মানুষ বদলায়, সময় বদলায়; কেবল পড়ে থাকে সম্পর্কের পালকগুলো।
পাঁচ বছর আগে যাকে ছাড়া জীবন ভাবতে পারতেন না, যাকে ছাড়া সময় কাটতো না – সেই মানুষটাই হয়তো আজ আপনার কাছে অসহ্য।
মানুষের জীবনে বিচ্ছেদ আছে। এক সময়ে কালজয়ী দম্পতি, ডাকসাইটে প্রেমকাহিনীগুলোরও শেষ হয় বিচ্ছেদ দিয়ে। এই যেমন ইকার ক্যাসিয়াস আর সারা কারবোনেরো। একজন কিংবদন্তি ফুটবলার রিয়াল-স্পেনের সর্বকালের সেরা ফুটবল তারকা, আরেকজন ক্রীড়া সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
ছবির মত সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল তাঁদের। একটা সময় চুটিয়ে প্রেম করেছেন। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতেন অধিনায়ক ক্যাসিয়াস। মাঠেই নিজের পেশাদার ভূমিকাতে ছিলেন কারবোনেরো। ট্রফি হাতে উল্লাসে ভেসে গিয়ে কারবোনেরোকে সাক্ষাৎকার দেন ক্যাসিয়াস।
আবেগটা তখন এতটাই চূড়ায় ছিল যে চুমু খেয়ে বসেন দু’জন দু’জনাকে। বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয় সেই দৃশ্য। বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে সেই দৃশ্যটাও কম ভূবন কাঁপানো নয়।
তবে, সেই আবেগটা আজ শেষ হয়ে গেছে। সেই সম্পর্ক, সেই রোমাঞ্চ, সেই স্পর্শের আনন্দ – সবই আজ যেন মিথ্যা।আলাদা হয়ে গেছে সেই জুটি। লম্বা সময়ের প্রেম, দীর্ঘদিনের বৈবাহিক জীবন – সব কিছুর ইতি টেনেছেন তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে।
বাকি দুনিয়ার কাছে তাঁদের সম্পর্কটা এতটাই নির্ভেজাল ছিল যে, এমন একটা বোমা যে ফাঁটতে পারে – তার যেন কোনো অনুমানই ছিল না বাকি দুনিয়ার। কাঁপলো না গলা এতটুকু? বুক ফেঁটে বের হল না দীর্ঘশ্বাস!
তবে, এটা ঠিক সময়টা অনেকদিন বেশি ভালো যাচ্ছে না ইকার ক্যাসিয়াসের জন্য। গত বছরের শেষের দিকে কেবল মাত্র পাঁচ বছরের পোর্তো জীবন কাটিয়ে মাদ্রিদে ফিরেছিলেন ইকার ক্যাসিয়াস।
পোর্তোতে থাকাকালীন সময়ে দলের সাথে অনুশীলন করার সময় হার্ট অ্যাটাক করে বসেন। হাসপাতালের বিছানায় কাটাতে হয় কয়েক দিন। এরপর আর মাঠে ফিরতে পারেননি তিনি। বিদায় জানান পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারকে। স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনে যুক্ত হতে চাচ্ছিলেন।
স্ত্রী সারা কারবোনেরোও হারিয়েছিলেন নিজের সুদিন। তাঁর শরীরে ধরা পড়ে ক্যান্সার। তাঁকে নিয়েও বেশ দু:শ্চিন্তায় দিন কাটে ইকার ক্যাসিয়াসের।
এতো কিছুর মধ্যে সম্পর্কে অটুট ছিলেন তাঁরা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি খারাপ সময়কে অতিবাহিত করে এসেও সুখের পালে হাওয়া লাগা শুরু হতেই বিচ্ছেদ ঘটলো তাঁদের মধ্যে। ইকার ক্যাসিয়াস এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি সারার অসুস্থতার সময় তাঁর পাশে ছিলেন না তখনই কিছুটা ‘বিচ্ছেদ বিচ্ছেদ’ গুঞ্জন উঠেছিলো। কিন্তু পালে হাওয়া দেয়ার মত কিছু না ঘটায় সেই গুঞ্জন আর বড় হয়ে উঠেনি।
স্পেনে ফিরে আসার পর দু’জনই ঘটা করেই তাঁদের দশম অ্যানিভার্সারি পালন করেন। তখনও কেউ এটি নিয়ে কোনো আন্দাজ করতে পারেনি। কে জানতো, বিশ্বকে এভাবে চমকে দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন তাঁরা।
ইকার ক্যাসিয়াস এবং সারা কারবোনেরার সম্পর্কের শুরু ২০১০ সালে এবং তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১৬ সালে। আর প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়েছিলো সেই ২০১০ সালেই। এক সাথে থাকার জন্য বাড়িও খুঁজছিলেন।
২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডকে হারানোর পর চুম্বনের দৃশ্যটাই সর্বপ্রথম দু’জনার সম্পর্কের খবর প্রকাশ্যে আনে। সেই বিশ্বকাপের সময় থেকেই নাকি তাঁদের সম্পর্কের সূত্রপাত। পরিচয় হয় এর এক বছর আগে। তাঁদের সম্পর্কের কোনো ফাঁটলের খবর গণমাধ্যমে আসেনি এক বিন্দুও, কে জানতো একদিন এভাবে আসবে!
ইকার এবং সারা সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু কম বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। সম্পর্ক প্রকাশ্যে আশার আগে সারা বেশ সমালোচনা করতেন ইকারের। এরপরই শুরু হয় তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের পরেই স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জিতে সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দেন ইকার ক্যাসিয়াস। আর চুমুতে সারার কুলুপ তো আগেই এঁটে রেখেছিলেন।
ইকার ক্যাসিয়াস এবং সারা কারবোনেরোর মধ্যে সম্পর্ক ছিলো বেশ গাঢ়। আর এই কারনেই হোসে মরিনহোর সময়ে অনেকবারই সাইড বেঞ্চে কাটাতে হয়েছে ইকারকে। কিন্তু কেন? ধারণা করা হয়, সম্পর্কের খাতিরে রিয়াল মাদ্রিদের সব খবরই জানতেন ক্রীড়া সাংবাদিক এবং ইকারের সাবেক স্ত্রী সারা কারবোনেরো।
রিয়াল মাদ্রিদের খারাপ সময় কাটানোর সময়েও তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়েন আসেনি। এমনকি ইকারের হার্ট অ্যাটাকের সময় পাশে ছিলেন সারা। সারার ক্যান্সার লড়াইয়ের সময় পাশেই ছিলেন ইকার, মানসিক ভাবে তো অবশ্যই। কিন্তু এখন এমন কি হলো যে, তাঁদের মধ্যে সব চুকেবুকে গেল!
সবার আগ্রহ এখন সেদিকেই। তবে, বাস্তবতা হল- জেনেই বা কি লাভ। কারণ, যা গেছে তা তো চিরতরেই তো গেছে। কিছুই তো আর নেই বাকি!