এল গাতো, অদম্য এক চরিত্র

২০০৯ সালে তিনি যোগদান করেন অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। পরবর্তীতে তিনি ইতিহাসের অন্যতম সেরা আক্রমনত্রয়ী ‘বিবিসি’-এর অংশ হয়েছেন।

সাল ২০২২, সেই দীর্ঘ প্রত্যাশার অবসান ঘটলো করিম বেনজেমার জীবনে। তার হাতে জ্বলজ্বল করছিল সেই ট্রফি যা হাতে পাওয়া সকল ফুটবলারের স্বপ্ন। তার হাতে উঠলো ব্যালন ডি অর। বেনজেমা জিতে নিলেন বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব।

১৯৮৭ সালের ১৯ডিসেম্বর ফ্রান্সের লিঁওতে করিম মোস্তফা বেনজেমা জন্মগ্রহণ করেন। তার ফুটবল ক্যারিয়ারের হাতেখড়ি হয় তারই শহরের ক্লাব অলিম্পিক লিঁওর হাত ধরে। পরবর্তীতে তিনি লিঁওর মূল দলের হয়ে খেলেন। ২০০৪ হতে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি শৈশবের ক্লাবেই ছিলেন। এই সময়ে তিনি মোট ১১২টি ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন ৪৩টি।

২০০৯ সালে তিনি যোগদান করেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় তিনি ইতিহাসের অন্যতম সেরা আক্রমনত্রয়ী ‘বিবিসি’ এর অংশ হয়েছেন। মিশ্র এক যাত্রায় মাদ্রিদের ‘মেইন ম্যান’ হওয়ার সুযোগও দু’হাতে লুফে নিয়েছেন।

রিয়াল মাদ্রিদে তার যাত্রাটি ছিল বেশ চড়াই উৎরাইয়ের। একসময় রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণে সবথেকে কম প্রভাব ছিল তার। যেখানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং গ্যারেথ বেলের মত খেলোয়াড়রা পরিসংখ্যান গড়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে বেনজেমা ছিলেন স্রেফ একটা অন্ধকার ছায়া হয়ে।

তার পারফরমেন্সে ভক্তরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে বেশ সমালোচনাও শুরু হয়। তবে সকল সমালোচনা ছাপিয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন। ২০১৮ সালে রোনালদো চলে যাওয়ার পর ফলস নাইন থেকে সরে এসে মূল নাম্বার নাইন হিসেবে খেলা শুরু করেন। এর পরেই শুরু হয় তার দাপট ইউরোপীয় মঞ্চে।

তিনি ২০১৮ হতে ২০২৩ পর্যন্ত টানা পাঁচ বার লা লিগা মৌসুমের সেরা দলে জায়গা করে নেন। দুইবার লা লিগার সর্বাধিক গোল করার খেতাবও জেতেন। ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শীর্ষ গোলদাতার খেতাবও জিতেছেন তিনি।

এই ফরাসি তারকা তার ক্যারিয়ারের সবথেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। তার মাদ্রিদ ক্যারিয়ারে তিনি লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে মোট ৪৩৯ ম্যাচে ২৩৮টি গোল করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও তার সাফল্য রয়েছে বেশ। ফ্রান্সের হয়ে তিনি মোট ৯৭ টি ম্যাচ খেলে ৩৭টি গোল করেছেন। বিভিন্ন কারণে একটি বড় সময়ের জন্য ফ্রান্সের জাতীয় দল থেকে দূরে ছিলেন বেনজেমা। যার ফলে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয়টি তার নামে লেখা হয়নি। তবে ২০২২ সালের বিশ্বকাপে তিনি দলে ছিলেন, যদিও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি।

তিনি তার ক্যারিয়ারে দলগত মোট ৩৪টি শিরোপা জিতেছেন। উল্লেখযোগ্য পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটি লালিগা, পাঁচটি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, তিনটি স্প্যানিশ লিগ কাপ। তার ব্যক্তিগত শিরোপাও রয়েছে অনেক। বেনজেমার ঝুলিতে রয়েছে একটি ব্যালন ডি অর, একটি ইউএফএ বর্ষসেরা খেলোয়াড়, চারটি ফ্রান্স বর্ষসেরা খেলোয়াড়, ছয়টি সর্বোচ্চ গোলদাতা শিরোপা।

করিম বেনজেমার গল্প শুধুমাত্র ফুটবল মাঠের সাফল্যের নয়, এটি একটি বিশ্বাস, অধ্যবসায়, এবং নিজের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার গল্প। তিনি দেখিয়েছেন যে সমালোচনা, চ্যালেঞ্জ, এবং ব্যর্থতা জীবনের অংশ হলেও সেগুলোকে শক্তিতে পরিণত করাই প্রকৃত বিজয়।

২০২৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর করিম সৌদি আরবের আল-ইত্তিহাদ ক্লাবে যোগ দেন। নতুন পরিবেশ, নতুন লিগ, এবং নতুন লক্ষ্য নিয়ে তিনি শুরু করেন তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়। যদিও তিনি ইউরোপীয় মঞ্চ থেকে দূরে সরে এসেছেন, তবে তার অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব এখন নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করছে।

করিম বেনজেমা তার ক্যারিয়ার দিয়ে প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা যদি পরিশ্রম আর সংকল্পের সঙ্গে মেলে, তবে সাফল্য শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। তিনি শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি একটি আদর্শ।

Share via
Copy link