তাদের লোগোর উপরে চারটি তারকা। অথচ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়নি তাদের। বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা দলকে ছাড়াই। এরপর থেকেই খোলনচালে বদলে ফেলা শুরু হয় ইতালিয়ান ফুটবল। একসময় ফুটবল দাপিয়ে বেড়ানো ইতালি কেন বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই রবার্তো ম্যানচিনিকে নিয়োগ দেয় ইতালি।
ম্যানচেস্টার সিটিকে লিগ জেতানো কোচ এসেই বদলে দিয়েছেন ইতালিকে। গত দুই বছর ধরে অপরাজিত তারা। গত ২৭ ম্যাচে হজম করেছে মাত্র ৬ গোল আর তার বদলে দিয়েছে ৭২ গোল। বদলে যাওয়া ইতালি কতদূর যেতে পারবে এবারের ইউরোতে?
গোলরক্ষক:
জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা (এসি মিলান), অ্যালেক্স মেরেত (নাপোলি), সালভাতোরে সিরিগু (তোরিনো)
ডিফেন্ডার:
জর্জিও কিয়েলিনি (জুভেন্টাস), লিওনার্দো বোনুচ্চি (জুভেন্টাস), ফ্রান্সেসকো আসের্বি(লাৎসিও), আলেসান্দ্রো বাস্তোনি (ইন্টার মিলান), রাফায়েল তোলয় (আতালান্তা) আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি (এএস রোমা), জিওভান্নি দি লরেঞ্জো (নাপোলি) এমারসন (চেলসি), লিওনার্দো স্পিনাৎসোলা (এএস রোমা)
মিডফিল্ডার:
জর্জিনিও (চেলসি), নিকোলো বারেল্লা (ইন্টার মিলান), মার্কো ভেরাত্তি (পিএসজি), মানুয়েল লোকাতেল্লি (সাসসুয়োলো), ব্রায়ান ক্রিস্তান্তে (এএস রোমা), স্তেফানো সেনসি (ইন্টার মিলান) লরেঞ্জো পেল্লেগ্রিনি (এএস রোমা)
ফরোয়ার্ড:
ফেদেরিকো চিয়েসা (জুভেন্টাস), লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে (নাপোলি), ফেদেরিকো বের্নার্দেসকি (জুভেন্টাস), ডোমেনিকো বেরার্দি (সাসসুয়োলো) আন্দ্রেয়া বেলোত্তি (তোরিনো), চিরো ইম্মোবিলে (লাৎসিও), জিয়াকোমো রাসপাদোরি (সাসসুয়োলো)
কোচ: রবের্তো মানচিনি
অধিনায়ক: জর্জিও কিয়েল্লিনি
- শক্তিমত্তা
ইতালি মানেই রক্ষণ। ফুটবল ইতিহাসের শুরু থেকেই ইতালির রক্ষণ মানেই নতুন কিছু। কাতেনাচ্চিও, জোনা মিস্তার আবিষ্কারক ইতালির ডিফেন্স বরাবরের মতই শক্ত। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে এখনও দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জুভেন্টাসের দুই তারকা জর্জিও কিয়েল্লিনি ও লিওনার্দো বোনুচ্চি।
এমনকি বুফন যাওয়ার পরপর তার জায়গাটা দ্রুতই বুঝে নিয়েছেন জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা। সেই সাথে তাদের ব্যাকআপও দারুণ। ক্যানসারকে পরাজিত করে ফেরত আসা আসেরবি, রাফায়েল তোলয়ও ব্যাকআপ হিসেবে দারুণ।
মাঝমাঠেও তাদের কাছে ভরপুর ট্যাক্টিক্যাল প্লেয়ার। আগে ইতালিয়ান ফুটবল মানেই যে ডিফেন্সিভ ফুটবলের কথা ভেসে আসতো, সেখানে ম্যানচিনি বদলে দিয়েছেন ইতালির চরিত্র। ইতালিভর্তি এখন মিডফিল্ড আর অ্যাটাকে ট্যাক্টিক্যালি সাউন্ড খেলোয়াড়। তার বেশিরভাগ গোলই আসে মিড আর উইং থেকে। বলতে গেলে ফাইনাল থার্ডে তাদের তারকারাই খেলা বদলে দেন।
তবে ইতালির সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তা হলো তাদের ডাগআউটে থাকা লোকটা। রবার্তো ম্যানচিনি বদলে দিয়েছেন ইতালির খেলা। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি ছিলেন বেশ কমপ্লেক্স খেলোয়াড়। কোচিং জীবনেও ইতালিকে ডিফেন্সিভ খেলা বদলে শিখিয়েছেন অ্যাটাকিং ফুটবল। যার ফলাফল হিসেবে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন গোলের।
- দুর্বলতা
২০১৮ সালে ম্যানচিনি ইতালির দায়িত্ব পেয়ে বলেছিলেন, আমি এই ইতালিকে বদলে দিবো। ইতালিকে সত্যি সত্যি বদলে দিয়েছেন ম্যানচিনি। গত দুই বছর ধরে অপরাজিত সে দল। ভিত্তোরিও পোজ্জোর ৩০-এর দশকে গড়া আনবিটেন রেকর্ড ভেঙ্গেছেন তিনি। এই দলে দূর্বলতা বলতে তাদের ওল্ড গার্ড।
নিজেদের দিনে বনুচ্চি-কিয়েলিনির মতন ডিফেন্ডার হয় না। নিজেদের দিনে চীনের দেয়ালের থেকে কম নয়। কিন্তু দুজনের বয়সটা বেড়ে হয়েছে ৩৪ ও ৩৬। তাদের বয়সটাই তাদের বোঝা হয়ে গিয়েছে।
বয়স বাড়লে এক্সপেরিয়ান্স বাড়ে বটে। কিন্তু স্পিডি স্ট্রাইকারদের বিপক্ষে তাদের হাইলাইন ডিফেন্স কতটা কাজে দিবে সেটা একটা প্রশ্ন। সেই সাথে লেফটব্যাক খেলা এমারসন অনেকদিন ধরেই নিয়মিত একাদশে খেলতে পারছেন না। ফলে ইউরোতে তিনি কতটা ফর্মে থাকবেন সেটাও একটা প্রশ্ন।
- সম্ভাব্য একাদশ
প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ: (বাংলাদেশ সময়)
তুরস্ক, ১২ জুন, ১টা
সুইজারল্যান্ড, ১৭ জুন, ১টা
ওয়েলস, ২০ জুন, ১০টা
বিশ্বকাপে যতটা সফল ইতালি, ইউরোতে ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ তারা। ৪ বিশ্বকাপের বদলে তাদের ইউরোপে অর্জন মাত্র ১টি ইউরো। তাও সেটা ১৯৬৮ সালে। অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়া ম্যানচিনি আর শক্তিশালি স্কোয়াড, দুয়ে মিলে দ্বিতীয় ইউরো জেতার স্বপ্ন দেখতেই পারে তাঁরা।