প্রতিপক্ষের লেজে বারবার আটকে যায় বাংলাদেশ

সেই ছোট্ট বেলায় গণিত বইয়ের কাজ অর্ধেক বাকি রেখে চলে যাওয়া শ্রমিকের কথা মনে আছে? তাদেরই প্রতিচ্ছবিই যেন বাংলার বোলাররা।

লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের প্রিয় শিকার যেন বাংলাদেশ। খ্যাত, অখ্যাত, অভিষিক্ত  কিংবা আনকোরা টেলেন্ডার ব্যাটার, তারাও যেন ‘নাইটমেয়ার’ বাংলাদেশের বোলারদের জন্য।

টেস্ট ক্রিকেটে বড্ড অধারাবাহিক বাংলাদেশ। ২৪ বছর আগে পেয়েছে টেস্ট স্টাটাস, জিতেছে মোটে ২১টা। তবে একটা জায়গায় বেশ ধারাবাহিক বাংলাদেশ, না ইতিবাচক কোন দিক নয়। প্রতিপক্ষের শুরুর উইকেট গুলো তুলে নিয়ে ,শেষের দিকের ব্যাটারদের কাছে ভোগান্তিতে অনন্য অসাধারণ বাংলাদেশ।

এটা দেশের ক্রিকেটের চিরচেনা রূপ, বোলাররা যেন আমির খানের বিখ্যাত ‘গজনি’ সিনেমার সেই চরিত্র। যে কাজ সম্পূর্ণ করতে ভুলে যায়। এই কথার সত্যতা যাচাইয়ে বেশি দূর যেতে হবে না।  ২০২৪ সালের পারফরম্যান্সে চোখ রাখলেই যথেষ্ট। চলতি বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে নয়টি। চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেখানকার অবস্থা।

শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম টেস্টের শুরুতেই ৫৭ রানে পাঁচ উইকেট তুলে নেয় বোলাররা। এরপর যেন বাকি উইকেট তুলতে ভুলেই গেল তারা। ছয় নম্বর উইকেটটি যখন পড়ল তখন স্কোরবোর্ডে রান ২৫৯। মানে এই জুটিতে দুইশোর বেশি রান সংগ্রহ হয়ে গেছে।

সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন কামিন্দু মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। একই সিরিজেই ১২৬ রানে ছয় উইকেট থেকে আবারো একই ব্যাটারদের হাতে নাস্তানাবুদ বাংলার বোলাররা। ২৯৯ গিয়ে যখন সপ্তম উইকেটটা পড়ে তখন আবারও বড় সংগ্রহের পথে শ্রীলঙ্কা।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিই পাকিস্তান সিরিজে। শুরুতে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান  চার উইকেটে ১১৪ রান থেকে পাঁচ উইকেটে ৩৫৪ রানে চলে যায়। আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার পথে সৌদ শাকিলের নামের পাশে তখন ১৪১ রান।

এখানেই শেষ নয়, ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দাপট দেখায় বোলাররা। ১৪৪ রানে ছয় উইকেট তুলে নিল শুরুতেই। এরপর খেই হারালো বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেট পড়ল যখন স্কোরকার্ডে ৩৪৩ রানে। রবীন্দ্র জাদেজা যখন সাজঘরে ফেরেন তখন তার নামের পাশে ৮৬। রবীচন্দ্রন অশ্বিন করেছিলেন সেঞ্চুরি।

একই ধারা বজায় আছে,  চলমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টেও। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই দুইটি উইকেট তুলে নিয়ে ইন্ডিজকে অল্পেই আঁটকে ফেলতে পারত বাংলাদেশ। তবে সেই পুরানো দশা, সাত উইকেটে ২৬১ রান থেকে আট নম্বর উইকেটটা পেতে পেতে রান তখন ক্যারিবিয়ানদের ৪০২। । অখ্যাত জাস্টিন গ্রিভস সেঞ্চুরি, এলিক এথানেজের ৯০।

এ যেন এক গোলকধাঁধা বা চোরাবালি। যার থেকে নিস্তার নেই বাংলাদেশের। সেই ছোট্ট বেলায় গণিত বইয়ের কাজ অর্ধেক বাকি রেখে চলে যাওয়া শ্রমিকের কথা মনে আছে? তাদেরই প্রতিচ্ছবিই যেন বাংলার বোলাররা। শুরুর উইকেট নিয়ে যেন ভুলেই যান বাকি উইকেট গুলোর কথা। সমস্যা আসলে টেকনিক্যাল অনেকটাই।

অধিকাংশ বোলারের প্যার্টান একই, নতুন বলে অনেকেই বেশ ভালো। সমস্যাটা হয় মূলত বলটা পুরাতন হয়ে গেলে। পুরাতন বলে একই লেন্থে ঘন্টার পর ঘন্টা বল করা বা গ্রিপটা ধরে রাখতে অনেকেই পারে না। ভ্যারিয়েশনের অভাবটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট। পুরাতন বলে দক্ষ বোলারদের উপর নজর না বাড়ালে হয়ত এই সমস্যা অন্ততকাল ধরে চলতেই থাকবে।

সময় গড়িয়ে যায়, গণিত বইয়ের পরিবর্তন হয়, খুদে ভক্তটাও বড় হয়ে যায়। বদলায় না শুধু বোলারদের লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারদের বিপক্ষে দূর্বলতা।

Share via
Copy link