনে এসে কুলদ্বীপ যাদবকে সঙ্গে নিয়ে এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার শুরু করেন প্রতিরোধের লড়াই।
১৩৮ বলে তাঁদের দুজনের মধ্যে ৭৬ রানের একটা জুটি ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গেল খানিকটা। এরপর আকাশ দ্বীপকে সঙ্গে নিয়ে আরও একটি ৪০ রানের জুটি। ব্যাস এতেই, ৩০০-র সামনে সংগ্রহ দাঁড়িয়ে যায় ভারতের। ধ্রুব জুরেল নিজেও পঞ্চাশ পেরিয়ে এগিয়ে যান শতকের দিকে। তবে শেষ পর্যন্ত টম হার্টলির স্পিনেই ৯০ রানে থামতে হয় তাঁকে।
ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্টে এসেই সেঞ্চুরি আর ছোঁয়া হয়নি এ ব্যাটারের। তবে এমন একটা ইনিংসই ভারতের মান বাঁচিয়েছে। অল্প রানের গুঁটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে তিনি এনে দিয়েছেন ৩০০ পেরোনো সংগ্রহ। আর তাতে বড় রানের লিড পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে ছিটকে যায় ইংলিশরা। রাঁচি টেস্টের লড়াইটা এখন তাই সমানে সমান। যার নেপথ্যের নায়ক ছিলেন এই ধ্রুব জুরেল।
অবশ্য জুরেলের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার যাত্রাতেও ছিল রোমাঞ্চ জাগানিয়া এক লড়াই। জুরেলের বাবা নেম সিং জুরেল ছিলেন কারগিল যুদ্ধের এক যোদ্ধা। মাত্র ৫ বছর বয়সে আগ্রায় বাসের চাকার তলে পড়েছিল তাঁর ছেলের বাঁ-পা। এমন দুর্ঘটনায় জুরেলের ক্রিকেটার হওয়ারই কথা ছিল না। কিন্তু যোদ্ধা বাবার সন্তানও তো যোদ্ধাই হবেন।
ওমন একটা দুর্ঘটনার পরও ক্রিকেটার বনে গিয়েছেন ধ্রুব জুরেল। শুধু তাই নয়, রাঁচি টেস্টে দেখালেন নিজের প্রতিভাও। শতক ছোঁয়া হয়তো হয়নি। তবে একদিন নিশ্চয় ঠিকই শতকের আক্ষেপ মেটাবেন, হয়ে উঠবেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন এক ধ্রুবতারা।