মন খুশি উর্বশী সেই রাতে

সেই রাতের পর মেসির ক্যারিয়ারে আর কোনো আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ নেই ফুটবলেরও। খেলাটার ইতিহাসের সেরা বরপূত্র অবশেষে তাঁর কাঙ্খিত সিংহাসনে চড়ে বসেছেন। সব ভালো লাগছিল চন্দ্রিমায়, খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে!

আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছিল মন খুশি উর্বশী সেই রাতে। বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফি ছিল লিওনেল মেসির এই হাতে। বিশ্ব ফুটবলের শাপমুক্তির রাতে উদযাপনের রঙ ছিল কাতারের ফাল্গুনি হাওয়াতে!

কত না পাওয়ার আক্ষেপ। কত বিষাদ ভরা রাত, আর গত গ্লানির শেষটা লিখে দিয়েছিলেন ফুটবল ঈশ্বর, রোমাঞ্চকর এক পরিণতি দিয়ে। বিশ্বকাপের মুকুট উঠল আর্জেন্টিনার মাথায়। আর সেই সঙ্গে ফুটবলজীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হল লিওনেল মেসির—প্রথমবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেন তিনি। কত হাজার সমুদ্র পেড়িয়ে, অর্জনের পাহাড় টপকে, লক্ষ্য কোটি গ্লাণিকে আলিঙ্গন করে সেদিন প্রাণখুলে হেসেছিলেন লিওনেল মেসি।

২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল যেন ছিল একেবারে রোলার কোস্টার। প্রথমার্ধেই দুর্দান্ত ছন্দে ছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। ১৩ মিনিট পর ঝড়ের গতিতে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। প্রথমার্ধ জুড়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল পুরোপুরি নীল-সাদা ব্রিগেডের হাতে।

দ্বিতীয়ার্ধেও আর্জেন্টিনার দাপট বজায় থাকলেও ৮০ মিনিটের পর হঠাৎই বদলে যায় ছবিটা। মাত্র দেড় মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে ম্যাচে ফ্রান্সকে ফেরান কিলিয়ান এমবাপে—একটি পেনাল্টি থেকে, অন্যটি চোখধাঁধানো ভলিতে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-২।

অতিরিক্ত সময়েও নাটক থামেনি। ১০৮ মিনিটে ফের গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। কিন্তু ১১৮ মিনিটে আবার পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। ঠান্ডা মাথায় গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন কিলিয়া এমবাপ্পে। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিকের নজির গড়েন তিনি। অতিরিক্ত সময় শেষে ম্যাচ থামে ৩-৩ গোলে।

শেষ পর্যন্ত ভাগ্য নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে। প্রথম শটেই গোল করেন এমবাপে। আর্জেন্টিনার হয়ে সমতা ফেরান মেসি। এরপর ফ্রান্সের দুটি শট ব্যর্থ হলে সুযোগ নেয় আর্জেন্টিনা। মাথা ঠাণ্ডা রেখে একের পর এক গোল করে ১৯৮৬ সালের পর আবার বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসে লিওনেল স্কালোনির দল। পিটার ড্রুর উন্মাদ কণ্ঠ ঘোষণা করলেন, ‘আর্জেন্টিনা, চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড, অ্যাগেইন! অ্যাট লাস্ট!’

লুজাইল স্টেডিয়াম তখন আবেগের জোয়ারে ভাসছিল। মাঠে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন মেসি, ডি মারিয়া, এমি মার্টিনেজ আর সতীর্থরা। চোখের জল আর হাসি মিলেমিশে একাকার। গ্যালারিতে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উৎসব যেন থামার নামই নিচ্ছে না। ফুটবল ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়—মেসির বিশ্বজয়, আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্ত।

সেই রাতের পর মেসির ক্যারিয়ারে আর কোনো আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ নেই ফুটবলেরও। খেলাটার ইতিহাসের সেরা বরপূত্র অবশেষে তাঁর কাঙ্খিত সিংহাসনে চড়ে বসেছেন। সব ভালো লাগছিল চন্দ্রিমায়, খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link