মিথুন মানহাস, দ্য এক্সিডেন্টাল বিসিসিআই প্রেসিডেন্ড

বহুকাল ধরে চলা সংস্কৃতি ডিঙিয়ে হওয়া সভাপতিকে তাই 'অ্যাক্সিডেন্টাল প্রেসিডেন্ট' বলাই যায়।

‘আমি একবার ওয়াদা করার পর, আর নিজের কথাও শুনি না’- সালমান খানের সংলাপ। ভারতীয় সিনেমার বেশ চর্চিত বাক্য। সেই সংলাপের যোগ্য উদাহরণ মিথুন মানহাস। তিনি বনে গেছেন বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) নতুন সভাপতি। বিষয়টা আকস্মিকভাবেই হয়েছে বটে। তবে তিনিই হয়ত এই মুহূর্তের যোগ্য ব্যক্তি।

এক সময় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচিং করিয়েছেন। ছিলেন বাংলাদেশের যুবাদের ব্যাটিং পরামর্শ। কখনও জাতীয় দলে খেলেননি, খুব কাছাকাছি এসেছেন, কিংবা প্রতিভাবান হওয়ার পরও সুযোগ পাননি – এমন কথাও তাঁর ব্যাপারে বলা যায়।

বিসিসিআই সভাতে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মিথুন মানহাস। এরপরই তার এক সময়ের সতীর্থ, আকাশ চোপড়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, সাথে জানিয়েছেন দু’জনের এক দারুণ স্মৃতির কথা। একবার মানহাস ও আকাশ ট্রেনে করে কোথাও একটা যাচ্ছিলেন। বেশ দাম দিয়ে সেবার আকাশ এক জোড়া নতুন জুতো কিনেছিলেন। তার ভয় ছিল সেগুলো চুরি হয়ে যাবে। তাই ঘুমানোর আগে মানহাসকে বলেছিলেন জুতোগুলো দেখে রাখতে।

মানহাস পুরোটা সময় আকাশের জুতা জোড়া নজরে রাখতে নিজেই পরেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত মানহাসের জুতা সেসময় চুরি হয়ে যায়। এখানেই মূলত মানহাসের ওয়াদা পালনের দৃঢ় মানসিকতা ফুটে ওঠে। শুধু তাই নয়, গেল চার বছর ধরে তিনি জম্মু-কাশ্মির ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। এই সময়ে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সাতবার নক আউট পর্যায়ে পৌঁছেছিল জম্মু-কাশ্মিরের ক্রিকেট দল।

শুধু তাই নয়, এই সময়ে তারা রঞ্জি ট্রফির সবচেয়ে সফল দল, মুম্বাইকেও হারিয়েছে। যাদের কাছে আছে ৪৩টি রঞ্জি ট্রফির শিরোপা। মানহাসের আমলে দুলীপ ট্রফিতে নর্থ জোনের দলে জম্মু-কাশ্মিরের পাঁচ জন খেলোয়াড়ও সুযোগ পেয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে জম্মু-কাশ্মিরের ক্রিকেট ছিল প্রদীপের নিচে অন্ধকার হয়ে।

মানহাসের নেতৃত্বগুণে বদলে যেতে শুরু করেছে জম্মু-কাশ্মিরের ক্রিকেটের চিত্র। সংগঠক হিসেবে তিনি যে যোগ্য- সে প্রমাণ তো ইতোমধ্যেই রেখেছেন। তবুও তার নির্বাচিত হওয়া একটা অঘটন বটে। কেননা তিনি কখনোই খেলেননি ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এছাড়াও বিসিসিআই প্রধান হওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লি কেন্দ্রিক হতে হয়। সেটিও মানহাসের পক্ষে নেই।

তাই মানহাস হয়ত যোগ্য সংগঠক হিসেবেই বিসিসিআইয়ের প্রধান পদে বসেছেন। কিন্তু বহুকাল ধরে চলা সংস্কৃতি ডিঙিয়ে হওয়া সভাপতিকে তাই অ্যাক্সিডেন্টাল প্রেসিডেন্ট বলাই যায়। এত লো-প্রোফাইল কোন ক্রিকেটার এর আগে ভারতের বোর্ড সভাপতির মত উচু আসনে বসেননি, সেদিক থেকে মানহাস এখন ভারতের ক্রিকেটেরই এক নতুন মাইলফলক।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link