টেস্ট ক্রিকেটকে বেশ জলদি বিদায় জানালেন সাউদি!

শেষের সেই ম্লান বিকেলে, এক পেসার যেন বলে গেলেন— 'আমি থামছি না, সময়ই আমাকে থামিয়েছে।' ক্রিকেটের সবুজ মাঠে তার ছায়া রয়ে যাবে,বাতাসে থেকে যাবে তার সুইংয়ের গল্প

মাত্র ২০ বছর বয়সেই ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে অভিষেক। ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ বলে ৭৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটা দিয়েই টেস্টে যাত্রাটা শুরু। যাতে ছিল চারটি বাউন্ডারি আর নয়টি ছক্কার মার। মাঝে কেটে গেছে ১৬টি বছর। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। শেষ টেস্টেও ব্যাট হাতে যেন দিলেন ভিন্টেজ ফ্ল্যাশব্যাক। ১০ বলে ২৩ রানে আউট হবার আগে মেরেছেন তিনটি ছক্কা আর একটি চার।

কোন বিধ্বংসী ব্যাটার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলুন তো? আরেকটু সহজ করে দেই, অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। হ্যা, টিম সাউদির কথাই বলছি। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী শুরু আর শেষের যাত্রায়, নামের পাশে যুক্ত করেছেন ৩৮৯ টেস্ট উইকেটও।

ছয় ফুট দুই ইঞ্চির সাউথি পেস বোলিংকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অন্যন্য উচ্চতায়। সাউদির বাউন্স,সুইং আর গতিতে গত একটা দশকেরও বেশি সময় নাকানিচুবানি খেয়েছে বিশ্বের বহু নামি-দামি ব্যাটাররা। ঘরের মাঠে সাউদি, প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য নাইটমেয়ারই ছিলেন। নিউজিল্যান্ডে খেলা ৫৯ টেস্টে পাওয়া ২৩২ উইকেট অন্তত সেই সাক্ষ্যই দেয়।

 

প্রায় দেড় যুগের টেস্ট ক্যারিয়ারে, তার ঝুলিতে আছে বহু অর্জন। ১০৭ টেস্ট খেলা সাউদি নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। আর মাত্র ৪২ উইকেট নিলেই কিংবদন্তি রিচার্ড হার্ডলিকে হটিয়ে তিনিই বনে যেতেন নিউজিল্যান্ডের সবোর্চ্চ উইকেট শিকারী।

তবে বয়সটা যে আর সায় দিচ্ছে না। ৩৭ বছর ছুঁই ছুঁই শরীটা আর তীক্ষ্ণ সেই কামানের গোলা হাত দিয়ে ছুড়তে পারছে না। চলতি বছরে ১৯ ইনিংসে নিয়েছেন মোটে ১৫টি উইকেট। কে বলবে এই সাউদির ভয়ে একদা ধরধর করে কাপতো ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার মত ক্রিকেট পরাশক্তিররা। এরাই যে সাউদির প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল এতটা বছর।

ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ দিকে এসে জিতেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ট্রফিটাও। ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে জিতেছিলেন সেই কাক্ষিত শিরোপা। বল হাতে ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন চার উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ১৫ বার।

এত বর্ণালী ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন অবশেষে। তীক্ষ্ণ সুইং আর দুরন্ত গতির বলে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে রাজত্ব করেছেন টিম সাউদি। তার হাতের সেই জাদুকরি বল অনেক ব্যাটারের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সময়ের নিয়ম বড় নির্মম, চাইলেও থেমে থাকা যায় না। সাউদি হয়তো আরও খেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি জানেন কখন থামতে হয়, কখন সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে হয়।

সত্যিকারের কিংবদন্তিরা এমনই। তাদের বিদায় যেন শেষ নয়, বরং একটা নতুন শুরুর ইঙ্গিত দেয়। নিউজিল্যান্ডের সবুজ গালিচায় আর দেখা যাবে না সেই ছয় ফুট দুই ইঞ্চির মহীরুহকে। যার বাউন্স আর সুইংয়ে বিশ্বসেরা ব্যাটাররাও টালমাটাল হয়ে পড়তেন। তার বিদায় আসলে একটি যুগের সমাপ্তি, আর সেই সমাপ্তি যেন এক নীরব হাহাকার ছড়িয়ে দিল ক্রিকেটমহলে।

শেষের সেই ম্লান বিকেলে, এক পেসার যেন বলে গেলেন— ‘আমি থামছি না, সময়ই আমাকে থামিয়েছে।’ ক্রিকেটের সবুজ মাঠে তার ছায়া রয়ে যাবে,বাতাসে থেকে যাবে তার সুইংয়ের গল্প। বিদায় টিম সাউদি, তুমি মাঠ ছেড়ে গেলে ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেট তোমাকে কখনো ভুলবে না।

Share via
Copy link