‘পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়, প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়…।’ -ছেড়ে যাবার নিষ্ঠুর নিয়ম মেনেই এবারে কোপা আমেরিকা খেলতে নামবেন বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার। যাদের অনুপস্থিতি অনুভব করবে মাঠের প্রতিটি ঘাস, গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা। পরবর্তী কোপা আমেরিকা ২০২৪ সালে। অনেককেই সেই আসরে আর পাওয়া যাবে না।
কেউ কেউ আবার আছেন, যাদের বয়স একটু বেশি হলেও এখনও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন। শুধু খেলে যাওয়াই নয়, রীতিমত দলের সেরা খেলোয়াড়দের একজনও তাঁরাই। কোপা আমেরিকার এমন সব তারকাদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।
- লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
বার্সেলোনার হয়ে আরেকটি দারুণ মৌসুম কাটিয়ে মেসি যখন যোগ দিচ্ছেন আকাশি-সাদা শিবিরে তখন থেকেই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই পুরনো কথা। বার্সার মেসি নাকি আর্জেন্টিয়ায় এলে হারিয়ে যান। আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপা গেঁড়ো যে কাটাতেই পারছেন নাহ মেসি।
তিনবার কোপার শিরোপা স্বাদ হারাতে হয়েছে ফাইনালে গিয়ে। ৩৩ বছরে পদার্পণ করা মেসির এটাই শেষ কোপা। মেসি নিশ্চয় চাইবেন নিজের শেষ কোপাকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দিতে নইলে যে জিতে যাবে সমালোচকেরা। তিন বছর বাদেও অবশ্য তিনি চাইলে নামতে পারেন কোপা খেলতে।
- লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
মৌসুমের শুরুতে বাজে অবস্থায় থাকা লুইস সুয়ারেজ মৌসুম শেষ করেছেন দারুণভাবে। রিয়াল-বার্সার আধিপত্য ভেঙে অ্যাটলেটিকোকে লা লিগার শিরোপা জেতাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে।
উরুগুয়ের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা সুয়ারেজ কোপা জিতেছেন ২০১১ সালে। ৩৪ বছর বয়সী সুয়ারেজের এটাই শেষ কোপা আমেরিকা। সুয়ারেজ চাইবেন অবসরের আগে ট্রফি ক্যাবিনেটে আরেকটি কোপার মেডেল যোগ করতে।
- এডিনসন কাভানি (উরুগুয়ে)
এডিনসন কাভানির গল্পটাও তার সতীর্থ সুয়ারেজের মতো। মৌসুমের শুরুতে ছিলেন ফ্রি এজেন্ট, পরে শেষ মুহূর্তে ম্যানইউতে যোগ দিয়েছিলে। বাকিটা রূপকথা, দারুণ ফুটবল খেলে জয় করেছেন ইউনাইটেড ভক্তদের ভালোবাসা।
মৌসুমজুড়ে করেছেন ১০ গোল, এর মাঝে আছে ইউরোপা লিগের ফাইনালে করা গোলও। অস্কার তাবারেজ আর উরুগুয়ের সোনালি প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের এটাই শেষ কোপা আমেরিকা। সতীর্থ সুয়ারেজের মতো তিনিও চাইবেন বিদায়টা কোপা জিতেই রাঙিয়ে দিতে।
- অ্যালেক্সিস সানচেজ (চিলি)
২০১৮ সালে আর্সেনাল ছেড়ে ম্যানইউতে যোগ দেয়ার পর থেকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করেছেন সাবেক বার্সা তারকা অ্যালেক্সিস সানচেজ। তবে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে গত সিজনে, আন্তোনিও কন্তের ইন্টার মিলানে যোগ দিয়ে করেছেন সাত গোল এবং পাঁচ অ্যাসিস্ট।
চিলির হয়ে জিতেছেন ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা। অলৌকিক কিছু না ঘটলে ৩২ বছর বয়সী সানচেজের এটাই শেষ কোপা। সানচেজ চাইবেন কোপা জিতেই বিদায় নিতে।
- মার্সেলো মার্টিন্স (বলিভিয়া)
২৫ গোল করে বলিভিয়ার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা মার্সেলো মার্টিন্স। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ক্রুজেইরোতে খেলা এই ফুটবলার বলিভিয়াকে একাই সামনে এগিয়ে নিচ্ছেন, বাছাইপর্বে শেষ দুই ম্যাচে করেছেন তিন গোল।
১৯৬৩ সালে একমাত্র কোপা জেতা বলিভিয়া চাইবে তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারকে বিদায়বেলায় দারুণ কিছু উপহার দিতে। আর সেটা শিরোপা হলে আশ্চর্য হবেন নাহ কিন্তু!
- পাওলো গুয়েরেরো (পেরু)
ছোট দলের বড় তারকা পাওলো গুয়েরেরো। বায়ার্ন মিউনিখ-করিন্থিয়াসের মতো দলে খেলা এই পেরুভিয়ান তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা পার করে এসেছেন আগেই।
তবে ভুলে যাননি গোল করা, গোধূলি বেলায় এসেও সমান কার্যকরী তার বাঁ পা। এবারের টুর্নামেন্টে খেলা খেলোয়াড়দের মাঝে কোপায় সর্বোচ্চ গোল করা গুয়েরেরোর এটাই শেষ কোপা। নিজের শেষটাও গোল দিয়েই করতে চাইবেন এই পেরুভিয়ান।
- থিয়াগো সিলভা (ব্রাজিল)
মৌসুমের শুরুতে যখন চেলসিতে যোগ দিচ্ছিলেন থিয়াগো সিলভা, তখন অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন শেষ বয়সে এসে ইপিএলের গতিশীল ফুটবলের সাথে তাল মেলাতে পারবেন নাহ সিলভা। কিন্তু মৌসুম শেষ হতেই সেসব কথা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছেন, মিলিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন সিলভা নিজে।
চেলসির আনকোরা ডিফেন্সকে নেতৃত্ব দিয়ে এনে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। ৩৬ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ানের এটাই শেষ কোপা। সিলভা নিশ্চয়ই চাইবেন শেষটা শিরোপা জিতেই করতে।