নৈরাজ্যের শেষ নাই, ক্রিকেটে নৈরাজ্য খোঁজা বৃথা তাই

মনে হতে পারে এ আর এমন কি, বড়জোর ফুটবলের মত ক্রিকেটও ক্লাব কেন্দ্রিক হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এরকম নয়। ফুটবলে একই সময়ে একজন ফুটবলার কেবল একটা ক্লাবেই খেলেন! অথচ চলতি বছর এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোহাম্মদ আমির তিনটা দলের হয়ে খেলেছিলেন, অ্যালেক্স হেলস ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত সাতটা দলের হয়ে খেলেছেন - আধুনিক ক্রিকেট আসলে এভাবে চলছে!

ওয়ানডে খেলতে ইংল্যান্ড যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাড়ি জমিয়েছে, তারিখের হিসেবে তখনো পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁদের তৃতীয় টেস্ট চলমান। আবার ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই ইংলিশরা টেস্ট স্কোয়াড নিয়ে হাজির হবে নিউজিল্যান্ডে। সোজা বাংলায় তাই বলা যায়, তাঁরা আসলে একই সময়ে দুইটা ভিন্ন দল খেলাতে বাধ্য হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি আসলে বর্তমান ক্রিকেটের একটা সারমর্ম। ক্রিকেটের সূচি এখন ঢাকার সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ যানজটের চেয়ে বেশি জট পাকিয়ে আছে। আর এটার মূল কারণ আগাছার মত গজিয়ে উঠা এক গাদা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট।

মনে হতে পারে এ আর এমন কি, বড়জোর ফুটবলের মত ক্রিকেটও ক্লাব কেন্দ্রিক হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এরকম নয়। ফুটবলে একই সময়ে একজন ফুটবলার কেবল একটা ক্লাবেই খেলেন! অথচ চলতি বছর এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোহাম্মদ আমির তিনটা দলের হয়ে খেলেছিলেন, অ্যালেক্স হেলস ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত সাতটা দলের হয়ে খেলেছেন – আধুনিক ক্রিকেট আসলে এভাবে চলছে!

কিন্তু এমন অধঃপতন কেন? উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে ২০২৩ সালে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) দিয়ে সুচনা হয়েছিল ফ্রাঞ্চাইজি যুগের, আর সেটা ২০২৩ সালে পেয়েছে বৈপ্লবিক মাত্রা। দক্ষিণ আফ্রিকা, আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রে একযোগে টি-টোয়েন্টি লিগ চালু হয়। আবার চলতি বছর শুরু হতে যাচ্ছে গ্লোবাল সুপার লিগ – সবমিলিয়ে দশ ও বিশ ওভারের অন্তত ২৩ টা টুর্নামেন্ট বছরব্যাপী সক্রিয় এখন।

ব্যস্ত সূচিতে ক্রিকেটারদের যেখানে বিরক্ত হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো তাঁরা আরো বেশি খেলতে চান। এক টুর্নামেন্ট থেকে নিজের দল বাদ পড়লেই উড়ে যান আরেক দেশে, আরেক টুর্নামেন্টে। কোন নিয়ম নেই, কোন বাঁধা নেই। কাছাকাছি সময়ে একাধিক লিগ চলমান থাকায় ইচ্ছেমত চুক্তি করছেন তাঁরা।

বেতন কাঠামো এক্ষেত্রে উৎসাহিত করছে ক্রিকেটারদের। আইপিএল বাদে বাকি ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে নকআউট পর্বের জন্য আলাদা বোনাস নেই বললেই চলে, ম্যাচ ফিও মূল পারিশ্রমিকের তুলনায় নগণ্য। অর্থাৎ পুরো টুর্নামেন্ট খেললে একজন যে পরিমাণ পারিশ্রমিক পান, গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লে কম ম্যাচ খেলেই প্রায় সেই অর্থ পেয়ে যান। উপরি হিসেবে পরের সময়টাতে অন্য কোন লিগে খেলে কামিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

তাই তো ব্যাট বলের যোদ্ধারা এখন কোন নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক রাখার চেয়ে নিজেদের ফেরিওয়ালা হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। এমনকি এক দলের সঙ্গে চুক্তি করার পরও তুলনামূলক ভাল প্রস্তাব পেলে অন্য দলের সঙ্গে আবার চুক্তি করে ফেলেন। বিপিএলের মধ্যেই তো অ্যালেক্স হেলস একবার ঢাকা ক্যাপিটালসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে রংপুর রাইডার্সে যোগ দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, নিয়মের বাইরে গিয়ে একের পর এক টুর্নামেন্ট শুরু করাটা দুর্নীতির দরজা খুলে দিয়েছে। প্রত্যাশিত খাতে অর্থ না পাওয়ায় অনেক ফ্রাঞ্চাইজি হাঁটে স্পট ফিক্সিংয়ের দিকে, কেউ কেউ তো নিজের দলকে হারের পক্ষে বাজি ধরে। বিপিএলেই তো গত দুই বছরে অন্তত ৩০ টি অভিযোগ উঠেছে ফিক্সিং ইস্যুতে। কিন্তু কাউকেই নিষিদ্ধ করা হয়নি, আইসিসির সাহায্য না নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নামে মাত্র তদন্ত করার কারণেই এই অবস্থা।

এছাড়া ২০২১ সালে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে পুনে ডেয়ারডেভিলসের মালিককে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অভিযোগ আছে গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডাসহ বেশকিছু লিজেন্ডস লিগ নিয়েও। এসব অনৈতিক কাজ কিভাবে ঠেকানো যায় সেটা নিয়ে তাই বিস্তর ভাবা উচিত আইসিসির।

Share via
Copy link