ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় সকল ক্রিকেট রেকর্ড যার দখলে। তাঁর নাম অজানা নয় কারোই, তিনি হলেন শচীন টেন্ডুলকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের সকল নিজের দখলে রেখেছেন তিনি। তাঁকে আলাদা করিয়ে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন কখনোই ছিল না কিংবা আর কখনো দরকার হবেও বলে মনে হয় না। ক্যারিয়ার জুড়ে এই ব্যাটসম্যানকে ডাকা হত লিটল মাস্টার কিংবা মাস্টার ব্লাস্টার হিসেবে।
২০০৪ সালে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১৫ বছর উপলক্ষে উইজডেন ক্রিকেট এশিয়া ম্যাগাজিনে একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। এই সাক্ষাৎকার টাই তুলে ধরা হলো খেলা ৭১-এর পাঠকদের জন্য।
শচীন, এটা আপনার ক্যারিয়ারের ১৫ তম বছর। অনেকের কাছে এটা পুরো একটা ক্যারিয়ার। আপনার জীবনে ক্রিকেট কতটা পরিবর্তিত হয়েছে বলে মনে হয়?
অবশ্যই, খেলা অনেক পাল্টে গেছে। আমি এটা বলতে পারি টেস্ট ক্রিকেটের থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট অনেক বেশি পরিবর্তিত হয়েছে। আমি যখন ১৯৮৯ সালে খেলা শুরু করি তখন জয়ের জন্য ২৬০ রান যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু এখন ২৬০ রান সাধারণ মানের রান। এই বছর আমরা যখন পাকিস্তানে খেললাম, তখন আমরা চার ম্যাচে ৩০০ এর উপরে রান করেছি। এছাড়াও আরো দুই ম্যাচে ৩০০ এর কাছাকাছি রান করেছি।
খেলোয়াড়রা জানে আপনাকে বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আর এই কারণেই সম্ভবত টেস্ট ক্রিকেট পরিবর্তিত হচ্ছে। কারণ ওয়ানডে ক্রিকেটের এই ধারাই ছড়িয়ে পড়ছে।
ইনিংস ওপেন করার চিন্তা ধারা বদলে গেছে। ম্যাথু হেইডেন, বীরেন্দ্র শেবাগ, ক্রিস গেইল, হার্শেল গিবস তাঁরা প্রচলিত ধারা ভেঙেছে।
হ্যাঁ, এটাকে আপনি ভিন্ন ধরনের ব্যাটিং টেকনিক বলতে পারেন। এর আগে আপনি নতুন বলকে দেখবেন এবং দিনের বাকি সময়ে বোলাররা আপনাকে দেখবে। তবে এখন ব্যাটসম্যানরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আর তাঁরা বিশ্বাস করে যদি বোলারদের দিনের দ্বিতীয় ওভারেই ভারসাম্যহীন করে দেওয়া যায়, তবে সেটা করবে না কেন?
আপনি কি মনে করেন রক্ষণাত্মক ওপেনারদের দিন চলে গেছে?
আমি ঠিক এটা বলি না। মার্ক রিচার্ডসন আছেন, যিনি কিনা পুরাতন ধারার ওপেনার। তিনি অফ স্ট্যাম্পের বাইরের সব বল ছাড়তে পছন্দ করেন। এছাড়াও আকাশ চোপড়া আছে, সেও বেশ ভালো ওপেনার। এদের বাইরে শেবাগ, হেইডেন, গিবস আছে- যারা প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করে।
আপনি কি বলবেন ফাস্ট বোলিংয়ের বৈচিত্র কমে যাওয়ার সাথে এর সম্পর্ক আছে? আপনার ক্যারিয়ারের সেরা দিক হলো, আপনি ওয়াকার ইউনুস, ওয়াসিম আকরাম, অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, গ্লেন ম্যাকগ্রাকে তাঁদের সেরা সময়ে মোকাবিলা করেছেন। বর্তমানে তাদের কেউই এখন নেই।
মাকগ্রা এবং পোলক এখনো আছে সাথে গিলেস্পি যোগ দিয়েছে। পোলক এবং ম্যাকগ্রা তাঁদের কিছুটা গতি হারিয়েছে। কিন্তু তাঁরা নতুন বলে এখনো দুর্দান্ত। এছাড়াও আরো নতুন কিছু বোলার আছে যারা বেশ সেরা হতে পারে। হার্মিসন ৯০ মাইল বেগে বল করে, ফ্লিনটফ নিয়মিত ৮৬,৮৭ মাইল বেগে বল করে। এছাড়াও ইংল্যান্ডের পেসার জোন্স আছে। অস্ট্রেলিয়ায় লি এবং কাসপ্রোভিচ আছে। পাকিস্তানে শোয়েব এবং সামি আছে। আর ভারতে জহির, নেহেরা, ইরফান আছে। ছয় সাত বছরের মধ্যে আপনাদের তাদেরকে সেরা বলতে হবে। তবে এদেরকে মধ্যে সবাইকে হয়তো বলবেন না। কিন্তু দশজনের মধ্যে তিনজনকে বলবেন।
কিন্তু এটাতে কি আপনি একমত যে, আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছরের তুলনায় সর্বশেষ পাঁচ বছরে ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য বেড়েছে এবং পরিস্থিতি কিছুটা ব্যাটসম্যানদের জন্য অনুকূল ছিলো? পিচগুলো বেশ ফ্ল্যাট ছিলো। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও বল আগের মত বাউন্স হয় না।
পার্থের উইকেটে এখনো অনেক পেস আছে। কিন্তু আমরা সেখানে টেস্ট খেলি না। অন্য পিচগুলোতে এতো পেস নেই।
এমনকি ইংল্যান্ডেও আপনি বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেট পেয়েছেন।
হ্যাঁ । লর্ডস এবং ওভালে পেয়েছি। হেডিংলিতে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়। ন্যাটিংহাম খুব সহজ কোনো পিচ নয়।
সাধারণভাবে এটা কি বলা উচিত ব্যাটিং কিছুটা সহজ হয়ে উঠেছে?
আমি এটা বলবো না। কারণ এটা দেখার ভিন্ন উপায় আছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আপনি রান করার জন্য সুযোগ পাবেন কারণ অধিনায়করা আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সেট করে। আর ফ্ল্যাট উইকেটে বোলাররা চেষ্টা করে যাতে রান না হয়। এটা ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমরা যখন অস্ট্রেলিয়াকে ভারতে খেলেছিলাম, আমার মনে আছে চেন্নাইয়ে আমি যখন দুই রান করেছিলাম তখন স্টিভ ওয়াহ ডিপ পয়েন্ট অঞ্চলে ফিল্ডার রেখেছিলো।
কলিন মিলার বেশ বাইরে বল করছিলো। হুসেইনও (নাসের হুসেইন) একই কাজ করেছিলো। হগগার্ড অফ স্ট্যাম্পের দুই ফিট বাইরে বাইরে দিয়ে বল করছিলো। ফ্লিনটফ এবং গিলসও বোলিং এর সময় একই রকম বোলিং করেছিলো। ফ্ল্যাট পিচে বোলাররা আপনার জন্য রান করা বেশ কঠিন করে তুলবে।
এখনকার দিনে দেখা যাচ্ছে কিভাবে ক্রিকেটের গতিশীলতা পরিবর্তন হচ্ছে। বোলিং দল প্রতিপক্ষকে আউট না করে তাদেরকে চেপে ধরার চেষ্টা করে।
এটার কারণ হলো ব্যাটসম্যানরা এখন স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করে। এর জন্য ডিফেন্সিভ ফিল্ডিং রাখা হয়। যদি আপনি সারাদিন অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল রাখেন। তাহলেই অধিনায়ক বলবে কেন আমাদের ডিপ অঞ্চলে ফিল্ডার লাগবে?
কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে বোলিং সহায়ক উইকেটে রান করা আপনাকে বেশ ভালো সন্তুষ্টি দেয়।
যেকোনো ব্যাটসম্যান যখন বোলারদের জন্য সহায়ক উইকেট পান সেখানে রান করতে পছন্দ করেন। সিমিং ট্র্যাক, কুইক ট্র্যাক এবং টার্নিং ট্র্যাকে রান করা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য সন্তুষ্টি জনক। টার্নার উইকেটে একজন দুর্দান্ত স্পিনারকে খেলা বেশ কঠিন।
চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৬ রানের ইনিংস টা টার্নার উইকেটে।
হ্যাঁ। আর পুরো সিরিজ জুড়ে সাকলাইন মুশতাক বেশ ভালো বোলিং করেছে।
আর আপনার প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে পার্থে করা সেঞ্চুরি আপনার জন্য বিশেষ কিছু।
হ্যাঁ, এটা শেষ টেস্ট ছিল এবং বল প্রচুর সুইং করছিলো। এই রকম একটা ইনিংস সত্যিই সন্তোষজনক।
এরপরে আপনি এই রকম উইকেট খুব বেশি পাননি।
২০০২ সালে হেডিংলিতে উইকেট কিছুটা এই রকম ছিলো।
দ্বিতীয় দিনেও?
হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম এটা মারাত্মক পিচ ছিলো। পুরো ম্যাচ জুড়ে অসমান বাউন্স আসছিলো। আমার মনে আছে আমি প্রথম বিকেলে দুইবার পাঁজরে আঘাত পেয়েছিলাম। আমি চেস্ট গার্ড পড়ার জন্য এসেছিলাম। আর সাথে কনুইয়ের গার্ড, যেটা আমি সাধারণত পড়ি না। এরপর আমি কনুইয়ে আঘাত পেয়েছিলাম। হুসেইনও কনুইয়ে আঘাত পেয়েছিলো।
২০০২-০৩ মৌসুমের নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো সেখানকার পিচ গুলো বেশ কঠিন। এখনকার দিনের ব্যাটসম্যানদের ডিফেন্স করার কৌশল বেশ সাবলীল নয়।
আমি একটা কথায় বলবো। এই ট্যুরের পিচগুলো এমন ছিলো যে, আমি এর আগে কখনোই এই রকম পিচে খেলিনি। এমনকি তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময়ও উইকেট শুকিয়ে যায় নি। বল বেশ স্বাভাবিক ভাবে সুইং করছিলো। বোলাররা বেশ স্বাভাবিক লেন্থে বোলিং করছিলো। এমনকি নেটের উইকেটে বেশ খারাপ ছিলো। শেষ পর্যন্ত কে টসে জিতলো সেটাই এখানে প্রধান বিষয় ছিলো।
আপনার বিষয়ে আসি, সবাই বলতেছে আপনার ব্যাটিং বেশ পরিবর্তন হয়েছে।
আপনি যখন দীর্ঘ সময় ধরে খেলবেন এটা স্বাভাবিক। পরিবর্তন ঘটতেই থাকবে এবং আপনি নিজেকে আরো ভালো ব্যাটসম্যান বানাতে চেষ্টা করবেন। আপনার মূল চিন্তা হলো ঝুঁকি পূর্ণ শট খেলা থেকে বিরত থাকা এবং যতটুকু সম্ভব ধারাবাহিক হতে চাবেন।
কিন্তু এই কথাগুলো কি আপনার খেলায় কোনো সমস্যা করে? আপনি সাধারণত আপনার অনুভূতি নিজের মধ্যেই রাখেন। কিন্তু এশিয়া কাপের সময় যারা বলছিলো আপনার ব্যাটিং উপভোগ করে না তাঁদের বিরুদ্ধে আপনি বেশ দৃঢ়ভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন।
আমি ভেবেছিলাম এই বিষয়ে অনেক বেশি কথা বলা হয়ে যাচ্ছিলো। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে যেসব ছেলে ক্রিকেট খেলে তাঁরা বেশ খারাপভাবে বক্তব্য দিয়েছে। যারা ক্রিকেট খেলে তাঁরা জানে টিম মিটিং এবং টিম প্ল্যান বলে কিছু একটা আছে। এটা পুরোটাই আমার নিজের স্বাভাবিক খেলা না,টিম প্লান বাস্তবায়ন করারও একটি বিষয় আছে। আমি সেটাই করতে চাবো যেটা আমার কাছ থেকে দল চায়। আর অবশ্যই ৮৫ গজ দূরে ধারাভাষ্য রুমে যারা বসে আছে তাঁদের মত করে খেলবো না। আপনি কোন দেশ কি করবে সেটা নিয়ে কথা বলতে পারেন না বরং নিজের দিকে খেয়াল দিতে পারেন। এতে কোনো সন্দেহ নাই যে এটা একটি দলীয় খেলা। সব দিনই দলের প্রত্যেকের সবার দলীয় পরিকল্পনা সফল করার বিষয় থাকে।
এমন একটি চিন্তা ভাবনা আছে যে আপনি আপনার ব্যাটিংয়ে আরো বেশি স্বাধীনতা দিতে পারেন। পাঁচ বছর আগের থেকে ভারতের এখনকার ব্যাটিং লাইন আপ বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে।
আমি জানি না আমি আসলে কি করতে পারি কারণ আমি কখনোই সবাইকে খুশি করতে পারবো না। আমি যদি বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হই তাহলে লোকজন বলবে কি দরকার ছিলো বড় শট খেলার। কারণ আশে পাশে স্ট্রোক শট খেলার মত আরো ক্রিকেটার আছে। সে কি ৫০ ওভার খেলার মত টিকে থাকতে পারতো না? আমি অনুভব করি আমার সেভাবে খেলা উচিত যেভাবে আমি খেলা উচিত মনে করি। অন্য কারো মতামত অনুসারে নয়। যদি এমন দিন আসে প্রথম ১৫ বলে ১০০ রান দরকার তখন আমি ভিন্নভাবেই খেলবো।
আপনি কি মনে করেন এটা আপনার জন্য জয়-পরাজয় কোনো পরিস্থিতিই নয়। আপনি যেভাবেই খেলেন না কেন কিছু লোক হতাশ হবেই।
এটা বলা খুব সহজ যে আপনি নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলেন। কিন্তু মাঝে মাঝে আপনাকে কিছু ঝুঁকি নিতেই হবে। আপনি যদি এটা করা শুরু করেন লোকজন অন্যভাবে কথা বলা শুরু করবে। আর আপনি যদি দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা শুরু করেন তাহলে লোকজন আরেক ভাবে ভাবা শুরু করবে। তাই খেলোয়াড়দের পক্ষে বাইরের লোকজনকে খুশি রাখা কষ্টকর। আমাদের ভাবা উচিত দলের পরিকল্পনা কি। এছাড়াও আমি জানি আমি কি করতে পারি। আর লোকজন কি বলছে সেটা নিয়ে আমার চিন্তিত হবার কিছু নেই।
লোকজন বলতেই থাকবে সে আগের মত স্ট্রোক শট খেলছে না। কিন্তু আপনি যদি আমার স্ট্রাইক রেটের দিকে দেখেন স্ট্রাইক রেট আগের মতই আছে এবং আমি রান করছি ভিন্ন ভাবে। যদি আপনি দলের দীর্ঘ দিন থাকেন তাহলে দলে আপনার কাজ পরিবর্তিত হবেই। সেটা ১৫ বছর বা ৭ সাত বছর হোক। আমি মনে করি না সারাবিশ্বের সব ক্রিকেটার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে একই ভাবে খেলে।
আপনার সম্পর্কে একটা কথা বলা যায়, আপনার খেলার ধরণ কিছুটা পাল্টে গেছে।
যদি আমি পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে একই ভাবে খেলে যাই তাহলে প্রতিপক্ষের আমাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে হবে না। তাদেরকে মাথা খাটাতে হবে না। প্রতিপক্ষ আমার খেলা নিয়ে কাজ করে এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বের করে। বোলাররা ভাবে সে এই ভাবে খেলে এবং এই রকম শট খেলে। তাহলে আমি এই জায়গায় বলে ফেলবো এবং তাঁর স্কোরিং শট বন্ধ করে দিবো। আর তাঁকে অন্য পাশে খেলতে বাধ্য করবো।
অথবা তাঁকে রান নিতে দিবো এবং অন্য জনকে বল করবো। তাঁরা যদি চায় তাঁরা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল করবে এবং সাতটি ফিল্ডার অফ সাইডে রাখবে তাহলে তো কাভার ড্রাইভ খেলা খুব বেশি জরুরী না। তাই আপনি এলোমেলো ভাবে খেলেন এবং মাঝে মাঝে লেগ সাইডে খেলেন। আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে কারণ এটা জরুরি। আমি আশা করি লোকজন এটা বুঝতে পারবে যে মাঝে মাঝে আপনাকে বোলাররা আক্রমণ করে এবং আপনাকেও পাল্টা আক্রমণ করতে হবে। ক্রিকেটে মাঝে মাঝেই প্রতিপক্ষে কি করে সেটা বুঝতে হবে। আপনাকে যথেষ্ট স্মার্ট হতে হবে।
কিন্তু আপনার খেলা বেশ লেগ সাইড কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেটা ওয়ানডে ক্রিকেটেও যেখানে ফিল্ডাররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
মাঝে মাঝে কখনো এটা ইচ্ছাকৃত ভাবে আবার কখনো ইচ্ছাকৃত ভাবে হয় না। মাঝে মাঝে মন এবং শরীর একই দিকে কাজ করে না। কখনো কখনো আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী আপনার শরীর চলে না। মাঝে মাঝে আপনি যেতে চান কিন্তু আপনার শরীরের জন্য আপনি যেতে পারেননা, কারণ এটা কোনো মেশিন নয়। মাঝে মধ্যে মনে হয়, বলটি আপনার ছাড়া দরকার কিন্তু আপনি ছাড়তে পারেননা। সিডনিতে ওই রকম ইনিংস আমি ইচ্ছাকৃত ভাবেই খেলেছিলাম। কিন্তু এই রকম অনেক ইনিংস আছে যেগুলো আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে করি নাই। এটা ঘটে গেছে।
আপনি মিড অফ মিড অনের দিকে অনেক সোজা বল খেলে অভ্যস্ত।
কারণ আমি আগেই বলেছি, প্রতিপক্ষ আপনাকে নিয়ে গবেষণা করে। আমি নিশ্চয় সেদিকে ব্যাট চালাবো না যেদিকে ফিল্ডার থাকে। কারণ আমি রান করতে চাই। আমি চাবো সেদিকে ব্যাট চালাতে যেখানে আমি রান করতে পারবো।
এখানে তিনটি শট আছে যা আপনার ট্রেড মার্ক শট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খাটো হয়ে আসা সঠিক লেন্থের বলে পুল করা। এই শটের জন্য প্রথমদিকে ফিল্ডিং সেট করা কঠিন। বোলারের মাথার উপর লফটেড ড্রাইভ এবং পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে কাভার ড্রাইভ। এখনকার সময়ে আমরা এই শট খুব বেশি একটা দেখতে পারি না।
এটার কারণ সম্ভবত আমার আগের কাজ এখন অন্য কেউ করতেছে। যখন শেবাগ আগ থেকেই মেরে খেলছে, তখন আমার জন্য এটা করার দরকার হয় না। আমাদের পরিকল্পনা হল আমাদের শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের যেকোনো একজনের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা। এটা হলো আমাদের পরিকল্পনা এবং আমি সেভাবেই খেলি।
বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে আপনি সেই কয়েকটি শট খেলেছিলেন। অ্যান্ডু ক্যাডডিকের বলে পুল করে স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে ছক্কা হাকিয়েছিলেন।
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আমি শেবাগের থেকে বেশি স্ট্রাইকে রেটে ব্যাটিং করেছি। আমি আরো বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলাম। আর আমি ছিলাম বোলারদেরকে তাঁদের কমফোর্ট জোন থেকে বের করে দেওয়ার কাজে। শেষ পর্যন্ত এটা নয় যে আমি কি করেছে বা শেবাগ কি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আমাদের দল কি পরিমান রান করেছে।
বছরের পর বছর ধরে আপনি বেশ আধিপত্য ধরে খেলেছেন। বর্তমানে আপনি এখন রক্ষার খেলা খেলছেন,কারণ আপনি এটাকে আপনার কাজ হিসেবে দেখেন। আপনি কি পুরাতন শচীনকে মিস করেন, যা দেখে বোলারদের চোখে ভয় দেখা যায়?
আসলে তা না। আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার খেলার ধরণ পরিবর্তন করেছি। আমি কোনো শট খেলতে কখনো না বলি নি। তবে হ্যাঁ, পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আপনাকে খেলতে হবে। যেহেতু এটা গড়ে উঠার অংশ। আপনি ১৬ বছর বয়সে যা করতে পারবেন ৩৫ বছর বয়সে তা করতে পারবেন না। আপনার চিন্তা পরিবর্তিত হবে।
এমন কিছু দিন আছে যেদিনে আমি সব করেছি। বিশ্বকাপে অনেক ম্যাচে আমি এই রকম ব্যাটিং করেছি। এমনকি হায়দ্রাবাদে নিউজিল্যান্ডের (বীরেন্দ্র শেবাগ এবং শচীন টেন্ডুলকার ৩০ ওভারে ১৮২ রান করেছিলো) বিপক্ষে ম্যাচেও আমি মারকুটে খেলেছি। এই দিন ভিরু (বীরেন্দ্র শেবাগ) আমাকে বলেছিলো, ‘আজকে আমি তোমার মত খেলেছি আর তুমি আমার মত খেলেছো।‘
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে শোয়েব আকতারকেও এইভাবে ব্যাটিং করেছিলেন।
এটা পরিকল্পনা করা ছিলো। বল চারপাশের পড়ছিলো। আর প্রথম ওভার খেলার পর আমি নিজেকে বলি আপনি যদি কিছু করতে না পারেন তাহলে সে তাঁর অষ্টম এবং নবম ওভারে একই জায়গায় বল করবে। আর এটা আমাদের জন্য ভালো হবে না। আর আমি সেভাবেই খেলতে গিয়েছিলাম আর খেলতে পেরেছি। আর আমি ৪০ রান যুক্ত করতে পেরেছি।
বয়সের সাথে সাথে আরেকটি বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে। পুরাতন টেন্ডুলকার আগে প্রতিষ্ঠিত বোলারদের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইতেন। ১৯৯৮ সালে শেন ওয়ার্নের সাথে বিখ্যাত হয়েছিলো। কিন্তু এখনকার টেন্ডুলকার মেপে কাজ করে।
আমি সবসময় পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করি। অস্ট্রেলিয়ায় আমি দুই বার বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছি। তারপর আমি বললাম আমি নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে চাই? আমাকে দলীয় কারণে অবদান রাখতে হয়েছে। তাই আমি আমার খেলা পরিবর্তন করেছিলাম। ভারত স্কোর বোর্ডে ৬০০ এর বেশি রান যোগ করতে চেয়েছিলো। বোর্ডে ৬০০ রান যোগ করলে আমি কিভাবে রান করছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এখন এমন একটি পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছ যখন বোলারদের আপনার কাছে হারানো সামান্যতম কিছু নেই। তবে এটা আপনার জন্য জয় বা পরাজয় কোনো পরিস্থিতিই নয়। যদি নতুন কোনো বোলার উঠে আসে এবং তাকে আপনি টানা চারটি চার মারেন, তবে এটা কোনো ভাঙনের সৃষ্টি করবে না। কিন্তু আপনার উইকেটটি নিতে চাবে। এশিয়া কাপে আপনার উইকেটের জন্য পুরষ্কার ছিলো।
হ্যাঁ, আমি এটা পড়েছিলাম। আর অবশ্যই আমি আউট হতে চাইনি। এই বিষয়গুলো আপনি আপনার মাথায় নিয়ে আসতে পারেন না । কারণ এগুলো আপনার মনকে বিশৃঙ্খল করে দিতে পারে। আপনি যেভাবে ব্যাট করছেন সেই পদ্ধতি আপনি পরিবর্তন করতে পারেন না। এইসব দলের বিপক্ষে ব্যাটিং করার খারাপ দিক হল আপনি জানতে পারবেন না সে কি করছে। কিভাবে সুইং করাচ্ছে বা কোন অ্যাঙ্গেলে বল করবে। কিন্তু যদি এটা নিয়ে ভাবতে যান তাহলে আপনি ব্যাটিংয়ে মনযোগ হারাবেন। ব্যাটিংয়ের উপযুক্ত উপায় হলো সব চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যাটিং করা। এটা সহজ নয়, তবে আদর্শ উপায়।
এটাকেই তো জোনে থাকার কথা বলে, তাই না?
সম্ভবত ১০ বারের মধ্যে ছয় বার আপনি এটা সঠিক ভাবে করতে পারবেন। মাঝে মাঝে আপনি ভাববেন বোলার এটা করবে আর আমাকে এটা করতে হবে। অন্য সময়ে আপনার মাথায় কিছুই থাকবে না। আপনি জোনের ভিতর থাকবেন যখন আপনি অন্য কিছু নিয়ে ভাববেন না। আপনি যদি বল দেখতে খেলতে পারেন তাহলে আপনার সামনে কে থাকে বা না থাকে সেটা কোনো ব্যাপার না। এটা ছাড়া অন্য সামান্য বিষয়ও আপনাকে বিরক্ত করবে।
এটা সর্বশেষ কখন ঘটেছিলো?
সিডনি এবং রাওয়ালপিন্ডিতে।
সিডনিতে আপনি পূর্ব পরিকল্পনার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে নামেন নি?
হ্যাঁ, এটা ভিন্ন ধরনের কমফোর্ট জোন। আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলাম আমি কি করতে চাই। সেই ভাবেই আমি আমাকে প্রস্তুত করেছিলাম। আমি চারপাশের একটা শেল তৈরি করেছিলাম আর বলেছিলাম আমি এই শেলের বাইরে যাবো না। আমি কখনোই চতুর্থ গিয়ারে ব্যাটিং করি না, আমি সবসময় তৃতীয় গিয়ারেই ব্যাটিং করি, সেটা হোক ১৭০ বা ১৭।
শেবাগের ব্যাটিং দেখে কি নিজেকে মনে করিয়ে দেয় কিছু?
হ্যাঁ এটা হয়। আমি ওই রকম ভাবার চেষ্টা করি। এমনকি আমি এর থেকে খারাপ হতে পারতাম। কিন্তু সময়ের সাথে সাতাহে আপনাকে পাল্টাতে হবে।
শরীরের গতি কমে যাওয়ার জন্য এর সাথে কোনো সম্পর্ক আছে?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর শারীরিকভাবে পরিবর্তিত হতে থাকবে এবং আপনার চিন্তা ভাবনাও পরিবর্তিত হতে থাকবে। আপনাকে এর সাথেই লড়াই করতে হবে। আপনার শরীরের গতি কমে আসবে। প্রশ্ন হলো এটা কতক্ষণ ঘটবে এবং আপনি কতদ্রুত এর সাথে মানিয়ে নিতে পারেন।
আপনি কি পরিবর্তন বুঝতে শুরু করেছেন?
আমি আমার শরীরকে সবসময় চাপ দেই। অন্তত এই মুহুর্ত্বে আমার শরীর সবকিছু ঠিক মনে করছে।
আপনার প্রথম কোচ রামাকান্ত আচরেকার সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন আপনার এখন হালকা ব্যাট ব্যবহারে বিষয় বিবেচনা করা উচিত।
আমি মনে করি না আমি হালকা ব্যাট দিয়ে খেলতে পারবো। আমি এর আগেও চেষ্টা করেছিলাম এবং এটা আমার ব্যাট সুইংয়ে সহায়তা করে না। কিন্তু এটা বলতেই হবে, আমি এখন একটু কম ওজনের ব্যাট ব্যবহার করি। এখন আমার ব্যাটে ওজন ২.১১ পাউন্ড, আর আগে ছিলো ৩.২ পাউন্ড। সর্বশেষ দুই বছর ধরে আমি এটা ব্যবহার করছি। এর থেকে হালকা ব্যাট আমার পক্ষে ব্যবহার করা কঠিন হবে।, যদি কখনো এটা ঘটে তবে আস্তে আস্তে ঘটবে।
লোকজনের যাচাই বাছাই করা কেমন লাগে? আপনি যা করেন বা বলেন সবই বিশ্লেষণ করা হয়। আপনার মধ্যে কি অপরাধ বোধ কাজ করে?
আপনাকে এতে অভ্যস্ত হতে হবে। আমি নিজেকে অনেক সংযত করে রাখি। সহজেই কিছু বলি না। নিজেই নিজেকে পাহারা দেই। যাই হোক এটাই আমার স্বভাব। আমি এখনো মানি আমি লাইমলাইটের মধ্যে স্বাভাবিক না। আপনি জানেন, আমি এখনো টিভি ক্যামেরা সামনে অনেক ইতস্তত বোধ করি। আমি অভ্যস্ত হয়েছি কিন্তু শতভাগ সহজ হয়ে উঠতে পারিনি। আমি এখনো নিজের রুমে একা হাটতে পছন্দ করি এবং বসতে এবং আরাম করতে পছন্দ করি।
ভারতের অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও আপনার সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। অনেকেই বলেন আপনি কোনো ইস্যু পক্ষে অবস্থান নেন না।
আমি এর আগে বেশ কয়েকবার কয়েকটি ইস্যুতে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমি যা বলি তা ভুল ব্যাখ্যা করা হয় এবং ভুল ভাবে উপস্থাপণ করা হয়। আমি এখনো এগুলো ভিতরে ঢুকতে চাইনা। যখন এগুলো ঘটে তখন কেন আপনি যাবেন?
কিন্তু আপনার গলা অনেক শক্তিশালী, লোকে আপনার কথা শুনবে। এর মাধ্যমে আপনি পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেন।
আপনি যদি জানেন আপনি কিছু বললে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হবে কেন তাহলে আপনি এখানে যাবেন? আর আমি মনে করে, এই ইস্যুগুলো ঠিক করার জন্য লোক আছে, আপাতত আমি আমার ক্রিকেট খেলায় মনোনিবেশ করি।
সাম্প্রতিক সময়ে ডাবল সেঞ্চুরি মিস করার কারণে আপনি হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং এটা নিয়ে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পাকিস্তানের আমি প্রেস কনফারেন্সের প্রবেশ করারা মুহুর্তেই আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো আপনি কি অবাক এবং হতাশ? আমি বলেছি,হ্যা আমি হতাশ। আমি যদি না বলতাম তাহলে মিথ্যা বলা হত। আমি প্রচুর হতাশাগ্রস্থ হয়েছিলাম। আমি ১৯৪ রানে অপরাজিত ছিলাম এবং এটা টেস্টের দ্বিতীয় দিন ছিলো। তাঁর মানে এই নয় যে, আমি আমার হতাশা খেলার মধ্য নিয়ে যাবো। যা ঘটেছে ঘটেছে তা আমি পিছনে ফেলে রেখেছি। এই বিতর্ক চলাকালীন সময়ে রাহুলের সাথে আমি সব ভূল বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলেছিলাম। পুরো ঘটনাটাই সংবাদ মাধ্যমের সাজানো এবং এখানে খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুই হয়নি।
আপনি এখন কেবল মাত্র ৩১। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজার রান করেছেন এবং সাথে ৬৫ টা সেঞ্চুরি করেছেন। সামনে প্রতিনিয়ত অনেক ম্যাচ আছে সাথে অনেকগুলো ওয়ানডে টুর্নামেন্টেও আছে। আপনি কিভাবে মনকে সতেজ রাখেন? আর আপনার মনের মধ্যে কি কোনো জেদ কাজ করে?
আমি সবসময় যেমন করেছিলাম তেমনই করতে চাচ্ছি। আমি কত বছর ফেলে রেখে এসেছি তা আমি নিয়ে ভাবতে চাই না, তবে আমি বাইরে গিয়ে উপভোগ করবো। আপনি আর কত রান করছেন তা আপনি কখনোই বলতে পারবেন না।
এটা কি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা গড় রাখার মত কোনো লক্ষ্য?
আমি জানি না, ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেরা গড় কি। আমি ভাবি না আমার গড় ৬৪ হলে লোকজন আমাকে কিংবদন্তি ক্রিকেটার বলবে । অথবা আমার গড় ৫৭ হলে লোকে আমাকে খারাপ ক্রিকেটার বলবে। আপনার এই বিষয়ে মনযোগ দেওয়া যাবে না। যেসব বছর বাকি আছে সেই সময়ে আমি আরো কঠিন ভাবে খেলতে চাই। কারণ যে সময় চলে গেছে তা আর কখনো ফিরে আসবে না। অন্য কিছু করার জন্য প্রচুর সময় আছে। আমি যদি চাই আমি একটা বিশ্বকাপ জিতবো তাহলে এখন থেকেই পরিশ্রম করতে হবে কারণ এটাই সঠিক সময়।
আপনি কি অধিনায়কত্বের আরেকটি পর্ব চান?
আমি এটা ছেড়ে দিয়েছি। এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।
জাভাগাল শ্রীনাথ সাম্প্রতিক সময়ে আপনার অধিনায়কত্ব নিয়ে লিখেছেন। সে বলেছেন আপনি লেগ স্পিন করতে পারেন , বল সুইং করাতে পারেন এবং টেন্ডুলকারের মত ব্যাট করতে পারেন। আপনি কি সবার কাছ থেকেই একই রকম মান আশা করেছিলেন?
আমার প্রত্যাশা ছিলো সবার কাছ থেকে শতভাগ চেষ্টা। আমি বলেছিলাম যদি তুমি ব্যর্থ হও আমি কিছু বলবো না। যদি আপনি শতভাগ দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আমি দেখবো আপনি সেটা বুঝতে পারেন কিনা। যদি শতভাগ দেবার পর এক টানা পাঁচবার ব্যর্থ হন তাহলে ঠিক আছে। যদি আপনি শতভাগ না দেন বা চেষ্টা না করেন তাহলে আপনি যে লোকের কাছে আসছেন তা ভুল। আমি এর থেকে বেশি কিছু আশা করতে পারি না। আমি কাউকে ম্যালকম মার্শাল কিংবা ভিভ রিচার্ডের মত বোলিং করতে বলিনি। প্রত্যেককে তাঁর প্রতিভা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে পারফর্ম করতে বলেছিলাম। সবার কাছ থেকে শতভাগ চাওয়া কি বেশি চাওয়া?
আপনাকে যদি এই কাজটা আবার দেওয়া হয়, কোনো কাজ কি ভিন্ন ভাবে করতে চান?
যেদিন থেকে আমি অধিনায়ক হিসেবে পদত্যাগ করেছি, সেদিন থেকে এই ভাবনা বাদ দিয়েছি। আমি অনুভব করেছিলাম আমরা সঠিক পথে নেই এবং ব্যক্তি হিসেবে এটা আমাকে আক্রান্ত করছে। আমি কোনো ভাবেই পরিবর্তন হতে পারছিলাম না। এমন কি একটি ম্যাচের দশ দিন পরেও আমি ভাবছিলাম এটা কেন ঘটলো এবং এটা কেন ঘটলো না। আর এটাই আমাকে ব্যক্তি হিসেবে আক্রান্ত করেছে। লোকজন আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে এটাকে খুঁজে বের করতে পারবে না। কারণ গত বছর আমি দুই সংস্করণেই এক হাজার রান পূর্ন করেছিলাম। এছাড়াও আমি বিশ্বাস করে সঠিক পথে যাওয়ার জন্য ভাগ্যের সহযোগিতাও লাগে।
দলের মধ্য থেকেও?
না, দল থেকে নয়। বাইরে থেকে। আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি সঠিক ভাবে আমাদের শক্তি খরচ করি তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
আপনি কি নির্বাচকদের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন?
হ্যাঁ, আমি নির্বাচকদের উপর সন্তুষ্ট ছিলাম না। এটা কাজ করছিলো না। তাঁদের এবং আমার চিন্তার পার্থক্য ছিলো। এখানে একমাত্র বিষয় হলো আমি সেখানে গিয়েছিলাম এবং তাঁদের ভাবনা নিয়ে খেলেছিলাম।
তাঁদের মধ্যে একটি ধারণা ছিলো ভিভিএস লক্ষণকে ওপেনে খেলানো?
সঠিক। তাঁদের সাথে মিটিংয়ের মাঝখানে এটা ঘটেছিলো। ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং হটাৎ করে ওপেনার হয়ে গেলেন।
কিন্তু কেন আপনি এর বিরুদ্ধে কথা বলেন নি? কেন দাড়িয়ে বললেন না আমি এর কিছুই নিবো না?
আমি এটা সবসময় বিশ্বাস করি। সবাই পরিবর্তন হয়ে যাবে কিন্তু তাঁরা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য কাজ করে যাবে। ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সন্মানের বিষয় কিন্তু এটা আমার জন্য সর্বশেষ বিষয় ছিলো না। আমার জন্য সর্বশেষ বিষয় ছিলো ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলে যাওয়া। যখন আমাকে অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তখন আমি আমার বক্তব্যে বলেছি আমাকে অধিনায়ক হিসেবে সরিয়ে দিতে পারেন কিন্তু ক্রিকেট থেকে বিরত রাখতে পারবেন না। ক্রিকেট খেলায় আমার জীবনের সর্বশেষ লক্ষ্য। আমি ভারতের হয়ে খেলতে চাই।
আপনাকে যখন অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তখন আপনি বেশ আঘাত পেয়েছিলেন।
অবশ্যই। আমি বিশ্বাস করি আপনি যখন কাউকে অধিনায়ক বানাবেন তাঁকে যেমন প্রয়োজন সেই রকম সমর্থন দেওয়া উচিত। এরপর থেকে পরিস্থিতি বদলেছে।
তাহলে কি আপনি ভুল সময়ে ভুল পরিবেশে দলকে সমর্থন দিয়েছেন?
ভালো, এখন আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম,যা ঘটেছে সেটা কোনো ব্যাপার না। আপনি জানেন আমি ২০ বছর পিছিয়ে নেই। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারিনি। যাদের বিভিন্ন ধারণা ছিলো তাঁরা অবশ্যই ভাববে তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেনি। আমি এতটুকু নিশ্চিত যে, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য আমি যা ভেবেছি তাই করেছি।
সৌরভ গাঙ্গুলির হাতে দলটি সঠিক পথে চলেছে?
আমি দঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটা অধিনায়কত্বের বিষয় নয়। দল কিভাবে খেলবে কিভাবে পারফর্ম করবে সেটা বিষয়। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় ৭০০ রান করতে চান আপনাকে শীর্ষে উঠতে হবে। আপনি যদি একাই ২২০ রান করেন তবে সেটা ভিন্ন কথা।
তবে এখানে দুইটি দলের মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে
স্বাভাবিক এই দলে প্রচুর ম্যাচ জেতানোর মত ক্রিকেটার আছেন। এখানে পর্যাপ্ত ক্রিকেটার আছেন যারা একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারে।
রাহুল দ্রাবিড় এমন একজন ক্রিকেটার যিনি সত্যিই টেস্ট ক্রিকেটে ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার হিসেবে এসেছেন। আপনি তাঁর মধ্যে বড় কি ধরনের পরিবর্তন দেখেছেন?
আমার মনে হয় সে অনেক বেশি ইতিবাচক হয়ে উঠছে। আমার মনে আছে আমি তাঁর সাথে কি কথা বলেছিলাম এবং তাঁকে কি বলেছিলাম। আপনার মনোযোগের সময় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থির থাকে। তখন আপনি ১০০ এর বেশি রান করেন কিংবা ৬০ কিংবা ৭০ রান করেন। যখন আপনি জানবেন আপনি সেট হয়ে গেছেন তখন থেকেই আপনাকে গিয়ার শিফট করে খেলতে হবে। আবার যখন কেউ ভালো বল করবে তখন আপনাকে নিচে নেমে আসতে হবে। আমি মনে করি সে এই কাজটা বেশ ভালোভাবে করে এবং সে অনেক বেশি শট খেলতে পারে।
আমি আরো মনে করি এটা তাঁকে উইকেৎ পিছনেও সহায়তা করেছে। আপনি যখন সারাক্ষণ বলটি দেখেন এবং কোথায় কোন ঘটনা ঘটছে তা দেখেন এটা আপনাকে সাহায্য করে।
আপনি স্লিপে ফিল্ডিং করে অভ্যস্ত ছিলেন তবে এখন আর কেন নয়?
আমার আঙুলে অনেক চোট ছিলো এবং এখনো আছে। এখনো চোটের সাথে লড়াই করতে হয়। আমার হাত ছোট এবং আমার আঙুল শক্তিশালী নয়, তাই আমি স্লিপ থেকে সরে এসেছি।
সবাই সামনের সিরিজ নিয়ে কথা বলতেছে। অস্ট্রেলিয়া কি আপনার সেরা টা বের করে নিয়ে আসতে পারে? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আপনার সাতটি শতক আছে।
এটা কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা। আমি সব দলের বিপক্ষেই সেরাটা দিয়ে খেলতে চেষ্টা করি। আমি সেখানে থাকাটা উপভোগ করি। সেখানে ক্রিকেট খেলা, বেশ দুর্দান্ত ব্যাপার।
আপনার প্রথম সিরিজটি বিশেষ কিছু। এই সিরিজে বিশ্ব আপনাকে দেখে। আপনি কি অস্ট্রেলিয়ায় খেলাতে বিশেষ কিছু পেয়েছেন?
আমি খুব ছোটো বয়সে এটা বুঝতে পেরেছি। আমি অনুভব করেছিলাম আমাকে যেতে হবে এবং আমি যা পারি তা করতে হবে। এছাড়াও আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। আমার মনে আছে আমি বাউন্ডারি মারার জন্য উৎসাহী ছিলাম। এই সিরিজ আমার ক্যারিয়ারে বিশাল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পার্থের উইকেট ছিল সবচেয়ে বেশি কঠিন এবং এখানে করা সেঞ্চুরি আমাকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এটা বড় সফর হবে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তান।
এটা আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ টি ছিল দুর্দান্ত। ওয়ানডে এবং টেস্ট দুই সিরিজেই আমি বেশ দূর্দান্ত খেলেছিলাম। আর সিরিজ দুইটাই শেষ মুহুর্ত্বে নির্ধারিত হয়েছে।
আপনি কি ভাবেন ভারত যদি অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারে তাহলে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দল দাবি করতে পারে?
এটা দূর্দান্ত একটি পদক্ষেপ হতে পারে। আমি মনে করি বিদেশে আমাদের আমাদের আরো কিছু সিরিজ জিততে হবে। তাহলেই আমরা বিশ্বের শীর্ষ দল হিসেবে গণ্য হবো।