দুই দেশ, এক একাদশ

আচ্ছা, দুটি ভিন্ন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন - এমন ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে একটা একাদশ বানালে কেমন হয়? সেই কাজটাই করা যাক চলুন। একাদশে ছয় ব্যাটসম্যান, একজন অলরাউন্ডার, দুই স্পিনার ও দুই পেসার আছেন।

নিজের দেশের হয়ে খেলতে কে না চায়? শৈশব থেকেই অনেকের স্বপ্ন থাকে ক্রিকেটার হবে, দেশের জার্সি হয়ে মাঠে নামবেন। কেউ কেউ নিজ দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগও পান, কেউ বা পান না। তবে এমনও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দেশের হয়ে খেলেছেন।

আচ্ছা, দুটি ভিন্ন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন – এমন ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে একটা একাদশ বানালে কেমন হয়? সেই কাজটাই করা যাক চলুন। একাদশে ছয় ব্যাটসম্যান, একজন অলরাউন্ডার, দুই স্পিনার ও দুই পেসার আছেন।

  • লুক রঞ্চি (নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া): উইকেটরক্ষক

লুক রঞ্চি নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড় হলেও তিনি মূলত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। জন্ম নিউজিল্যান্ডে হলেও বাল্যকালেই পরিবারের সাথে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন।

এরপর অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়েও বেশ কিছু ম্যাচ খেলেন তিনি। ব্র‍্যাড হাডিনের ইনজুরিতে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে একটি-টোয়েন্টি ও চারটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন তিনি। এরপর আবারো নিউজিল্যান্ডে ফিরে যান এবং ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে তিনি অভিষিক্ত হন।

  • এড জয়েস (আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড)

আইরিশ বংশদ্ভূত এড জয়েস ২০০৬-০৭ অ্যাশেজ সিরিজ এবং ২০০৭ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন এড জয়েস। ২০০৬ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষিক্ত হন এই ওপেনার। একই বছর ইংল্যান্ডের হয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়।

পরবর্তীতে ২০১১ বিশ্বকাপে আবার আয়ারল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। এবং ক্যারিয়ারের বাকি সময় আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের অভিষেক টেস্টেও তিনি দলে ছিলেন।

  • ইয়ন মরগ্যান (আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড): অধিনায়ক

২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ডের হয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় ইয়ন মরগ্যানের। তিনি অভিষেক ম্যাচেই ৯৯ রানে আউট হন। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে ৯৯ রানে আউট হওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। এরপর ২০০৭ সালে কানাডার বিপক্ষে তিনি প্রথম সেঞ্চুরি পান। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২০০৭ বিশ্বকাপেও অংশ নেন তিনি। আয়ারল্যান্ড ব্রিটেনের অঙ্গরাজ্য হওয়ায় ব্রিটিশ নাগরিকত্ব তাঁর ছিলই।

২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ৩০ জনের ইংল্যান্ড স্কোয়াডে থাকলেও জায়গা পাননি তিনি। একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় তার। সেই মরগ্যান এখন ইংল্যান্ডের হয়ে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইংল্যান্ডকে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবে এই একাদশের অধিনায়ক তিনিই।

  • ইফতেখার আলী খান পতৌদি (ইংল্যান্ড ও ভারত)

ইফতেকার আলী খান পতৌদির টেস্ট ক্যারিয়ার খুব বড় না হলেও তিনি ক্রিকেটের ইতিহাসেই বিরাট এক কিংবদন্তি। ইংল্যান্ডের হয়ে সেই বিখ্যাত বডিলাইন সিরিজে অ্যাশেজ খেলতে নামেন। অভিষেকে সেঞ্চুরি করেন। অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিনের বিরুদ্ধে গিয়ে একাদশে জায়গা হারান।

পরে ইংল্যান্ডের হয়ে ফিরলেও ক্যারিয়ার বড় হয়নি। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় মাতৃভূমি ভারতের হয়ে খেলেন তিনি টেস্ট, অধিনায়কও ছিলেন। মজার ব্যাপার হল ভারতের হয়ে তাঁর খেলা তিনটা টেস্টটি ছিল সাবেক দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেখানে ইংলিশদের বিপক্ষে তিন টেস্টে পাঁচ ইনিংসে মাত্র ৫৭ রান করেছিলেন। তাঁর ছেলে মনসুর আলী খান পতৌদিও পরে ভারতের অধিনায়কত্ব করেন।

  • মার্ক চাপম্যান (হংকং ও নিউজিল্যান্ড)

হংকংয়ে জন্ম নেওয়া মার্ক চাপম্যান ২০১১-১৬ প্রায় সাত বছর হংকং এর হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। এমনকি ২০১৫ সালের নভেম্বরে হংকং জাতীয় দলের সহকারি অধিনায়ক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পান। তবে তার বাবা নিউজিল্যান্ডের নাগরিক হওয়ায় তিনিও সহজেই নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে নিউজিল্যান্ডে, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। পরবর্তীতে একই মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়ানডে অভিষেকও হয় এই ব্যাটসম্যানের।

  • কেপলার ওয়েসেলস (অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা): সহ-অধিনায়ক

কেপলার ওয়েসেলসের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায় হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। প্রথমে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছিলেন। এরপর প্রায় ১২ বছরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দল ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে গেলে ওয়েসেলস অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান।

সেখানেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট নির্বাসন কাটিয়ে ফিরলে হুইসেলস ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। এবং ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্ব দেন।

  • রুলফ ভ্যান ডার মারউই (দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডস)

রুলফ ভ্যান ডার মারউইর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষেক হয় এই স্পিনিং অলরাউন্ডারের। সেখানে তিন বছর জাতীয় দলে খেলার পর ২০১৫ সালে ডাচ নাগরিকত্ব পান তিনি আর পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডসে।

২০১৫ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে নেদারল্যান্ডসের হয়ে তিনি খেলেন। আইসিসির সহযোগী দেশ হওয়ায় খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় না নেদারল্যান্ডসের।

  • জন ট্রাইকোস (দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে)

তিনি মূলত গ্রিক বংশদ্ভুত। জন্ম মিশরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে। পরে কোচিং ও জীবিকা নির্বাহ করতে গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি ক্রিকেটের সত্যিকারের বিশ্ব নাগরিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। তবে সেখানে থিতু হতে পারেননি ডান হাতি এই অফস্পিনার।

তবে, পরে জিম্বাবুয়ে চলে গিয়ে সাফল্য পান। জিম্বাবুয়ের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেন, একটিতে অধিনায়কত্ব করেন। জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টে পাঁচ উইকেট নেন, যার মধ্যে ছিল স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের উইকেটও।

  • হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র (যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এই লেগ স্পিনার ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও পাপুয়ানিউগিনির বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়। এরপর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) খেলতে যেয়ে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলে জায়গা করে নেন।

  • ডার্ক ন্যানেস (নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া)

ডার্ক ন্যানিসের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়েই ক্যারিয়ারে যাত্রা শুরু করেন। বাবা-মা ডাচ নাগরিক হওয়ায় তাদের কল্যানে পেয়ে যান ডাচ নাগরিকত্ব। আর নেদারল্যান্ডসের হয়ে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি দুই ম্যাচ খেলেন এই পেসার।

এক বছর পরই ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পান এবং সেবার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলেছেন। ভালো পারফরম্যান্স করা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া দলে তিনি সুযোগ পাননি আর।

  • বয়েড র‍্যাংকিন (ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড)

উইলিয়াম বয়েড র‍্যাংকিনের জন্ম আয়ারল্যান্ডে। তিনি ২০০৭ সালে বারমুডার বিপক্ষে ওয়ানডেতে এবং ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন। দীর্ঘদেহী এই পেসার ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পান। ২০১৩ এর ২৫ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় তাঁর।

এরপর একই বছর অ্যাশেজ সিরিজে এক টেস্ট খেলেন তিনি। ইংল্যান্ড দলে নিজের জায়গা নিয়ে সন্দিহান থাকায় ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তিনি আবারো আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার ঘোষণা দেন।

  • দ্বাদশ ব্যক্তি: হুয়ান রাস্টি থেরন (দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র)

দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই খেলোয়াড় দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে মাত্র ১৩ ওয়ানডে ও ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেন। তবে তার ছোট ক্যারিয়ারে আহামরি কিছু করতে পারেননি। ২০১৫ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্রিকেট থেকে অবসরে যান।

এরপর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছর বাস করার পর সেখানকার নাগরিকত্ব পান। এবং যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ২০১৯ সালে তিনি ওয়ানডেতে আবার অভিষিক্ত হন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...