এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি একটু চ্যালেঞ্জিং। হাইব্রিড মডেলে দুই দেশের দুই ভিন্ন কন্ডিশনে খেলা হবে। আর এখানেই যেন বাংলাদেশের মত দলের প্রতিবন্ধকতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কেননা দলটার স্পিন আক্রমণ যে অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বেশ দূর্বল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে কাগজে কলমে বাংলাদেশের স্কোয়াডে আছেন চারজন স্পিনার। বা-হাতি অর্থোডক্স স্পিনারের দায়িত্ব পালন করবেন নাসুম আহমেদ। অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের পাশাপাশি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ঠেকার কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। বৈচিত্র্য এনে দিচ্ছেন স্রেফ রিশাদ হোসেন।
বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যাত্রা শুরু করবে দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ওই একটি ম্যাচেই স্পিনারদের সহয়তা পাওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি। যদিও আইসিসি ইভেন্টে ট্রু উইকেট হয়ে থাকে সাধারণত, তবুও উইকেটের আচরণ আর আবহাওয়া তো আমুল বদলে ফেলা যায় না।
সেই উইকেটে মিরাজ, নাসুম, রিশাদরা হয়ত দেখাবেন নিজেদের কব্জির কারিকুরি। কিন্তু বিপত্তি বাঁধতে পারে পরবর্তী দুই ম্যাচে। রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের পর, পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। ওই যে পাকিস্তানের কন্ডিশনে উইকেট অধিকাংশ সময়েই হয় রান প্রসবা। নির্জীব এক উইকেটে দাঁড়িয়ে ব্যাটাররা মেতে ওঠেন রান উৎসবে।
এমন উইকেটে নাসুম আহমেদ খানিকটা কার্যকর হতে পারেন। কেননা নাসুম রান আটকে রাখার কাজে ভীষণ পটু। স্ট্যাম্পের লাইনে, গুড লেন্থে লাগাতার বল করে যেতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে রান আটকানো গেলেও ওমন বাইশ গজে উইকেট শিকার করা হয়ে যাবে দুষ্কর। আর সেটুকুই যথেষ্ট হবে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার জন্যে।
কিন্তু মূল সমস্যার উদ্রেক ঘটাতে পারেন মিরাজ। স্পিন সহায়ক নয় এমন উইকেটে তিনি একেবারেই নিষ্ফলা। মাঝের ওভারগুলোতে ক্যারিশম্যাটিক কিছু করতে পারার ঘাটতি রয়েছে মিরাজের মধ্যে। তিনি ওই রান আটকে রাখা অবধি থাকতে পারেন সীমাবদ্ধ। তাছাড়া ব্যাটিংয়ে নিজের মনোযোগ বাড়িয়েছেন, বোলিংটা হয়ে গেছে সেকেন্ডারি স্কিল।
ভরসা করবার জায়গা হতে পারেন রিশাদ হোসেন। তার লেগস্পিন যেকোন উইকেটে কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু রান হজম করবার একটা বদ অভ্যাস রয়েছে তার। সাধারণত খারাপ দিনে উইকেট শিকারি বোলাররা বিপাকে পড়েন। কিন্তু নিয়মিত অতিরিক্ত রান খরচ তারা করেননা। মাঝের ওভারগুলোতে বড় জুটি ভাঙার অন্যতম কারিগর হতে পারেন রিশাদ। তাকে নিজের স্কিলের বাস্তবায়নটা করতে হবে ঠিকঠাক।
এই তিনজনকে সাহায্য করবার জন্যে মাঝেমধ্যে হয়ত হাত ঘুরাবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও তিনি সে কাজটিই করেছেন। কিন্তু এখন আর আগের মত নিয়ম করে বোলিং করতে দেখা যায় না রিয়াদকে। এই হচ্ছে গোটা স্পিন ডিপার্টমেন্টের বর্তমান অবস্থা।
চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, এবারের স্পিন ডিপার্টমেন্টে নেই কোন এক্স ফ্যাক্টর। দীর্ঘকাল ধরে সাকিব আল হাসান পালন করেছেন সে দায়িত্ব। বাংলাদেশকে স্পিন ডিপার্টমেন্ট নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয়নি কখনোই। এখন দলে বৈচিত্র্য আছে বটে, লেগ স্পিনার, ডান ও বা-হাতি অফ স্পিনারদের মিশেল আছে। কিন্তু তুরুপের তাসের অভাব রয়েছে নিঃসন্দেহে।
তাইতো আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ফলাফল হতে পারে দুঃসাধ্য। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে সেট ব্যাটারকে কাবু করবার টোটকা জানা প্রয়োজন। এখন ভরসা স্রেফ সঠিক পরিকল্পনার ছকের উপর।