গিল সেনাপতি নন, তিনি বরং ভারতের যুবরাজ

গিলের সামনে এখন স্রেফ একটাই পথ খোলা, সেনাপতির সরু গলি মাড়িয়ে যুবরাজ বনে যাওয়া। 

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই লেটার মার্ক। ব্যাটে রানের ফোয়ারা, হৃদয়জুড়ে অকৃত্রিম সাহসের অবারিত ধারা। শুভমান গিল বোঝালেন তিনি স্রেফ ব্যাটার নন, এক যোগ্য দলনেতা। অবিস্মরনীয় এক স্মৃতির এক অদম্য চরিত্র।

ইংল্যান্ডের মাটিতে সফরকারী অধিনায়ক হিসেবে ৭০০ বা তার বেশি রান করতে পারেনি কেউ। কত রথী-মহারথীদের চরণধূলি পড়েছে ক্রিকেটের জন্মস্থানে। প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে অমরত্ব লাভের সুযোগ দু’হাতে লুফে নিয়েছেন। ইংরেজ গ্রীষ্মের মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি লিখে গেলেন নিজস্ব ব্যাটিং কাব্য।

চার সেঞ্চুরিতে ৭৫৪ রানের এক মহাকাব্যিক যাত্রা। পরাজিত সেনাপতি নয়, তিনি বরং প্রতিপক্ষের রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে ছিনিয়ে নিলেন সমতা। ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করার স্বাদ কখনো কখনো জয়ের মতই হয়। এবারে অন্তত ভারত সেই স্বাদই করেছে আস্বাদন।

প্রথম টেস্টেই ব্যাকফুটে টিম ইন্ডিয়া। পাঁচ উইকেটের পরাজয়। এরপর সেনাপতি নিজ হাতে তুলে নিলেন তলোয়ার। উন্মুক্ত তরবারি হাতে তিনি করলেন তাণ্ডব নৃত্য। জোড়া সেঞ্চুরি, একটি আবার দ্বিশতক। ম্যাচ জিতল ভারত ৩৩৬ রানের পাহাড়সম ব্যবধানে। সেখান থেকেই শুরু এক বর্ণাঢ্য রুপকথা।

পরের টেস্টেও লড়াই করল ভারত। স্রেফ ২২ রানের এক পরাজয় হৃদয়ে ঘটিয়েছিল রক্তক্ষরণ। তবুও গিল দলকে গেঁথে রাখলেন এক সুতোয়। আর সেই অটুট বন্ধন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় দেখাল সিরিজ চতুর্থ টেস্টে। ইনিংস ব্যবধানের পরাজয় ঠেকিয়ে ম্যাচ হল ড্র।

শেষ ম্যাচে তাই জয় ছাড়া ভিন্ন কোন পথ খোলা নাই। তরুণ দল। ওই রবীন্দ্র জাদেজা ছাড়া বাকি সবাই নয়া সৈনিক। আস্থাভাজন জাসপ্রিত বুমরাহও ছিলেন অনুপস্থিত। তবুও শুভমান গিলের দল করেছে কিস্তিমাত। শেষ টেস্টে ছয় রানের জয়। কেনিংটন ওভালের পঞ্চম দিনে শুভমান গিল সবচেয়ে সরব। মোহাম্মদ সিরাজের অগ্নিঝড়া বোলিংয়ের প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন প্রতিটা ক্ষণ।

তবে বুদ্ধিমত্তা আর স্পোর্টসম্যানশীপেও বিচিত্র চারিত্রিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন শুভমান গিল। ওভালে যখন পঞ্চম দিনে পুরনো বল হাতে, চার ওভার শেষে চাইলেই বদলে ফেলা যেত তা। কিন্তু বদলাননি। নতুন বল যে ছুটবে দ্রুত, ব্যাটের আলতো ছোয়াতেও ছুঁয়ে ফেলবে বাউন্ডারি রেখা।

এরপর ক্রিস ওকস একহাতে মাঠে নামলেন। তাকে ভয় দেখিয়ে আউট করলেই হত কেল্লাফতে। তাও করলেন না শুভমান গিল। ওভারের শেষ বলে রান নিতে দিলেন, ফিল্ডারদের সীমানার কাছাকাছি পাঠিয়ে। তিনি বরং চ্যালেঞ্জ দিলেন গাস অ্যাটকিনসনকে, মাঠের ছকে অব্যক্ত ভঙিমায় বললেন,’আমার বোলাররা তোমাকেই আউট করবে, তুমি পারলে ম্যাচ জিতে দেখাও।’

এমন নির্ভীক এক সেনাপতিই তো খুঁজছিল ভারত। সহানুভূতি থাকবে, থাকবে সাহস। অন্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জিতবে না ম্যাচ। বরং দলকে শেখাবে, ছিনিয়ে নাও যা কিছু তোমার প্রয়োজন। গিলের সামনে এখন স্রেফ একটাই পথ খোলা, সেনাপতির সরু গলি মাড়িয়ে যুবরাজ বনে যাওয়া।

Share via
Copy link