গেল আসরের চ্যাম্পিয়ন দল, এবার শিরোপা তো দূরে থাক শীর্ষ চারের দৌড়েও নেই। এক বছরের মধ্যে কি এমন ঘটে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্সের? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে কলকাতার সমর্থকদের মনে। বদল তো নিশ্চয়ই ঘটেছে- নইলে তো আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বেহাল দশা হয় না।
প্রথমত কলকাতা নাইট রাইডার্স তাদের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারকে ছেড়ে দিয়েছে। মেগা নিলাম থেকে তাকে দলে নেওয়ার প্রয়াশও সেই অর্থে চোখে পড়েনি। চ্যাম্পিয়ন অধিনায়কের অভাবটা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে কলকাতা।
এমনকি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য লোকও তারা খুঁজে পায়নি। শেষ অবধি একপ্রকার বাধ্য হয়ে অভিজ্ঞতার কারণে আজিঙ্কা রাহানেকে দেওয়া হয় অধিনায়কের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন- তা তো দিনের আলোর মতই পরিষ্কার।
এছাড়াও স্থিতিশীল একটা ব্যাটিং অর্ডারের অভাবে দারুণভাবে ভুগেছে দলটি। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে ছিল না তেমন কোন প্রতিরোধ। ভেঙ্কেটেশ আইয়াররা ব্যর্থ হয়েছেন নিদারুণভাবে। অথচ নিলাম থেকে সর্বোচ্চ মূল্যে ভেঙ্কেটেশকেই দলে নিয়েছিল কলকাতা। সেই তিনি পারফরম করতে পারেননি প্রত্যাশামাফিক।
একই ঘটনা ঘটেছে রিঙ্কু সিংয়ের ক্ষেত্রেও। তাছাড়া ওপেনিং পজিশনেও বদল এনেছিল দলটি। সেখানেও গড়বড় হয়েছে। একমাত্র সুনীল নারাইন ছাড়া কেউই ছিলেন না থিতু। স্রেফ তিনিই যা একটু পারফরম করেছেন। তাছাড়া আঙকৃশ রাঘুবানশি, ভেঙ্কেটেশ আইয়াররা টপ অর্ডারে থেকে রান তুলেছিলেন গেল আসরে।
তাদেরকে যখন ব্যাটিং অর্ডারে খানিকটা নিচে নামানো হয়েছে চলতি আসরে- তখনই তাদের পারফরমেন্সের ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া নিলাম টেবিল থেকেও নিজেদের বোলিং আক্রমণকে শক্তিশালী করতে পারেনি কলকাতা। এসব কিছু মিলিয়ে বেশ এলোমেলো ছিল এবারের গোটা কলকাতা শিবির।
তবে তাদের ব্যর্থ হওয়ার পেছনে বিশাল বড় কারণ আন্দ্রে রাসেলকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করা। বল হাতে গেল আসরে রীতিমত একাই ম্যাচ ঘুরিয়েছেন রাসেল। ১৯ খানা উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেবার প্রায় ত্রিশ ওভার বোলিং করা রাসেল এবারের আসরে বল করেছেন স্রেফ ১৬ ওভার। অর্থাৎ তার বোলিং সক্ষমতার ঠিকঠাক ব্যবহার এবার করেনি কলকাতা নাইট রাইডার্স।
এমনকি তার ব্যাটিং আগ্রাসনের সর্বোচ্চটুকুও আদায় করতে পারেনি কলকাতা। স্বল্প বল হাতে থাকতে তাকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়েছে অধিকাংশ ম্যাচে। যতই হোক, বয়স তো হয়েছে- এখন আর আগের মত হ্যান্ড-আই কম্বিনেশন কাজ করে না। সময় লাগে বাইশ গজে থিতু হতে। সেই সুযোগটুকু পাননি আন্দ্রে রাসেল।
মোদ্দাকথা পরিকল্পনার ছকে পিছিয়ে থেকেই এবারের আইপিএল যাত্রা শুরু করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিজেদের দূর্বলতার বিপরীতে ভিন্ন কোন কার্যকর পরিকল্পনা নিয়েও হাজির হতে পারেনি। প্যানিক বাটনে প্রেস করে ভুলভাল সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তারা, যার কারণে চ্যাম্পিয়ন দলের এই দশা।