এক হাতে তলোয়ার, অন্য হাতে ঢাল। একদিকে রণাঙ্গণের দামামা, আরেকদিকে বরফশীতল চাহনী। একদিকে ভয়, অন্যদিকে ভরসা। সেই ভরসার নামই তো লোকেশ রাহুল।
যতক্ষণ তিনি থাকেন, ততক্ষণ ভরসা থাকে। তিনি ভারতের উদ্ধারকারী জাহাজ। ‘ম্যায় মার রাহা থা না ইয়ার’ – বিরাট কোহলিকে সেমিফাইনালে বলেছিলেন। এবার বললেন গোটা ভারতকে। বললেন, আমি যতক্ষণ খেলছি – ততক্ষণ আমার ওপর ভরসা রাখো, নির্ভয়ে।
তিনি ক্রাইসিস ম্যান লোকেশ রাহুল! না, দুবাইয়ের এই রাতের পর আর কোনো আক্ষেপ থাকার কারণ নেই তাঁর। ম্যাচ শেষে তাঁকে কেউ মনে রাখবে না – এটা আর বলার সুযোগ নেই। কোনো কিছু বলার আর সুযোগ রাখেননি রাহুল।
দুবাইয়ের উত্তপ্ত বাতাসে নিউজিল্যান্ডের ২৫১ রানও যেন কিছুটা বেশি মনে হচ্ছিল। ভারতীয় ডাগআউটে তখন চাপা উত্তেজনা, কিন্তু ওপেনিং জুটির দুর্দান্ত শুরুর পর সেই উত্তেজনা একটু কমেছিল। রোহিত শর্মা ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন। শুভমান গিল এলিগ্যান্স মেশালেন পাওয়ার হিটিংয়ে। মনে হচ্ছিল, ভারত হয়তো একপেশে ম্যাচেই ঘরে তুলবে শিরোপা।
কিন্তু ক্রিকেট তো অনিশ্চয়তার খেলা! কয়েকটা মুহূর্তের ঝড়ে বদলে যায় সব সমীকরণ। রোহিত গেলেন, কোহলি ফিরলেন, শুভমানও পারলেন না। নিউজিল্যান্ডের পেস-বাউন্সে ভারতীয় মিডল-অর্ডার টলতে থাকল। তখনই ক্রিজে এলেন লোকেশ রাহুল। টেস্টের ধৈর্য, ওয়ানডের বুদ্ধি আর টি-টোয়েন্টির শট সিলেকশন—সব মিশিয়ে তৈরি হলো ভারতের চ্যাম্পিয়ন ইনিংস।
রাহুল জানতেন, এক প্রান্ত ধরে রাখতে হবে। জানতেন, এখানে উইকেট হারানো মানে ম্যাচ হাতছাড়া। তাইতো শুরুটা করলেন সতর্কতার সঙ্গে। পিচে চোখ বসতেই এক এক করে নামালেন ক্লাসিক শটের পসরা। কাভার ড্রাইভে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন, কখনো অফস্টাম্পের বাইরের বল লেট কাট করে ফিল্ডারের পাশ কাটালেন। সব মিলিয়ে যেন এক শিল্পীর নিখুঁত ক্যানভাসে তুলি বোলানো!
শেষ ১০ ওভারে যখন ম্যাচের উত্তেজনা তুঙ্গে, তখনও তিনি ছিলেন বরফশীতল। এক হাতে তলোয়ার, অন্য হাতে ঢাল হয়ে ভারতকে উদ্ধার করলেন ক্রাইসিস ম্যান লোকেশ রাহুল! অপরাজিত থাকলেন ৩৩ বলে ৩৪ রান করে। ২০১৩ সালে ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ধোনির নেতৃত্বে। ২০২৫ সালে ধোনির পথেই এগোলেন রাহুল। না, এবার আর কেউ তাঁকে ভুলে যাবেন না।