বাংলাদেশের ফুটবলটা আজকাল আর ঠিক আসে না। ফুটবল বাংলাদেশের সেকেন্ড স্পোর্টস, কেউ তেমন ভালোবাসে না। সেই ফুটবলের একজন উদ্ধারকর্তা চলে এসেছেন। ন্যাপোলিতে যেমন এসেছিলেন খোদ ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। বাংলাদেশ ফুটবলের সেই মাসিহা হয়ে চলে এসেছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা! বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা।
হামজা কত বড় তারকা? হামজা খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। শুধু এই লিগে খেলাই নয়, তিনি লিস্টার সিটির হয়ে জিতেছেন ঐতিহ্যবাহী এই লিগের শিরোপা। ক্লাবটির অধিনায়কত্ব করেছেন। এফএ কাপ জিতেছেন। খেলেছেন ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ ও এর পরের ধাপ উয়েফা কনফারেন্স লিগেও।
খোদ ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২১ দলে খেলেছেন। সেই হামজা অবশেষে ফিরে এসেছেন নিজের মাতৃভূমিতে। শরীরে হবিগঞ্জের ২৬ বছর বয়সী হামজা জড়াবেন বাংলাদেশের লাল সবুজের জার্সি। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাস তাঁর সেরা ‘বুস্ট আপ’। ডুবন্ত বাংলাদেশের ফুটবল তরীকে তীরে ভেড়ানোর দায়িত্ব এখন উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার।
হামজা নিজের মুখেই বলে দিয়েছেন, ‘আমি বাংলাদেশের পক্ষে খেলতে যাচ্ছি। আশা করি, দ্রুতই দেখা হবে।’ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার ছাড়পত্র মিলেছে। গেল গত জুনে বাংলাদেশের পাসপোর্টের আবেদন করেন হামজা। আগস্টে সেই পাসপোর্ট হাতে পান। এর পরপরই ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) ছাড়পত্র মেলে তাঁর।
বাফুফের আবেদনটা অবশ্য ঝুলে ছিল বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটিতে। সেই অচলায়তন ভেঙেছে। দাপ্তরিক আর কোনো জটিলতা নেই। এখন যে কোনো সময় বাংলাদেশের হয়ে খেলে ফেলতে, দেশের ফুটবলকে বদলে দিতে প্রস্তুত হামজা চৌধুরী।
তিনি কি একাই সব কিছু বদলে দেবেন? না, তাঁর একার পক্ষে দেশের ফুটবলের বেহাল দশা কাটানো সম্ভব নয়। ১১ জনের খেলা একজোড়া পা দিয়ে শুধরে ফেলা সম্ভব নয়। তবে, ফুটবল একটা জাতীয়তাবাদী খেলা। এখানে একজন তারকার দরকার। এখানে একজন পেলে, বেকেনবাওয়ার, মেসি-ম্যারাডোনার ‘ভ্যালু’ অনেক।
বাংলাদেশের হয়ে সেই ‘ভ্যালু’টা কাড়তে পারেন হামজা। বোর্ডের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার দরকার আছে। পরিচর্যা ও পরিকল্পনায় গাফিলতি দিলে সব আশা নিরাশায় ডুবে যেতে পারে। হামজা চলে আসায় হয়ত স্পন্সরের কোনো কমতি হবে না। কিন্তু, সেটাকে যথাযথ জায়গায় কাজে লাগানোর কাজটা করতে হবে বোর্ডকেই।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। হামজা চলে এসেছেন, তাঁর হাত ধরে দেশের ফু্টবলের বুকে জন্ম হোক হাজার হাজার রুস্তমের। তখনই সত্যিকারের দুর্বার হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ফুটবল।