ইংল্যান্ডের ট্র্যাজিক হিরো হ্যারি ব্রুক!

পাঁচ রানে তিন উইকেট, এরপর ৫৬-তেই ছয়—চারপাশে শুধুই তখন হতাশার ছায়া। প্রতিপক্ষের আঘাতে চুরমার হতে বসা ইংলিশ রণতরী বাঁচাতে ছুটে এলেন এক নির্ভীক নাবিক—নামটা হ্যারি ব্রুক। সবাই যখন আত্মাহুতি দিয়েছে, তিনি রুখে দাঁড়ালেন একা—যেন ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা শেষ সৈনিক!

ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুই যেন এক দুঃস্বপ্ন! পাঁচ রানে তিন উইকেট, এরপর ৫৬-তেই ছয়—চারপাশে শুধুই তখন হতাশার ছায়া। প্রতিপক্ষের আঘাতে চুরমার হতে বসা ইংলিশ রণতরী বাঁচাতে ছুটে এলেন এক নির্ভীক নাবিক—নামটা হ্যারি ব্রুক। সবাই যখন আত্মাহুতি দিয়েছে, তিনি রুখে দাঁড়ালেন একা—যেন ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা শেষ সৈনিক!

ঘরের মাঠে টসে জিতে বোলিং বেছে নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। নিজেদের ডেরায় এক ভয়ঙ্কর ফাঁদ তৈরি করল কিউইরা। সেই পাতা ফাঁদেই পা দিয়ে বসল ইংলিশ ব্যাটিং অর্ডার। জো রুট, জস বাটলারদের মতো অভিজ্ঞ সেনানিরা লুটিয়ে পড়লেন। যেন বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ।

ব্যতিক্রম কেবল এক হ্যারি ব্রুক। যখন ক্রিজে এলেন, দলের স্কোরবোর্ডে পাঁচ রান—বিপরীতে হারাতে হয়েছে স্মিথ, ডাকেট এবং রুটদের। এরপরও উইকেটে দাঁড়িয়ে দেখলেন আরও তিন সতীর্থের ফিরে যাওয়া। ম্যাট হেনরি, জ্যাকারি ফোকসরা তখন রীতিমতো আগুনের গোলা ছুড়ে ঘায়েল করেছে সবাইকে।

তবে ব্রুক যেন ব্রত নিলেন—বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী। এক প্রান্তে লড়াই চালালেন, জেমি ওভারটনকে সঙ্গে নিয়ে গড়লেন ৮৭ রানের জুটি। ৪৬ রান করে জেমিও ফিরলেন, আর কেউ এক অঙ্কের ঘর পেরুতে পারল না। তবুও ব্রুক নিজের ব্যাটে বিশ্বাস ধরে রাখলেন।

ব্যক্তিগত খাতায় যখন ৮৬ রান, ব্রুক হাঁকালেন টানা তিন ছয়। তুলে নিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। পাঁচ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা অবস্থায় ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির এই কীর্তি গড়েছেন তিনি।

এরপরও তাঁর ব্যাট চলতে থাকল স্বমহিমায়। তিনি যে দলের সেনাপতি, প্রাণ থাকতে যে থামার জো নেই তাঁর! তবে শেষটাতে থামতে হলো। ১০১ বলে ১৩৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে শেষটা টানলেন। তবুও দলের সংগ্রহ দাঁড়াল মাত্র ২২৩। একাই তুলেছেন দলের ৬০.৫৩ শতাংশ রান—যা দেশের ওয়ানডে ইতিহাসে কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ অবদান!

তবে তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। এমন লড়াইয়ের পরও পরাজিত দলেই নাম থাকল ব্রুকের। ড্যারেল মিশেলের ৭৮ আর ব্রেসওয়েলের ৫১ রানের সুবাদে চার উইকেটের জয় পায় নিউজিল্যান্ড। এক ব্রাইডন কার্স বাদে কোনো বোলারই সুবিধা করে উঠতে পারেননি।

ম্যাচ শেষে তাই ব্রুক বনে গেলেন ট্রাজিক হিরো। ওমন ইনিংস খেলেও পরাজিতদের দলে নাম থাকাটা অন্তত শোভা পায় না। ইতিহাসের পাতায় পরাজিতদের কেউ মনে রাখে না ঠিকই, তবে ব্রুকের এই ইনিংসটাই তো ইতিহাস। ইতিহাসকে কি আর ভোলা যায়!

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link