নেইমার নেই, ব্রাজিলেরও দেখা নেই

এক ম্যাচ হাতে রেখেই গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে ফেলেছিল ব্রাজিল। কোচ তিতে ছিলেন তাই নিশ্চিন্তে। আর নিশ্চিন্তে থাকার অর্থ একটাই, সাইডলাইনের শীক্ত ঝালাই করা। বেঞ্চে বসে থাকার খেলোয়াড়দের একটু ঝালিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেঞ্চের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আশানরূপ পারফর্মেন্স পাওয়া গেল না। ১-১ গোলে ড্র করেই মাঠ ছেড়েছে সেলেসাওরা।

বলতে গেলে পুরো দলের উপর সাঁড়াশি এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন টিটে। কলোম্বিয়ার বিপক্ষে শিরির একাদশের সাথে এই একাদশের মিওল মাত্র একজনে, মার্কুইনোস। এই ডিফেন্ডার বাদে পুরো একাদশই পাল্টে দিয়েছিলেন টিটে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ভরসা রেখেছিলেন লুকাস পাকেতা, এভারটন, ডগলাস লুইজ, রেনান লোদিদের উপরে।

বেঞ্চ থেকেই পুরো ম্যাচ উপভোগ করেছেন নেইমার, হেসুসরা। কিন্তু হতাশ করেছে ব্রাজিলের বেঞ্চ। তারকাবর্তি ব্রাজিলের ব্যাকআপেও ট্যালেন্টের অভাব নেই, কিন্তু মাঠে ফলাফল দিতে যেন পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতার ফসল হিসেবে খোয়াতে হয়েছে নিজেদের রেকর্ড।

টানা ১০ ম্যাচ জয়রথ চালানো ব্রাজিলকে থামতে হলো নিজেদের মাটিতে ইকুয়েডরের কাছে। অথচ ব্রাজিলের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো ইকুয়েডরের কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারার কথা না। কিন্তু ব্রাজিলের ট্যালেন্টেড স্কোয়াড যেভাবে মিসের মহড়া বসিয়েছিলেন ম্যাচহুড়ে, তাতে করে ইকুয়েডরের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়াটা নিশ্চিতই ছিল।

যদিও ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলই। দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এডার মিলিতাও। এভারটনের নেওয়া ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত এক হেডে ব্রাজিলকে লিড এনে দেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্ডার। ৩৭ মিনিটের এই গোল থেকে পাওয়া লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে ব্রাজিল।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতে না হতেই ম্যাচে ফেরে ইকুয়েডর। ৫৩ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান অ্যাঞ্জেল মিনা। জটলার মধ্য থেকে বল পেয়ে হেড করেন এনার ভ্যালেন্সিয়া। আনমার্কড মিনা সমতায় ফেরান দলকে। গোলের পরপরই পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলে ব্রাজিল। ডিফেন্স সামলাতেই হিমসিম খাচ্ছিল ব্রাজিক। অগত্যা দল সামলাতে ক্যাসেমিরোকে নামাতে বাধ্য হন তিতে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে তার আগমণের পর ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সে স্বস্তি ফিরে। কিন্তু তাতেও সমাধান হয়নি।

আক্রমণভাগ বেশ ভালোভাবে ঝালাই করতে চেয়েছিলেন টিটে। যে কারণে গোলের দেখা না পেলেও নেইমার-হেসুসের শরণাপন্ন হননি তিনি। বরং এভারটন, ভিনিসিয়াস, রিচার্ডলিসনের উপর ভরসা রেখেছিলেন। কোচের নাম তো রাখতেই পারেননি তারা, বরং দলকে হয় বঞ্চিত করেছেন।

৬ মিনিটে ভিনিসিয়াসের মিস দেখে তিতে নিজের মাথার চুল ছেড়া ভাকি রেখেছিলেন শুধু, পুরো ম্যাচে আক্রমণভাগের ব্যর্থতাই কাল হয়েছে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নসদের জন্য। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলেই সন্তুষ্ট থেকে মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকে।

এই ম্যাচ দিয়ে যেন নেইমারবিহীন ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকের দৈনদশা ফুটে উঠল আরেকবার। ম্যাচে কার্যত কোনো আক্রমণই ফিনিশ করতে পারেনি ভ্রাজিল, গোলটাও এসেছে ডিফেন্ডারের কাছ থেকে। নেইমার-জেসুস থাকলে তাদের ভাবতে হয় না বটে, কিন্তু তাঁদের ছাড়া দলের সমাধান দ্রুত বের করতে হবে কোচ তিতেকে।

শুধু তাই নয়, গোল হজম করার পর থেকে ক্যাসেমিরো নামার আগ পর্যন্ত দিশেহারা ছিল ব্রাজিলের ডিফেন্স। এর সমাধান বের করতে না পারলেও বিশ্বকাপ ফসকাতে সময় লাগবে না। বলা বাহুল্য, শেষ দুই বিশ্বকাপ হারার পেছনে এদের অনুপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বড়।

অন্যদিকে ম্যাচ থেকে পাওয়া এক পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে দিয়েছে ইকুয়েডর। একই সময়ে গ্রুপের অন্য ম্যাচে ভেনেজুয়েলা পেরুর কাছে হেরে গেছে ১–০ গোলে। এতে করে ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ  ‘বি’ থেকে বিদায় নিয়েছে ভেনেজুয়েলা। তিন ড্রতে ৩ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে থেকে ইকুয়েডর পৌছে গিয়েছে কোয়ার্টারে। গ্রুপ ‘এ’-র শীর্ষ দলের মুখোমুখি হবে তারা।

এই ম্যাচের আগে টানা ১০ ম্যাচ শুধু জয়ের দেখাই পেয়ে গিয়েছে ব্রাজিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরেছিল তারা। দুই বছর ধরে অপরাজিত থাকার রেকর্ড এখনও টিকে আছে বৈকি, কিন্তু টানা জয়ের রেকর্ডটা খুঁইয়ে ফেললেন টিটে। দ্রুত নেইমার-ক্যাসেমিরোর অভাব পূরণ না করতে পারলে এই রেকর্ডও বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন না তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link