টেস্ট ক্রিকেটের আকাশে যখনই এসেছে শঙ্কার মেঘ, ঠিক তখনই মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল আলো। যে আলোর উৎস হয়েছে ২০০৫ সালের অ্যাশেজ কিংবা সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজ। টেস্টের আসল রোমাঞ্চ রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়েছে প্রতিবার। উজ্জীবিত হয়েছে দমে যাওয়া সেই আদি প্রেম।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ ব্যবধানে ড্র। হারেনি কেউ, জেতেনি কেউ- হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের জয়গান, জিতেছে ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাট। ম্যানচেস্টার টেস্টের শেষের দিকে ভারতের ফাইটব্যাক। লর্ডসে ইংল্যান্ডের ২২ রানের জয়। এরপর কেনিংটন ওভালে ভারতের অবিশ্বাস্য জয়।
এ যেন টেস্ট ক্রিকেটের পুনরুজ্জীবন প্রাপ্তি। ২৫ দিন ধরে লড়াইটা হয়েছে স্কিলের, লড়াইটা হয়েছে ধৈর্য্য আর পরিকল্পনার। কখনো শুভমান গিলের অটুট দৃঢ়তা কাটিয়েছে বিনোদনের জড়তা। কখনো আবার বেন স্টোকস বনে গেছেন ইংল্যান্ডের নায়ক।
ঋষাভ পান্ত, ক্রিস ওকস দলের প্রয়োজনে নিজের ক্যারিয়ারকে ফেলেছেন হুমকির মুখে। টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদার কাছে বাকি সবকিছুই তো ভীষণ ফিকে। বাইশ গজের স্নায়ুযুদ্ধ মাঠের বাইরেও ছড়িয়েছে উত্তাপ। বাকযুদ্ধেও নেই জয়-পরাজয়ের হিসাব।
রানের পর রান করেছেন শুভমান গিল, হ্যারি ব্রুকসরা। চর্মগোলক পরিণত হয়েছে গোলায়। মোহাম্মদ সিরাজ, জশ টাঙরা বনে গেছেন গ্রেনেডিয়ার। রোমান্টিক বৃষ্টিকেও দিনশেষে তাই মনে হয়েছে বেরসিক। বছর কুড়ি আগে এভাবেই তো টেস্ট ক্রিকেট পেয়েছিল পুনর্জাগরণ। ১৬ বছর বাদে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারে তো সেদিন টেস্ট ক্রিকেটের হয়েছিল নবজাগরণ।
সেবার ইংরেজ তরীর নাবিক হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটপ। অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার তো তারই হাত ধরে। শেন ওয়ার্ন ৪০ খানা উইকেট বাগিয়েও থেকে গেছেন পরাজিতদের দলে। শুধু কি তাই? কথার লড়াই জমে ক্ষীর। চোয়াল ফাঁটা রিকি পন্টিং রক্তের বদলা রক্ত দিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তাইতো হুট করেই শন টেইট নামক গতির ঝড় হাজির হয়েছিল বাইশ গজে।
২৫ দিনের লড়াই। ক্রিকেটীয় লড়াই, বাকযুদ্ধ, বাইশ গজে রক্তপাত- সমস্ত কিছু ঘটেছিল সেবার। আগ্রহ নেই, অবান্তর সময় অপচয়- এমন নেতিবাচকতার গালে কষে চপেটাঘাত দিয়েছিল ২০০৫ সালের অ্যাশেজ। সময়ের পরিবর্তনের যেন আরও একবার সেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চুপসে গেছে।
সফেদ জার্সির এই বনেদী লড়াই গ্রিক পুরানের সেই ফিনিক্স পাখি। যখনই মনে হবে একঘেয়েমি এক বিরক্তিকর লড়াই, তখনই রচিত হবে রেনেসাঁ। এই গোলকের কোন এক কোণায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে আবার চিৎকারে বলে উঠবে, টেস্ট ক্রিকেট দারুণ রোমাঞ্চকর।