ফ্যাবিয়ান হার্জলার, ফুটবল কোচিংয়ের নেক্সট বিগ থিঙ?

যখন ব্রাইটন ও হোভ আলবিয়ন ক্লাবটি তাদের ম্যানেজার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা হার্জলারকে নিয়োগের ব্যাপারে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। ক্লাবটি এমন একজন ম্যানেজার চেয়েছিল, যিনি তাদের পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে পারবেন এবং প্রিমিয়ার লিগে প্রতিযোগিতা করার মতো একটি পরিচিতি তৈরি করতে পারবেন।

ফ্যাবিয়ান হার্জলার নামটা ইংলিশ ফুটবলে অনেকেই জানতেন না। তবে, এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করা হার্জলালের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে পদার্পণ এবারই প্রথম। তিনি কোনো বড় তারকা ফুটবলার বা অভিজ্ঞ ম্যানেজার ছিলেন না। তবে, দক্ষ ছিলেন, জার্মানিতে সেন্ট পাউলিকে বুন্দেসলিগায় নিয়ে তবেই তিনি আসেন ইংল্যান্ডে।

এই ট্যাকটিক্যাল মাইন্ড তরুণ প্রতিভা বিকাশে দক্ষ। জার্মানির নিচু লিগের ফুটবলে কাজ করার সময় তিনি এমন একটি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মাত্র ৩১ বছর বয়সী এই কোচের অধীনে দলগুলো দ্রুত, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতো। আবার একইসাথে শক্তিশালী রক্ষণাত্মক ভিত্তি বজায় রাখতো।

যখন ব্রাইটন ও হোভ আলবিয়ন ক্লাবটি তাদের ম্যানেজার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা হার্জলারকে নিয়োগের ব্যাপারে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে পারবে, প্রিমিয়ার লিগে প্রতিযোগিতা করার মত যোগ্য করতে তুলতে পারবে, এমন কাউকে খুঁজছিল ক্লাবটি।

তবে, হার্জলারের নিয়োগ ছিল কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেকেই ভাবছিলেন, এটি এক ধরনের সাহসী পদক্ষেপ। ব্রাইটনের সিদ্ধান্ত ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ হার্জলার প্রিমিয়ার লিগে একটি বড় নাম ছিলেন না, কিন্তু ক্লাবের পরিচালনা পরিষদ তার কৌশলগত দক্ষতা এবং দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দেখে তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, তিনি একইভাবে ব্রাইটনকে শক্তিশালী একটি দল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন, যেটি নিজেদের স্থান তৈরি করতে পারে।

প্রথম থেকেই, হার্জলার দলের উপর গভীর নজর দিলেন। তিনি দ্রুত বুঝতে পারলেন, দলের আক্রমণ ও রক্ষণে কিছু বড় সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো দূর করেই একটি শক্তিশালী দল তৈরি করা সম্ভব। তবে তিনি সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনতে শুরু করলেন, বিশেষত তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি তার আস্থা তৈরি ছিল।

হার্জলার একটি আক্রমণাত্মক আর হাই-প্রেসিং ফুটবল স্টাইল প্রতিষ্ঠা করলেন। ফলে, দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে আক্রমণ এবং রক্ষণে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি বল দখল রাখার উপর জোর দেন। প্রতিপক্ষের উপর অবিরাম চাপ সৃষ্টি করার কৌশল গ্রহণ করেন। এই পরিবর্তনটি শুরুতে কিছুটা কঠিন হলেও, ধীরে ধীরে ব্রাইটন ফুটবল খেলার নতুন ধারায় নিজেকে মানিয়ে নিল।

 

হার্জলালের ট্যাকটিক্স ছিল খুবই উদ্ভাবনী। তিনি একটি ফ্লুইড ফুটবল মতাদর্শে বিশ্বাস করেন কোনো একটি নির্দিষ্ট ফর্মেশনের উপর নির্ভর না থেকে। সে বিশ্বাস করেন যে আধুনিক ফুটবল অনেক স্পিডি। প্রতিপক্ষ সব সময় একই ভাবে প্রেস করবে না। সেতিনি চান তার খেলোয়াড়েরা পারদর্শী হোক কিছু নির্দিষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যথাযথ কাজ করতে। হার্জলার তাঁর দলকে শুধু আক্রমণে উন্নত করেননি, বরং রক্ষণেও শক্তিশালী একটা ব্যবস্থা তৈরি করেন, যেখানে দলটি বল হারালে দ্রুত একত্রিত হয়ে একটি সুরক্ষিত রক্ষণ গঠন করে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি প্রথমবারের মতো আসলেও তার কৌশল এবং পারফরমেন্সে সবাইকে চমক প্রদান করছেন। তিনি এই প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে আর্সেনালের সাথে ড্র করেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে জয় নিশ্চিত করেন, টটেনহ্যামের সাথে জয়লাভ করেন এবং শেষ ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির সাথে তারা জয়লাভ করেন। তাদের এই বড় দলগুলোর সাথে জয় পাওয়ার ফল আমরা প্রিমিয়ার লীগের টেবিলে দেখতে পাই। তারা এই মুহূর্তে টেবিলের চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছেন।

ফ্যাবিয়ান হার্জলার ব্রাইটনে আসার পর থেকে, ফুটবল বিশ্ব তার প্রতিভা এবং কৌশলগত দক্ষতা চিনতে শুরু করেছে। তার অধীনে ব্রাইটন এখন শুধু লিগে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করছে না, বরং তারা শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করতে শুরু করেছে।

 

তার কৌশলগত বিশ্লেষণ, তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি আস্থা, দলকে নতুন রূপে গড়ে তোলার ক্ষমতা ব্রাইটনকে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করে তুলেছে। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা, হার্জলার কি পারবে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে, নাকি তিনিও রবার্তো ডি জারবির মতোই হাটবেন একই পথে?

Share via
Copy link