কেন কেকেআর ‘অপমান’ করেছিল সৌরভকে?

১৪ বছর পর সেই সময়কার অভ্যন্তরীণ ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন কেকেআরের তৎকালীন টিম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, নিলামের অনেক আগেই সৌরভকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের মধ্যমণি শুরুতে সৌরভ গাঙ্গুলিই ছিলেন। কেকেআর দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন প্রিন্স অব ক্যালকাটা। শাহরুখ খানের মালিকানাধীন দলে ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কেকেআর দ্রুতই বুঝে ফেলে, সৌরভকে নিয়ে লম্বা দৌঁড়ে টেকা মুশকিল হবে।

কিন্তু, ২০১১ সালের নিলামের আগে কেকেআর সিদ্ধান্ত নেয়, আর রাখা হবে না সৌরভকে। নিলামের দিন প্রায় অবিক্রিতই থেকে যাচ্ছিলেন তিনি, শেষ মুহূর্তে এগিয়ে আসে পুনে ওয়ারিয়র্স। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে কেকেআর ম্যানেজমেন্ট। বিষয়টা বাংলার ক্রিকেট আইকনের প্রতি অবমাননাকর ছিলে বলেও রায় দেন কেউ কেউ।

১৪ বছর পর সেই সময়কার অভ্যন্তরীণ ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন কেকেআরের তৎকালীন টিম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, নিলামের অনেক আগেই সৌরভকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়।  এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের নিলামের আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, সৌরভকে আর রাখা হবে না। সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল, তবে দল হিসেবেই আমরা এই পথ বেছে নিয়েছিলাম।’

শাহরুখ খানের সেখানে বড় কোনো ভূমিকাি ছিল না। কিং খান দলের ক্রিকেটীয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না। জয় বলেন, ‘শাহরুখ বলেছিলেন, পেশাদার দলে পেশাদারদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তিনি স্পষ্ট করে দেন, আমরা চাইলে সৌরভকে রাখতে পারি, না চাইলে রাখার দরকার নেই।’

সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন জয় ভট্টাচার্য, কোচ ডেভ হোয়াটমোর, সিইও ভেঙ্কি মাইসোর ও জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে যখন নিলামে সৌরভের নাম উঠল, কেকেআর আগ্রহ দেখায়নি, অন্য দলগুলিও চুপ ছিল। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই জয় ভট্টাচার্যের ফোনে আসতে থাকে একের পর এক ক্ষুব্ধ ক্ষুদে বার্তা।

তিনি বলেন, ‘মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার ফোনে ৪০০-র বেশি মেসেজ ঢুকেছিল। সবাই জানতে চেয়েছিলেন, কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। অনেকে বলেছিলেন, আমি একজন বাঙালি হয়ে বাংলার সবচেয়ে বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।’

কিন্তু, কেন সৌরভকে দলে রাখতে চায়নি কেকেআর? জয় ব্যাখ্যা দেন, ‘আমরা এমন একজন অধিনায়ক খুঁজছিলাম, যিনি অন্তত ছয়-সাত বছর ভারতীয় দলে খেলবেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল গৌতম গম্ভীর ও রোহিত শর্মা, বিশেষ করে গম্ভীরের দিকেই আমরা ঝুঁকেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম, এই সিদ্ধান্তে সমর্থকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসবে। কিন্তু দলের ভবিষ্যৎ এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়তে হলে ঝুঁকি নিতেই হতো।’

সমালোচনার হলেও নিজেদের সেই সিদ্ধান্তে কলকাতাকে সফলই বলা যায়। কারণ, গম্ভীরই কালক্রমে কলকাতার ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক বনে যান। কলকাতাকে দু’টো আইপিএল শিরোপা এনে দেন অধিনায়ক হয়ে। পরে মেন্টর হিসেবে ফিরে জেতান আরেকটি শিরোপা।

Share via
Copy link