নারীর মন বোঝার চেয়েও সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিকল্পনা বোঝা কঠিন। টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক লিটন দাস, যার ওয়ানডে দলে আজকাল ঠিকঠাক জায়গা হচ্ছে না। আবার ওয়ানডে দলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ টি-টোয়েন্টি দলে ঠিক মানানসই নন, বিবেচিত হনও কম। এমনকি তিনি এই ফরম্যাটটা আর আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে খেলতে চান না বলেও গুঞ্জন আছে।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নামবে বাংলাদেশ। ভিন্ন ফরম্যাট হলেও আজকাল সাদা বলের পরিকল্পনা বিশ্বের সকল দেশের বোর্ড এক সাথেই করে। কিন্তু, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) হাঁটে এক কদম পেছনে। আর পেছনে হাঁটলে তো আর সাফল্য আসবে না।
আর হচ্ছেও তাই। বাংলাদেশ ৪৭৯ দিন হতে চলল কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি। টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাও একটা সিরিজ জেতা গিয়েছিল, ওয়ানডেতে তাও নেই। ৫০ ওভার ব্যাটিংই করতে পারছে না বাংলাদেশ।
অনেক আয়োজন করে দেশি পণ্যের জয়োগান করে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি আসার পর দলের উন্নতির চেয়ে অবনতি হয়েছে বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলেছে সালাহউদ্দিন ভাল কোচ, সেটা বিসিবি মেনে নিয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ হিসেবে সাফল্য পেতে কোচের যে তেমন কোনো ভূমিকা রাখার দরকার পরে না সেটা এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মত সত্য।
কোচ সালাহউদ্দীনকে না হয় ‘দেশি’ কোটায় ছাড় দেওয়া গেল, ফিল সিমন্সকে কি বলা যাবে? শেষ ওয়ানডের আগের দিনও তিনি মাঠে ছিলেন না। ডাক্তার দেখাতে লন্ডনে ছিলেন। অনলাইনে বসে কোচিং হয় না। অবশ্য, তিনি দলের সাথে অনুশীলনে থাকলেও তাঁর ভাবনার প্রভাব মাঠে কতটা থাকে সেটার জবাব নিশ্চয়ই তিনি নিজেও দিতে পারবেন না।
তরুণদের কোনো উন্নতি হচ্ছে না, যারা পারফরমার ছিলেন ব্যাট হাতে তাঁরাও যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন। স্যোশাল মিডিয়ার আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে দল নির্বাচন করা হচ্ছে, একাদশ গঠন করা হচ্ছে। জনপ্রিয় সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আর সেটা করতে গিয়েই বাংলাদেশ দল আজকাল জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। টেলিভিশন রাইটসে টাকা আসছে না, বড় দলের বিপক্ষেও বাংলাদেশের খেলা দেখাতে রাজি হচ্ছে না কোনো টেলিভিশন।
মিডল ওভারে রান করা যাচ্ছে না। প্রতিপক্ষের রান আটকানো যাচ্ছে না। বোলিংয়ে ধার নেই। ব্যাটিংয়ে এক্স ফ্যাক্টর নেই। তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলীরা যে ইন্টেন্ট নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, সেটা এখন অনুপস্থিত। বরং গা বাঁচিয়ে নিজেদের গড়টা সামলাতে ব্যস্ত সবাই। দলগত খেলা ক্রিকেটে এভাবে সাফল্য আনা যায় না।
একটা কাকতালীয় পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গেল ওয়ানডে সিরিজে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যর্থ হয়েছেন ‘মানিক জোড়’ কায়দায়। দু’জনেই একটা ডাকের সাথে করেছেন ৩৭ রান। শান্তর বলে ক্যাচ নিয়েছেন মিরাজ।
দুই বন্ধুর মধ্যে কি প্রচণ্ড টান, যে এ বাঁধন যাবে না ছিড়ে। শুধু ক্রিকেট মাঠে জয়ের সাথেই তাঁরা কোনো বাঁধন স্থাপন করতে পারছেন না। অন্য দিকে শ্রীলঙ্কা টানা আটটা সিরিজ জিতে নিল দেশের মাটিতে, কে বলবে ক’দিন আগে এই দলটাকে টপকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছিল বাংলাদেশ!