আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যখন জেসন হোল্ডারকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয় ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই) তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর! তরুন, নয় কি? অবশ্য তরুণ তো তখন উইন্ডিজ ক্রিকেটও! বখে যাওয়া, ভুল পথে চলা এক ক্রিকেট দল!
ক্যারিয়ার পরিসংখ্যা তখন আহামরি কিছু নয়, একাদশে জায়গা পাকা করার লড়াইতে রত এক তরুণের কাঁধে এমন গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ায় ক্রিকেট পাড়ায় সমালোচনার কমতি ছিল না। সিনিয়র ক্রিকেটারদের ন্যাশনাল টিমের প্রতি উদাসীনতা, বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের দূরত্ব তরুনের জন্য কাজটিকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
কিন্তু, নীরবে নিজের কাজ ঠিকই করে গেছেন তিনি। একটু একটু করে ভাঙনের বিপরীতে বাঁধ তৈরি করেছেন। মাঠের ক্রিকেটে সফলতা এসেছে কদাচিৎ, কিন্তু দলটিকে আগলে রেখেছেন নিজেকে সামনে এনে। ব্যর্থতার আঘাতে তরুন হয়েছে পুরুষ, সাধারনের কাতার থেকে হয়েছেন নেতা!
উইন্ডিজের মত একটি দলকে একসুতোয় গাঁথতে যে প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের প্রকাশ থাকতে হয়, হোল্ডারের সেটা আছে। লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট বলে যে টার্মটি আছে, সেটার স্পেশাল উদাহরণ কিন্তু হোল্ডার। শেষ নয়টি টেস্টে নিয়েছেন ৫০ উইকেট, গড় মাত্র ১২! অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ের চূড়ায় অবস্থান!
একজন ভালো ক্যাপ্টেনের প্রধান গুন হচ্ছে নিজ দলের, নিজের লিমিটেশন এবং শক্তির জায়গা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা রাখা। হিট দ্য ডেক হার্ড টাইপ বোলার থেকে নিজেকে মাইগ্রেট করে পিচিং দ্য বল আপ টাইপ বোলার হয়ে যাওয়াটা সহজ কাজ নয়, বিশ্বাস না হলে মরনে মরকেলকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। নিজেকে যেমন বদলে নিয়েছেন, তেমনি বদলে দিয়েছেন দলের মানসিকতাও।
ক্যারিবীয় পাওয়ার ক্রিকেট কালচার থেকে বের করে এনেছেন এমন একটি টেস্ট দল, যার প্রতিটি সদস্য এই ফরম্যাটটাকে ভালোবাসে। ভিভ রিচার্ডস পরবর্তী যুগে এতটা অথোরিটি নিয়ে কোনো অধিনায়ক উইন্ডিজ ক্রিকেটে আসে নাই। হয়ত এই দলটা উইন্ডিজের সোনালী যুগকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না, কিন্তু পাহাড় ডিঙানোর প্রথম পদক্ষেপ নেবার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে, সেই সাথে জেসন হোল্ডারকে উইন্ডিজ ক্রিকেট মনে রাখবে একজন সত্যিকারের নেতা হিসেবে।