বঞ্চিতদের ভাগ্যান্বেষণের লড়াই

ইউরোকে বলা হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ব্যতীত বিশ্বকাপ। সত্যিই তাই, লাতিনের দুই পরাশক্তি ছাড়া বিশ্বকাপের চেয়ে কোনো অংশে কমতি নেই ইউরোর। জর্জ বেস্ট, ইউসেবিও, প্লাতিনি, মালদিনি, ব্যাজিও, বালাক, জাভি, ইনিয়েস্তার মতো ফুটবলারদের পদধূলিতে অলংকৃত হয়েছে ইউরো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হচ্ছে ইউরো।

সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পেনের সেই দলটা ছাড়া আর কোনো দলই জিততে পারেনি টানা দুই শিরোপা। এমনকি গেল দশ আসরে শিরোপা জিতেছে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন দল। এবারের ফাইনালে ফুটবলের তীর্থভূমি খ্যাত ওয়েম্বলিতে মুখোমুখি হবে ইতালি আর ইংল্যান্ড। বিশ্ব ফুটবলে কুলীন দল হলেও ইউরোপীয়ান শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে দুই দলই বাকিদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে। ইতালি তবু ১৯৬৮ সালে একবার শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল কিন্তু ইংল্যান্ড ফাইনালেই উঠলো নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো।

গতবারের ইউরো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফ্রান্সে। সেবার অবশ্য ইতালি-ইংল্যান্ডের বর্তমান দুই কোচের কেউই ছিলেন না। ইতালি তবু সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পেরেছিল, ইংল্যান্ডের বিদায়ঘন্টা বেজে গিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডেই। আইসল্যান্ডের রূপকথার যাত্রা দীর্ঘায়িত হয়েছিল থ্রি লায়ন্সদের ২-১ গোলে হারিয়েই। অন্যদিকে ইতালি বাদ পড়েছিল কোয়ার্টারে জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হেরে।

২০১২ ইউরোতে অবশ্য ভালোই খেলেছিল ইতালি। ফাইনালে উঠার পথে হারিয়েছিল আগামীকাল মুখোমুখি হতে যাওয়া ইংল্যান্ডকেও। কোয়ার্টার ফাইনালে জিয়ানলুইজি বুফনের বীরত্বে সেবার টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে ৪-২ গোলে হারায় আজ্জুরিরা।

যদিও ফাইনালে স্পেনের কাছে লজ্জার মুখে পড়তে হয় তাদের, বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি বালোতেল্লিরা স্প্যানিশ আর্মাডার সামনে। সেবারের ফাইনালকে গণ্য করা হয় ইতিহাসের অন্যতম ম্যাড়মেড়ে ফাইনাল হিসেবে, ইতালিকে ৪-০ গোলে রীতিমত দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল স্প্যানিশরা।

১৯৬৮ ইউরোতে ইতালি যে দেখা পেয়েছিল তাদের ইতিহাসের প্রথম এবং এখনো পর্যন্ত একমাত্র মহাদেশীয় শিরোপার, সেখানেও রয়েছে ভাগ্যের ছোঁয়া। সেবার ইতালির পাশাপাশি ইউরো খেলেছিলই কেবল তিন দল; ইংল্যান্ড, যুগোস্লোভাকিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। ইউরোপের চিরায়ত শক্তিশালী দল জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কেউই খেলেনি সেবার।

খেলার মাঠেও আজ্জুরিরা পেয়েছিল ভাগ্যের ছোঁয়া, সেমিফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তারা ম্যাচ জিতে কয়েন টসের মাধ্যমে। না না, চোখ কচলে উঠবেন না কিংবা চিমটি কাটারও দরকার নেই, ভুল পড়েননি। টাইব্রেকারের প্রচলন হয়নি তখনো, তাদের ম্যাচটি ড্র হলে রেফারি দুই দলের অধিনায়ককে ডেকে কয়েন টসের প্রস্তাব দেন। ভাগ্যিস অধিনায়ক ফ্যাসেত্তি হেড কল করেছিলেন, নইলে তো সবেধন নীলমণি একমাত্র ইউরোর বড়াইও করতে পারতেন না আজ্জুরিরা। অন্যদিকে ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠেতে পারেনি সেবারো।

ইতালি কিংবা ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলা মহাতারকার শেষ নেই। নীল জার্সিতে মালদিনি, নেস্তা, ক্যানাভারো, ব্যাজিও, পিরলো, বুফনের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের সাদা জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন শিয়েরার, ববি মুর, ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড, রুনিরা। কিন্তু ইউরোর ট্রফি ছোঁয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাদের কারোরই। ক্যারিয়ারে ইউরো তাদের জন্য হয়ে রয়েছে এক আক্ষেপের নাম।

ইউরোতে সবচেয়ে সফল দল জার্মানি আর স্পেন। দুই দলই জিতেছে তিনবার করে। এছাড়াও ফ্রান্স জিতেছে দুবার। এবারের ইউরো ছিল নানা অঘটনে ভরা। সে কারণেই কিনা এক মাসের এই দীর্ঘ লড়াই শেষে একে একে বাদ পড়ে গেছে ইউরোর সব কুলীন সদস্যরা। অন্যদিকে টিকে গেছে ইউরোর ব্যর্থ দুই সন্তান। সোমবারের লড়াইয়ের পর নির্ধারিত হবে ব্যর্থতার পর্ব শেষে জয়ের আনন্দে মাতবেন কারা আর কাদেরই বা ব্যর্থতার পাল্লা বাড়বে আরো চার বছরের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link