পরীক্ষার মধ্যে কিছু পরীক্ষা

বলা হয় যে, টেস্ট ক্রিকেট ব্যাপারটা সবচেয়ে সিরিয়াস বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে দেখলে বোঝা যায় যে, এটা আসলে গুরুতর ব্যাপার না।

টেস্ট ক্রিকেটকে বাংলাদেশ অন্তত ‘ফানি গেম’ বানিয়ে ফেলেছে।

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে আমরা দেখি যে, তারা টেস্টের আগের দিন একাদশই ঘোষনা করে ফেলে। সেখানে বাংলাদেশ খেলার আগের দিন এসে স্কোয়াড দিতে পারলো!

মানে, খেলা শুরুর ২৪ ঘন্টা আগেও খেলোয়াড়রা জানেন না যে, আগামীকাল কার কার খেলার সম্ভাবনা আছে। খেলা শুরুর ২৪ ঘন্টা আগেও এই ন্যুনতম প্রস্তুতিটা নেই।

সে বাংলাদেশ ব্যাপারটা নিয়ে যতই হাশি তামাশা করুক, খেলাটা টেস্ট ক্রিকেট। আগামীকাল সকাল থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটা অ্যাওয়ে সিরিজ খেলতে হবে বাংলাদেশকে। এই সিরিজ খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ দলের সামনে অনেক বাঁধা। কিছু জিততে হলে বাংলাদেশকে এই বাঁধাগুলো টপকাতে হবে।

একটু চোখ বুলিয়ে নেই, বাংলাদেশের এখন সংকটগুলো কী কী।

  • সাকিব নেই

এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট।

গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য ও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ সাকিব আল হাসান। এই সময়ে বাংলাদেশ যেসব জয় পেয়েছে, তাতে বড় ভূমিকা ছিলো এই অলরাউন্ডারের। গত এক দশক সময় তো সাকিববে ছাড়া একাদশ করার কথাই কল্পনা করা কঠিন।

সাকিব থাকায় সবচেয়ে বড় সুবিধা যেটা হয় যে, ৫ বোলার দলে রেখেও বাংলাদেশ বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলাতে পারে। সাকিব একাধারে দলের মূল বোলারদের একজন এবং প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের একজন। এরকম একজন না থাকলে প্রধাণ সমস্যা হয় একাদশ তৈরী। একাদশ যেনো তেনো উপায়ে সাজানো গেলেও প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে দাঁত বসানোর মত বোলার থাকে না বেশি।

ফলে সাকিব না থাকাটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি টেস্টেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বাংলাদেশকে।

  • ২০ উইকেট নেওয়া

টেস্ট জিততে হলে বিরল কিছু ক্ষেত্রে ছাড়া আপনাকে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে নিতে হবে। আর এটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটা সমস্যা। সর্বশেষ টেস্টে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০ উইকেট ফেলতে পেরেছিলো। কিন্তু সেটাও জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিলো না।

এর আগে একটা বাংলাদেশ কিছুদিন ইনিংসে হেরেছে।

বাংলাদেশের টেস্টে এখন প্রধাণ সমস্যা হলো, মূল থ্রেট তৈরী করতে পারা বোলার নেই। সাকিব নেই; তাইজুল অত্যন্ত একঘেয়ে ও বৈচিত্রহীন অবস্থায় আছেন। আর মিরাজ টেস্টে উইকেট নিতে পারছেন না সেভাবে। ফাস্ট বোলাররা অনভ্যাসের কারণেই প্রতিপক্ষের জন্য মূল হুমকি হয়ে উঠতে পারছেন না।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো করার জন্য এক দু জন মূল বোলার দরকার ছিলো। সেটা কেউ হয়ে উঠতে না পারলে খুবই বিপদে পড়বে বাংলাদেশ।

  • ভঙুর টপ অর্ডার

টেস্টে দলের সুর ঠিক করে দেয় টপ অর্ডারের ব্যাটিং। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সুরটা বেদনারই হচ্ছে।

সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন ৮ নম্বরে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ৭ নম্বরে নামা লিটন কিছু রান পেয়েছিলেন। বুঝতেই পারছেন টপ ও মিডল অর্ডার থেকে কেমন রান পেয়েছে বাংলাদেশ।

তামিম ইকবাল, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমের জন্য এটা তাই বড় চ্যালেঞ্জ। তারা দলকে ভালো পুজি এনে দিতে না পারলে লড়াই বলে কিছু করাই কঠিন হবে।

  • বিদেশের ভীতি

বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে কিছু সাফল্য পেলেও বিদেশে টেস্টে ও সব ফরম্যাটেই অবস্থা আরও খারাপ। গত ৫ বছরের মধ্যে এই শ্রীলঙ্কায় ২০১৭ সালে একটা টেস্ট জিতেছিলো বাংলাদেশ। এরপর থেকে হার এবং হার। তাও বড় ব্যবধানে।

সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডে টানা ৬ ম্যাচ হেরে এসেছে তারা। যদিও ফরম্যাট ভিন্ন। তারপরও বিদেশে খারাপ করার যে প্রবণতা এটা বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কায়ও মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে।

  • ফিল্ডিং

বিশেষ করে ক্যাচিংটা বাংলাদেশকে খুব ভোগাচ্ছে।

নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে ক্রিকেটাররা কন্ডিশনের দোষ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আকাশ ও বাতাসের কারণে ক্যাচ ঠিকমত ধরা যায় না। কিন্তু বাস্তবতা আলাদা। কারণ, এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতেও আমরা গণ্ডা গণ্ডা ক্যাচ মিস হতে দেখেছি।

টেস্টে চান্স মিস করলে সেটা ফিরে আসা খুব কঠিন ব্যাপার। ফলে এই জায়গাটায় উন্নতি না করলে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো কিছু আশা করা মুশকিল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link