সাদা পোশাকে বড্ড পিছিয়ে বাংলাদেশ

ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মানদণ্ড কিংবা দীর্ঘতম সংস্করণ যে নামেই ডাকা হোক না কেন, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ক্রিকেট খেলার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখেছে টেস্ট ফরম্যাট। যদিও সেই দীর্ঘতম ফরম্যাটে আজও বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। সাদা পোশাকের এই ফরম্যাটে দুই যুগেও দুই পা এগোতে পারেনি মুমিনুল হক-সাকিব আল হাসানরা। প্রশ্ন রয়ে যায়, কেন?

সীমিত ওভারের ফরম্যাটগুলোতে তুলনামূলক সাফল্যের দেখা পেলেও; টেস্ট ফরম্যাটে হ্যালির ধূমকেতুর মত হঠাৎ দুই-একটি জয় আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তাইতো আইসিসি টেস্ট র‍্যাংকিংয়ে তলানিতে অবস্থা্ন বাংলাদেশের। মূলত টেস্ট ক্রিকেটে অনিয়মিত থাকাই এই ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ।

২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা পাওয়া বাংলাদেশ এযাবত কালে মোট ১৪২ টি টেস্ট খেলেছে। যেখানে জয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ১৯ টিতে, আর ড্র রয়েছে ১৮ টিতে। অর্থাৎ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরাজয়ের সংখ্যা শতকের ঘর ছুঁয়েছে। সাফল্য বলতে, ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ড্র; আর অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে রয়েছে জয়। দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থা বেশ নাজুক।

তাছাড়া বলার মত, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) রয়েছে হাতেগোনা আয়োজন যা টেস্ট ক্রিকেটের ভিত্তি গড়তে ক্রিকেটারদের সাহায্য করে। তারমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) অন্যতম। যদিও টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা পাওয়ার এক যুগ পর ২০১২ সালে বিসিএলের যাত্রা শুরু হয়। অবশ্য ভারতের দুলিপ ট্রফির সাথে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে বিসিএলের। তবে দেশের সবচেয়ে পুরনো ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগ বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

দীর্ঘতম এই ফরম্যাটের খেলার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিকতাও সেভাবে গড়ে ওঠে না। টেস্ট খেলতে হলে যে দিতে হয়  ধৈর্য্যের বিশেষ পরীক্ষা। তাছাড়া প্রতি সেশনেই রয়েছে উইকেট কিংবা আবহাওয়ার ভিন্ন আচরণের প্রবণতা। সব মিলিয়ে প্রয়োজন হয় সঠিক প্রস্তুতির। আর সেই প্রস্তুতির মঞ্চই হচ্ছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে।

রঞ্জি ট্রফি, ইরানি ট্রফির মত প্রথম বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোর বিশেষ কদর রয়েছে ভারতের ক্রিকেটে। নিয়মিত গুরুত্বের সাথে আয়োজনের ফলে ক্রিকেটারদের দীর্ঘতম ফরম্যাটের খেলার মানসিকতা গড়ে ওঠে। তাছাড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতেও ঘরোয়া ক্রিকেটকে আদর্শ ক্রিকেটার হওয়ার দ্বার মনে করা হয়। যার ফলের তাঁদের ক্যালেন্ডারে টেস্ট ম্যাচের সংখ্যাটা বেশি থাকে।

অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। বিসিবির মনোযোগটা যেন সীমিত ওভারেই বেশি। ফলশ্রুতিতে ওয়ানডেতে তাঁরা পেয়েছে সাফল্যের দেখা। যদিও সেই তুলনায় টি-টোয়েন্টি ধাচের ক্রিকেট এখনো খেলতে পারছে না বাংলাদেশ।

ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটে সাফল্য পেতে হলে বাংলাদেশকে জোর দিতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে, সেই সাথে খেলতে হবে নিয়মিত। তবেই না দেশের ক্রিকেটে আবির্ভূত হবে ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার কিংবা জেমস অ্যান্ডারসনের মত কিংবদন্তী ক্রিকেটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link