সময়ের হিসাবে পার হয়ে গিয়েছে ২৯ বছর। টুর্নামেন্টে নাম লেখানোর কথাই ছিল না তাদের। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি হয়েছিল ডেনমার্কের। আর সেখান থেকেই ২৯ বছর আগে আজকের দিনে ইউরোপে রূপকথা লিখেছিল ডেনমার্ক। ওয়াইল্ড-কার্ড এন্ট্রি থেকে ইউরো জিতে নিয়েছিল তারা। আর সেই দিনেই এবারের ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করলো ডেনমার্ক। আর তার পুরোটাই ডোলবার্গ-কাব্য।
কাগজে কলমে এগিয়ে ছিল বেলরাই। ওয়েলসের সামনে প্রথমে দাড়াতেই পারছিল না ডেনমার্ক। কিন্তু নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারেন বেল। একের পর এক মিস করে নিজেদের সূবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন তারাই। এরপরে শুরু হয় ডোলবার্গ শো।
মাঠটা তার খুব পরিচিত। নেদারল্যান্ডের এই মাঠটায় কাটিয়েছেন নিজের কৌশর। নিজের জীবনের ৪টি বছর কাটিয়েছেন ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনায়। মাঠের প্রতিটা ঘাসকে খুব ভালোভাবে চেনা তার। আয়াক্সের জার্সিতে এই মাঠে তাণ্ডব চালিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের মত দলের বিপক্ষে। ডেনমার্কের জার্সিতে দুই বছর পর আবার ফিরেছেন এই মাঠে। চেনা মাঠ, চেনা পরিবেশ; জার্সিটা বদলালেও খেলাটা বদলাননি। এখনও সেই সমান প্রতাপে কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ। আর তারই দেখা মিলেছে ওয়েলসের বিপক্ষে।
ইউসুফ পৌলসেনের চোটের কারণে একাদশে সুযোগ মিলেছে ডোলবার্গের। নিজেদের সেরা প্লে-মেকার এরিকসেনের পর যখন নিজেদের সেরা স্ট্রাইকারকেও হারিয়েছিল তারা। ডোলবার্গ সেখানে ছিলেন ইমার্জেন্সি সলুশ্যন। আর সেই ইমার্জেন্সি সলুশ্যনই এনে দিয়েছে ডেনমার্কের প্রথম গোল। মিকেল ড্যামসগার্ডের কাছ থেকে পাওয়া পাস থেকে বক্সের বাইরে থেকে দূর্দান্ত এক শট করেন ক্যাসপার ডোলবার্গ। বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ এক শট পৌঁছে দেন জালে।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে আরেকবার বল জালে জড়ানোর সেরা সুযোগ পেয়েছিলেন ডোলবার্গ। কিন্তু তার শট থামিয়ে দেন ড্যানি ওয়ার্ড। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ আসতে না আসতেই সে সুযোগ আর ছাড়েননি। ওয়েলসের ডিফেন্ডার নিকো উইলিয়ামস মার্ক করতেই ভুলে গিয়েছিলেন তাকে। মার্টিন ব্র্যাথওয়েটের ক্রস থেকে সহজেই গোল করেন ডোলবার্গ। ১৩ বছর পর ইউরোতে হ্যাটট্রিকের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন ডোলবার্গ। কিন্তু নিজের দোষেই তা আর করে উঠতে পারেননি তিনি। ৬৯ মিনিটে পরবর্তী ম্যাচের কথা ভেবেই তাকে তুলে নিয়ে যান কোচ ক্যাস্পার উইলম্যান্ড।
ম্যাচের ১০ মিনিটে যখন ওয়েলস একটা কামব্যাকের আশা করছিল, তখনই ওয়েলসের যমদূত হয়ে আসেন ইওয়াকিম ম্যালে। বামপ্রান্ত থেকে বাড়ানো বল ফাঁকায় পেয়ে দীর্দান্ত এক গোল করেন ম্যালে। আর শেষ মিনিটে ওয়েলসের কফিনে শেষ প্যারেক ঠুঁকে দেন মার্টিন ব্রেইথওয়েট।
ডেনমার্কের শুরুটা হয়েছিল ট্র্যাজেডি দিয়ে। টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স হিসেবেই শুরু করেছিল তারা। অথচ প্রথম ম্যাচেই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়কে হারিয়ে একেবারেই খেই হারিয়ে ফেলে ডেনমার্ক। সেখান থেকে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের শোককে শক্তিতে পরিণত করেই খেলে চলেছে তারা। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তারা যখন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে তখনই রাশিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে নক-আউট রাউন্ডে কোয়ালিফাই করে তারা। ইউরো ইতিহাসে প্রথমবারের মতন প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও পরবর্তী রাউন্ডে কোয়ালিফাই করার রেকর্ড একমাত্র তাদেরই।
এমনকি একমাত্র স্ট্রাইকারকে হারানোর দরুণ ওয়েলসকে তাদের থেকে এগিয়ে রাখা হচ্ছিল সব জায়গাতে, সেখানেও পাশার দান উলটে গিয়েছে ডেনমার্ক। দেখা যাক নিজেরদের সেরা দুই তারকাকে ছাড়া টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্সরা কতদূর নিয়ে যেতে পারে তাদের?