ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে দলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দিয়েছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। আর বোলারদের নৈপুণ্যে সেই পুঁজি নিয়েই বড় জয় পেয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ডের শেষ ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ২৭ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
টানা দুই ম্যাচ জয়ের পর আজ প্রথম হারের স্বাদ পেল প্রাইম ব্যাংক। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বৃথা গেলে মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। আজকের ম্যাচে এবারের আসরের প্রথম বোলার হিসাবে পাঁচ উইকেটে পেয়েছেন এই পেসার।
আগের দুই ম্যাচে ভালো করলেও আজ ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তামিম ইকবাল। সাকিব আল হাসান রানে ফেরার আভাস দিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তবে বল হাতে বেশ সফল ছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক। এছাড়া দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আবু জায়েদ চৌধুরি রাহী ও তাসকিন আহমেদ।
বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তাসকিন আহমেদকে তুলে মারতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এনামুল হক বিজয়। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ বিজয় আজ ফিরেছেন ৫ বলে ৩ রান করে।
বিজয়ের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল এবং রনি তালুকদারের ৩৫ রানের জুটিতে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে প্রাইম ব্যাংক। কিন্তু ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তামিম। ২০ বলে ২০ রান করে শুভাগত হোমের বলে ইয়াসিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
এরপর সাকিব আল হাসানের জোড়া আঘাতে রনি তালুকদার ও অলক কাপালী ফিরে গেলে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। সাকিবের গুড লেংথের ডেলিভারি এগিয়ে গিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান রনি। ১৯ বলে ১৯ করে রনি আউট হয়ে যাওয়ার পর একই ওভারের শেষ বলে শূন্য রানে ফিরে যান অলক কাপালী।
৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে প্রাইম ব্যাংক ঠিক তখনই আবার জোড়া ধাক্কায় তাদের ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন আবু জায়েদ চৌধুরি রাহি। আউট হয়ে যান নাহিদুল ইসলাম ও রাকিবুল হাসান। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি প্রাইম ব্যাংক। শেষের দিকে মোহাম্মদ মিথুনের ২৫ রান, মনির হোসেনের ১৭ রান ও নাঈম হাসানের ২০ রান শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে।
মোহামেডানের পক্ষে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন আবু জায়েদ চৌধুরি রাহী ও তাসকিন আহমেদ। এছাড়া সাকিব আল হাসান দুটি এবং শুভাগত হোম ও আবু হায়দার রনি একটি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমন। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ বলে দুজন যোগ করেন ৪০ রান। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকা মাহমুদুল নাহিদুল ইসলামের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি।
১৮ বলে ২৩ রান করে মাহমুদুল ফিরে গেলেও আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন দলের হাল ধরে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শামসুর রহমানকে নিয়ে যোগ করেন ৫৮ রান। এক প্রান্তে শামসুর রহমান বেশ রক্ষণাত্মক ব্যাট করলেও অন্য প্রান্তে আক্রমণাত্মক ব্যাট করেছেন পারভেজ হোসেন।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়েই এবারের আসরে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন পারভেজ হোসেন। তবে হাফসেঞ্চুরি করার পর উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি এই ওপেনার। ৩৮ বলে ৫০ রান করে অলক কাপালীর প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। তার ইনিংসে তিনটি চারের সাথে চারটি ছয়ের মার ছিল।
পারভেজের বিদায়ের পর উইকেটে এসে দ্রুত রান তুলতে থাকেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের সাথে তাল মিলিয়ে হাত খোলেন শামসুর রহমানও। এই দুজনের ব্যাটে মোহামেডান যখন বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই বল হাতে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
মুস্তাফিজের লেগ স্ট্যাম্পের বল স্কুপ করতে গিয়ে সাকিব বোল্ড হয়ে যাওয়ার পর একই ওভারে ফিরে যান শামসুর রহমান ও শুভাগত হোম। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২০ রান। শামসুর রহমান করেন ৩৪ বলে ৩৩ রান ও শুভাগত করেন ২ বলে ৪ চার।
নিজের তৃতীয় ওভারে তিন উইকেট শিকার করার পর নিজের ও ইনিংসের শেষ ওভারেও দুই উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। এই পেসারের শেষের তান্ডবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান। মুস্তাফিজুর পাঁচটি উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ১৫০/৮ (ওভার: ২০; মাহমুদুল- ২৩, পারভেজ- ৫০, শামসুর- ৩৩, সাকিব- ২০, শুভাগত- ৪, নাদিফ- ৫) (মুস্তাফিজুর- ৪-০-২২-৫, নাহিদুল- ৪-০-১৬-১)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ১২৩/২০ (ওভার: ১৯.৩; তামিম- ২০, বিজয়- ৩, রনি- ১৯, মিথুন- ২৫, কাপালী- ০, নাহিদ- ৫, রাকিবুল- ৬, নাঈম- ১৯*, মনির- ১৭) (সাকিব- ৪-০-১৬-২, জায়েদ- ৪-১-৩৩-৩, তাসকিন- ৩.৩-১-১৫-৩)
ফলাফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ২৭ রানে জয়ী।