১৪ বছর বয়স, আউট হয়েই তাই কেঁদে ফেলেছিলেন বৈভব সুরিয়াভানশি। পৃথিবীটা এখনও তাঁর জন্য বিস্ময়ের খেলা। এই বয়সে পা ছুঁয়ে দেখা যায় পুকুরের জল, কিন্তু স্বপ্ন ছুঁতে হলে তাকিয়ে থাকতে হয় আকাশের দিকে। আর সেখানেই আলাদা বৈভব। যখন সমবয়সীরা বিকেলে কোচিংয়ের পরে ঝালমুড়ি-ফুচকা খেয়ে ঘরে ফেরে, তখন বৈভব মাঠের ঘাসে ঘাম ঝরিয়ে ফেরে একটুখানি মাটন কিংবা পিৎজা খাওয়ার স্বপ্ন ভুলে।
পছন্দের খাবার, আনন্দের কৈশোর – সব কিছুকে বলি দিয়ে সে বানিয়েছে নিজের শরীর, নিজের সংযম, আর ব্যাটিংয়ের ছন্দ। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল অভিষেকের প্রথম বলেই যখন শার্দূল ঠাকুরকে কাভারের ওপর দিয়ে ছয় মেরে তাক লাগিয়ে দেয় বৈভব, তখন ক্যামেরা কেবল তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল।
ক্যামেরার ওই টুৃকুই দেখা যায়। ক্যামেরার বাইরের জীবনটা কেউ দেখে না। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছিল বহু আগেই। প্রথমবার মায়ের রান্না করা মাটনের ঝোল সামনে আসতেই কোচ মানিশ ওঝা বলেছিলেন, ‘এই খাবার তোর জন্য নয়, তুই পছন্দ করবি শুধু ওই মাঠটাকে।’
কোচ ওঁঝা বলেন, ‘ও যখন মাটন খেত, তখন পাতিলে যা থাকত একদম শেষ করত। তাই দেখতে ছিল গোলগাল।’ সেই গোলগাল ছেলে এখন ব্যাট হাতে হয়ে উঠেছে ধারাল। তরতাজা শরীর, ফাস্ট বলের গতি আটকে যায় তাঁর ব্যাটে, চোখে তাঁর যুবরাজ সিংয়ের মতো আগুন।
মাঠে ব্যাট চলে আগুন হয়ে, আর ডায়েটে চলে নিয়ন্ত্রণের শাসন। কিছু পেতে হলে, কিছু ছাড় তো দিতেই হবে। মাটনের মত পিৎজাও ছেড়েছেন বৈভব। কোচ বলেন, ‘এ বয়সী ছেলেরা পিৎজা খুব খায়, কিন্তু ওকে খেতে দেওয়া হয় না।’
বৈভব স্বপ্ন দেখে লারার মতো ব্যাট চালানোর, যুবরাজের মতো ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে চায়। আইপিএলের দলের অষ্টম ম্যাচে অভিষেক হয়। আগের রাতেই কোচকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘ছক্কা মারার বল পেলেই মেরে দেব। থামব না।’ তাই সত্যি হল, প্রথম বলেই ছক্কা। যে কথা, সেই কাজ! শৈশব থেকেই খাবার টেবিলে সংযম দেখাতে পেরেছেন বলেই, বাইশ গজে তিনি হাত খুলে রান তুলতে জানেন।