সেটা অবশ্যই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস

অরবিন্দ (ডি সিলভা) একটি সরল বলয়ের মতো, যাকে তুমি বুঝবে, যার মধ্যে দিয়ে হেটে গেলে পূর্ণতা এবং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন অনুভব করবে। মাঝেমাঝে এটা খুব সহজ হয় যদি না বোলার ভালো বল না করে অথবা পরিস্থিতি খুব চাপ না থাকে তাহলে আপনি একটা সহজ সেঞ্চুরি পেতে পারেন। কিন্তু আমি সেটা বলছি না। আমি বলছি সেটা খুব বেশি চাপের একটা অবস্থা ছিল, একটা ভালো বোলিং আক্রমণ ছিল। আর সেজন্য অবশ্যই সেটা দূর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।

আমি মনে করি না অরবিন্দের ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের ইনিংসের চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটাকে গ্লেন ম্যাকগ্রা, ফ্লেমিং, ওয়ার্ন, রাইফেলরা ছিলো ওয়াহ ভাইদ্বয়ের মতো তাদের পার্ট টাইম বোলারও ছিল যারা ভালো বল করতো। শ্রীলঙ্কা ফাইনালে গেলেও তাঁরা ফেভারিট ছিলো না।

কিন্তু বড় ম্যাচের খেলোয়াড়দের তেমনই মাইন্ডসেট রাখতে হবে যেটা অরবিন্দ সবাইকে করে দেখিয়েছে। যে দিনকে তারা নিজের করে নিতে চেয়েছে সেদিন অন্য কেউই তাঁদের দমাতে পারেনি।

শ্রীলঙ্কানদের জন্য সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এবং তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য সেই বিশ্বকাপ জয় অনেকের জীবনেই বেশ পরিবর্তন এনেছে। সেই স্মৃতি আমার কিছু কিছু মনে আছে কারণ সেই সময়ে আমি স্কুল ছাত্র ছিলাম। সেদিন আমার স্কুলে আন্ত:স্কুলের মধ্যে শেষ একটা বড় ম্যাচ ছিল।

শ্রীলঙ্কা ফাইনালে যাওয়ার আগেই আমাদের ম্যাচের তারিখ নির্ধারণ হয়৷ তাই ওই সময় সেটা পাল্টানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

আমাদের ম্যাচ ছিল শনিবার এবং রবিবারে। তাই আপনারা ধারণা করতে পারবেন, শনিবারের দিনটি খেত্তারামা স্টেডিয়াম দর্শকে পূর্ণ থাকত আর রবিবারের দিনটিতে শুধু স্কুল প্রধান, বাবা মা এবং শিক্ষক এ পূর্ণ থাকত। তাই এদের ছাড়া বাদ বাকি সবাই, হয়ত পুরো পৃথিবী ফাইনাল ম্যাচটি দেখেছিল।

আমি তখন মাত্র বাসায় পৌঁছে ছিলাম যখন লঙ্কানরা রান তাড়া করতে ব্যাটিংয়ে নামলো। যখন দ্রুত দুই উইকেট পড়লো, তখন খুব খারাপ লাগছিলো। কিন্তু এরপর অরবিন্দ নামলো যিনি কিনা আমাদের জন্য সেরা খেলোয়াড় ছিলো।

প্রথম বল থেকেই সে ভালোভাবেই ব্যাট করতে থাকে। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে ঠিক তার উলটো টেম্পারমেন্ট দেখিয়েই ব্যাটিং করছিলো। সেটা ছিলো দূর্দান্ত ব্যাটিং, প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু সে নিজেকে বেশ নিয়ন্ত্রিত রেখেছিলো যেটা তাকে প্রমাণ করেছে সেটা কতটা অসাধারণ ব্যাটিং দেখিয়েছে।

এই স্মরণীয় ইনিংসের প্রতিটি পরতে পরতে ছিল জাদু , যেগুলো আমি উদঘাটন করতে পেরেছি পরবর্তী সময়ে আমার ক্যারিয়ারের জীবনে যখন থেকে তাকে আমি জানতে শুরু করি। যদিও ১৮ বছরের যুবক ছিলাম কিন্তু এমন দৃঢ় আত্নবিশ্বাস আর একাগ্রতা ওই বয়সে যে কাউকে অবাক করবে।

আমি শুধু পরে এটা মনে করতে পারি এটা কতটা সেরা ছিলো, কতটা দূর্দান্ত! সে কিভাবে প্ল্যান করে শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রাদের মোকাবেলা করেছে। এরপর (ডেমিয়েন) ফ্লেমিংয়ের গতিকে কাজে লাগিয়ে খেলেছে সে। এটা মাস্টারক্লাস ছিল!

যদি এটা আপনি পুনরায় দেখেন তাহলে দেখবেন যে সে তাঁর স্টাম্প ঢেকে রেখেছিল, সে সবসময় চেয়েছিলো যথাসম্ভব বোলার তার বরারবর তাকে বল করুক। সে তার অ্যাবিলিটির উপর আত্মবিশ্বাসী ছিলো। আসলো এবং ভয় না পেয়ে এক প্রান্তে সে ম্যাচ জিততে সবকিছুই করল!

তার এই পারফরম্যান্স কি যথেষ্ট ছিল? নাকি না? এই হার না মানা সেঞ্চুরির পাশাপাশি তিনি তিন উইকেট শিকার করেন পাশাপাশি দুইটি ক্যাচও ধরেন। ম্যাচে তাঁর ইম্প্যাক্ট অসাধারণ। আর সেটা অবশ্যই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ। আমার ইচ্ছা হয় এমন কিছু করতে? কারই বা হবে না এটা?

__________________

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক ছিলেন অরবিন্দ ডি সিলভা। ফাইনালে তিনি ৪২ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে করেন ১০৭ রান। ফাইনালের মঞ্চে এমন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে ওঠার নজীর খুব বেশি নেই। সেই সময় স্কুল শিক্ষার্থী ছিলেন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী সময়ের অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। ক্রিকেট মান্থলির সাথে মিলে তিনি সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link