সনাথ জয়াসুরিয়া – আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া এক মাতারা হারিকেন। ওপেনিংয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের শেষ কথা তিনি। ইদানিং কোচিংয়ে এসে সৃষ্টি করেছেন নতুন বিস্ময়।
প্রায় ১৫ দিন ধরে এই কিংবদন্তির পেছনে ঘুরঘুর করে অবশেষে তাঁকে পাওয়া গেল। খেলা ৭১-এ বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হলেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ছাড়াও থাকল তাঁর সময়ের ক্রিকেট ও ছোট্ট একটু রাজনীতি।
– আপনি যখন খেলতেন, বিশেষ করে যখন ব্যাটিং করতেন, বাংলাদেশের অনেক ভক্ত আপনাকে অনুসরণ করত। এখনও করে।
সনাথ জয়াসুরিয়া: হ্যাঁ, আমার খেলার ধরণ ছিল সবসময়ই একটু আলাদা—আক্রমণাত্মক। সেটা হোক টেস্ট, ওয়ানডে বা অল্প কিছুটা টি-টোয়েন্টি। আমি সব ফরম্যাটেই স্বাভাবিকভাবেই খেলতাম। বাংলাদেশে থাকাকালীনও আমি আমার খেলার ধারা বদলাইনি। আমি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতি —তারা আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছে এবং আমার খেলা পছন্দ করেছে, সেটা আমি কখনো ভুলব না।
– বাংলাদেশে ক্লাব ক্রিকেট খেলার কোনো বিশেষ স্মৃতি আছে আপনার?
সনাথ জয়াসুরিয়া: হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আমি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলেছিলাম। দারুণ একটা ক্লাব ছিল সেটা। সেখানে আমার সময়টা উপভোগ করেছি। সমর্থকরাও দারুণ ছিল, তারা ক্লাবের জয়ে খুব আগ্রহী থাকত। সেই সময়গুলো খুবই ভালো কেটেছিল, ক্লাব ম্যাচেও প্রচুর দর্শক আসত।
– আপনি যখন শ্রীলঙ্কার দলের দায়িত্ব নেন, তখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা হয়নি, অথচ এখন তারা ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে চার নম্বরে। এটা সম্ভব হলো কীভাবে?
সনাথ জয়াসুরিয়া: এটা সম্ভব হয়েছে খেলোয়াড়দের কঠোর পরিশ্রমে। আমি কোচ হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি আত্মবিশ্বাসের ওপর। খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। আমি সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা অনুশীলনের পদ্ধতিও কিছুটা বদলেছি। ওদের প্রতিভা বরাবরই ছিল, শুধু ওদের বলা দরকার ছিল— তোমরা সেরা দল, তোমরা পারবে। আমি সেটাই করে গেছি। খেলোয়াড়রা এখন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখছে এবং স্বাভাবিক খেলা খেলছে। দল হিসেবেও তারা ভালোভাবে মিশে গেছে, যেটা একটা দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
– এটা তো নিশ্চয়ই আপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, তাই না?
সনাথ জয়াসুরিয়া: একদম তাই। কারণ আমার কোচিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমি খেলেছি, বিদেশি কোচদের অধীনে থেকেছি, কিন্তু নিজে কখনো কোচিং করিনি। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট আমাকে বিশ্বাস করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। সেই বিশ্বাস থেকেই আমি সাহস পেয়েছি এবং সেটা আমি খেলোয়াড়দের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছি। আমার সাপোর্ট স্টাফও খুব ভালো ছিল—ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, স্পিন কোচ—সবাই খুব কঠোর পরিশ্রম করেছে। ম্যানেজারসহ আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করেছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই দেশীয় কোচ, এবং সবাই খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
– বাংলাদেশেও এখন অনেক পরিবর্তন চলছে। আপনি রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন কিছুদিন—একই চিত্র বাংলাদেশেও আমরা দেখেছি।
সনাথ জয়াসুরিয়া: হ্যাঁ, আমি আগেও বলেছি—ওটা আমার বড় ভুল ছিল। আমি সেটা করা উচিত হয়নি। আমি শুধু নিজেকে নিয়ে বলছি, অন্য কারো নাম বলতে চাই না। আমি স্বীকার করি—চার বছর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া আমার বড় ভুল ছিল।
– বাংলাদেশ দল এখন একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আপনি কীভাবে দেখেন তাঁদের এই পুনর্গঠনের চেষ্টা?
সনাথ জয়াসুরিয়া: আমার বিশ্বাস—বাংলাদেশের সাবেক খেলোয়াড়েরা এখন নেতৃত্বে আছে, এবং তারা কঠোর পরিশ্রম করছে দলকে পুনর্গঠনের জন্য। প্রতিটি দেশই একটা সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। শ্রীলঙ্কাও গেছে, বাংলাদেশও যাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে, এবং আমি নিশ্চিত তারা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। শ্রীলঙ্কার মত বাংলাদেশ ক্রিকেটও এগিয়ে যাবে।
– আপনার সময় আপনি একজন বিপ্লবী ওপেনার ছিলেন। এখন খেলা অনেক বদলে গেছে। আজকের ক্রিকেট আপনি কীভাবে দেখেন? এবং আপনার চোখে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরবর্তী সুপারস্টার কে?
সনাথ জয়াসুরিয়া: এখনকার ক্রিকেট অনেক দ্রুতগতির। এখনকার ক্রিকেটাররা অনেক বেশি শট খেলে, অনেক বেশি ভার্সেটাইল। আমরা এত কিছু করতাম না। বাংলাদেশের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। আমি এককভাবে কারও নাম বলতে চাই না। সবাই কঠোর পরিশ্রম করছে এবং আমি নিশ্চিত—বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতে অনেক ভালো খেলোয়াড় উঠে আসবে। আমি একজন কোচ হিসেবে সেটাই প্রত্যাশা করি।