ভারতের যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত পারফর্ম করছেন তাদের স্বপ্ন একদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে নামা। তবে সবার তো সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। অনেকেই আবার ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। তবে এরপর জাতীয় দলে সেই পারফরম্যান্স ধরে না রাখতে পারায় বাদ পড়েন! এবং আর কখনোই সুযোগ হয়না জাতীয় দলে খেলার।
ভারতে প্রতিবছর অনেক প্রতিভার জন্ম হয়। তাঁদের কেউ আদৌ কখনো সুযোগ পাননা। কেউ আবার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেন না লম্বা সময়ের জন্য। আজ তাঁদের কথা বলবো, যারা টি-টোয়েন্টি সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু লম্বা সময়ের দৌঁড়ে টিকতে পারেননি।
- সুদীপ ত্যাগি
উত্তর প্রদেশের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে পরিচিত সুদীপ ত্যাগি। ত্যাগি ২০০৭-০৮ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফিতে ২১.৬৩ এভারেজে ৪১ উইকেট শিকার করেন। তার ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স চেন্নাই সুপার কিংস কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ে৷ এরপর ২০০৯ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) চেন্নাইর হয়ে সুযোগ পান ত্যাগি।
দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সুযোগ পান তিনি। ২০০৯ এর ডিসেম্বরে মোহালিতে লংকানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। দুই ওভারে বিনা উইকেটে ২১ রান দেন তিনি! এরপর আর কখনোই জাতীয় দলে সুযোগ মেলেনি তাঁর।
- রাহুল শর্মা
পাঞ্জাবের লেগ স্পিনার রাহুল শর্মা স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিং করতে পারার জন্য বেশ দক্ষ ছিলেন। এবং অনিল কুম্বলের মতো পিচ থেকে এক্সট্রা বাউন্স আদায় করতে পারতেন। ২০১০ আইপিএলে ডেকান চার্জারসের হয়ে খেলেন তিনি। এবং পরবর্তী আসরে পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার হয়ে খেলে ১৪ উইকেট শিকার করেন। এমন পারফরম্যান্স তাঁকে টেনে নেয় জাতীয় দলে। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হয় রাহুল।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টি-টোয়েন্টিতেই দুর্দান্ত বোলিং করেন তিনি। ৭.৬৪ ইকোনমি রেটে তিন উইকেট শিকার করেন তিনি। ২০১২ সালে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হবার পর আর জাতীয় দলের মুখ দেখেননি তিনি।
- ঋষি ধাওয়ান
ভারত যখন ভালো অলরাউন্ডারের খোজ করছিলো তখন বেশ কয়েকজনের মধ্যে একজন ছিলেন ঋষি ধাওয়ান। ২০১৮-১৯ রঞ্জি ট্রফিতে তিনি ৮ ম্যাচে ৫১৯ রান করে সর্বোচ্চ রান স্কোরার হন। ২০১৪ সালে আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (বর্তমান পাঞ্জাব কিংস) হয়ে তিনি ১৩ উইকেট শিকার করেন।
ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএলের পারফরম্যান্সের কারণে জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডে থাকলেও কোনো ম্যাচে সুযোগ পাননি তিনি। তবে ২০১৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮ জুন টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন এই অলরাউন্ডার।
দূর্ভাগ্যবশত ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে মোটে এক উইকেট শিকার করেন তিনি। এরপর স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন, আর কখনো গায়ে জড়াতে পারেননি জাতীয় দলের জার্সি।
- নামান ওঝা
দারুন প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ওঝা কখনোই নিজেকে ফার্স্ট চয়েজ উইকেটরক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। এবং ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই তিনি বেঞ্চ গরম করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে মধ্যপ্রদেশের হয়ে প্রায় ৪০ এর বেশি গড়ে ১০ হাজার এর কাছাকাছি রান করেছেন।
২০১৬ সালে আইপিএল শিরোপাজয়ী সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১০ সালের ১২ জুন হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। দুই ম্যাচে মাত্র ১২ রান করে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
- পারভিন্দর আওয়ানা
দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা পারভিন্দর আওয়ানা তার গতি আর বোলিংয়ে মুভমেন্টের কারণে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৯১ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২০১২ সালে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি।
তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পান তিনি। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর পুনেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন তিনি। দুই ম্যাচে ৭১ রান দিয়ে কোনো উইকেট শিকার করতে পারেননি এই পেসার! এরপর দল থেকে বাদ পড়েন এবং আর কখনোই সুযোগ পাননি তিনি।