ম্যাচের তখন ৮৮ মিনিট, বেনফিকা ২-২ গোলে সমতায়। রাইট উইংয়ে বল পান অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া; শিল্পী যেভাবে আলতো হাতে তুলির আঁচড় টেনে দেন ক্যানভাসে, তিনিও সেভাবে পায়ের আলতো ছোঁয়ায় বল পাঠালেন ডি বক্সে। গোল, জেকি আমদৌনির হেডার সরাসরি আশ্রয় নিয়েছে জালে। অবিশ্বাস্য একটা জয় নিশ্চিত হয়েছে বেনফিকার।
সেই সাথে নিশ্চিত হয়েছে ডি মারিয়ার আরো একটা রেকর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করা ফুটবলারদের তালিকায় স্বদেশী লিওনেল মেসিকে টপকে গিয়েছেন তিনি, ৪১টি অ্যাসিস্ট করার মধ্য দিয়ে তাঁর অবস্থান এখন দুই নম্বরে। এক নম্বরে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গেও ব্যবধান স্রেফ এক, তাঁর শীর্ষে যাওয়াটা তাই সময়ের ব্যাপার হয়তো।
ম্যাচ শুরুর আগে অবশ্য এই তারকার অ্যাসিস্ট ছিল ৩৯টি, মেসির চেয়ে একটা অ্যাসিস্ট কম ছিল। সেই ঘাটতি তিনি পূরণ করেছেন ৮৪ মিনিটের সময়, ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকা পর্তুগিজ প্রতিনিধিদের সমতায় ফেরার রাস্তা চেনানোর মাধ্যমে। তাঁর নিখুঁত ক্রস যেভাবে খুঁজে নিয়েছিল আর্থুর ক্যাব্রালকে, তা দেখলে মুখ দিয়ে কেবল বের হবে হোয়াট অ্যা ক্রস!
সবমিলিয়ে শেষ দশ মিনিট মোনাকোর মাঠে মোনাকোকে হিংস্র বাঘের মত ছিড়েখুঁড়ে খেয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী উইঙ্গার। পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি আগ্রাসন কমাননি এতটুকুও, জয়ের ক্ষুধা মরেনি একটা মুহূর্তের জন্যও।
অবশ্য নির্দিষ্ট সময় সীমায় বেঁধে ফেলা ঠিক হবে না, নব্বই মিনিট মাঠে ছিলেন ডি মারিয়া। পুরোটা সময়ই আসলে ম্যাচের প্রাণকেন্দ্র হয়েছিলেন তিনি। গোলের পাঁচ পাঁচটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন, সফল লং বল পাঠিয়েছেন ছয়টা – ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি তো আর এমনি এমনি মেলেনি।
জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন এই তারকা, অথচ তাঁর পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিচের দিকে নামবে এমন কোন লক্ষণ নেই। উল্টো ওয়াইনের মতই সময়ের সাথে সাথে স্বাদ বাড়ছে, খেলায় জাদু বাড়ছে। আগের ম্যাচেই তো স্রেফ ১৮ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি, এর আগের ম্যাচে করেছেন ব্রেস – অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা !