লোকে কত কিছুই না বলে!

স্ট্যাম্প হাতে ডান্ডিয়া খেলতে খেলতে তো তারা জানান দিলেন লোক চক্ষুর আড়ালেও নেই কোন বিরোধ। সবই মিডিয়ার সৃষ্টি।  

লোকে কত কিছুই না বলে! বলে, রোহিত-কোহলির সম্পর্ক নাকি ভালো না, অধিনায়কত্ব নিয়ে কোন্দল, বন্ধুত্ব নয়, বিদ্বেষ! — এমন কথা তো ভারতের ক্রিকেট মহলে বাতাসে ভাসছে বহুকাল ধরে। বিশেষ করে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে এই গুঞ্জনের মাত্রা আরও বেড়েছে। কিন্তু আপনি কখনও শুনেছেন রোহিত শর্মা কিংবা বিরাট কোহলিকে একে অপরের সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে?

রোহিত শর্মা ভারতের জার্সিতে প্রথম পা রাখেন ২০০৭ সালে, যুবরাজদের সেই ঐতিহাসিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের দলে। বিরাট কোহলি তখনও জাতীয় দলের দৃশ্যপটে আসেননি। ২০০৮ সালে যুব বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জেতানোর পরই তার উত্থান। তখন থেকেই কোহলি জানতেন, ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন নক্ষত্র আসতে চলেছে— নাম রোহিত শর্মা।

২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকে তাদের একসঙ্গে পথচলা শুরু। একজন ওপেনিংয়ে রানের পাহাড় গড়েছেন, অন্যজন তিন নম্বরে নেমে প্রতিপক্ষের ভয়ংকরতম অস্ত্রকে সামলেছেন। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে যুগলবন্দীর গল্প যখন লেখা হবে, এই দু’জনের নাম সেখানে সোনার হরফে লেখা থাকবে।

কেউ কাউকে ছোট করেননি কখনও, বরং বারবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। গুঞ্জন যতই থাকুক, বাস্তবতা হলো— রোহিত-বিরাট কখনো জনসমক্ষে একে অপরের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেননি। বরং তাদের কথায় উঠে এসেছে প্রশংসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা।

২০১৭ সালে বিরাট এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রোহিত শর্মার নাম নিয়ে আমরা অনেক কৌতূহলী ছিলাম। সবাই বলত, ভাই, একজন খেলোয়াড় আসছে!’ ২০২২ সালে কোহলি যখন কঠিন সময় পার করছিলেন, তখন রোহিত দাঁড়িয়েছিলেন তার পাশে। বলেছিলেন, ‘ফর্ম ওঠা-নামা করে, কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের মান কখনোই কমে না।’

এটাই তো প্রকৃত বন্ধুত্বের ভাষা, একজন অধিনায়ক আরেকজনের প্রতি যে বিশ্বাস রেখে কথা বলেন, সেটাই তো তারা দেখিয়েছেন বারবার। কোথায় দ্বন্দ্ব? মাঠের প্রতিটি জয়-উল্লাসে তো বন্ধুত্ব!

২০২৩ সালে এক সাথে কেঁদেছেন। ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ট্রফি হাতে দু’জন একসঙ্গে উদযাপন করেছেন। মাঝে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা একসঙ্গে।

এই দুজন যখন ব্যাট হাতে নামেন, তারা একে অপরের সাফল্যে উল্লাস করেন। রোহিত যখন ড্রেসিংরুম থেকে বিরাটের ইনিংস উপভোগ করেন, বিরাট যখন রোহিতের শতরান দেখে হাততালি দেন— তখন কি সত্যিই মনে হয় তারা প্রতিদ্বন্দ্বী? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর যখন এই গুঞ্জন চরমে ওঠে, তখন কোহলি বলেছিলেন একদম সরাসরি, ‘রিডিকুলাস!’

এটাই সত্যি। রোহিত-বিরাট হয়তো মাঠের বাইরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু নন, কিন্তু তাদের সম্পর্ক দ্বন্দ্বের নয়— শ্রদ্ধার, দায়িত্বের, প্রতিযোগিতামূলক সহযোগিতার। স্ট্যাম্প হাতে ডান্ডিয়া খেলতে খেলতে যে হাসিমুখে তারা মাঠ ছাড়েন, সেটাই প্রমাণ করে— এই সম্পর্কের মধ্যে মিডিয়ার বানানো গল্প নেই, আছে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের দুই নায়কের একসঙ্গে পথচলার গল্প।

Share via
Copy link