১৯৯৬ বনাম ২০০৩: বিশ্বকাপ তর্ক

এমনিতে টুইটার খুব একটা দেখা হয় না। তবে কাল টুইটারে একজন ঘোষিত সৌরভ গাঙ্গুুলি বিদ্বেষীর টুইট দেখে চমকে উঠলাম। টুইট টা কি সেটা বলার আগে একবার বলেনি ভদ্রলোক কে? ভদ্রলোক একটি বহুল প্রচলিত ক্রিকেট ওয়েবসাইটে পরিসংখ্যান ভিত্তিক আর্টিকল লিখে থাকেন।

তা তিনি বলছেন, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের সেমিফাইনালে ওঠা নাকি ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের ফাইনালে ওঠার চেয়েও অনেক বড়ো কৃতিত্ব। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারত সেমিফাইনালে লজ্জাজনক হেরে বেরিয়ে যায়, আর ২০০৩ বিশ্বকাপে ফাইনালে।

এবার ১৯৯৬ বিশ্বকাপে যা ফরম্যাট ছিল, এবং সেই সময়ে প্রথম আটটি দল ছাড়া, বাকি দল গুলোর যা হাল, তাতে এই প্রথম আটটি দলের কোয়ার্টার ফাইনাল যাওয়া আটকানো সম্ভবই না। কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের গ্ৰুপে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে ছিল। এই পাঁচ দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দল পরবর্তী পর্বে যাবে। এবং জিম্বাবুয়ে তখন যথেষ্ট শক্তিশালী। বিশেষত নিজেদের দেশে।

এরপর ভারতের জয় বা হার গুলো যদি দেখি, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের একমাত্র দলগত জয় বলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শচীনের অনবদ্য ৯০ এর পরেও ভারত হেরে যায়। কারণ? মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা। এই একই কারণে (এবং অবশ্যই পিচ কিছুটা দোষি) ইডেনেও সেমিফাইনালে ভারত হারে। খুব খুঁটিয়ে যদি আমরা শচীন টেন্ডুলকারেরই ২০০৩ বিশ্বকাপ এর সেরা পারফরম্যান্স গুলো দেখি, তাহলে দেখা যাবে যে একটি ম্যাচও একা শচীন জেতাননি।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই ৯৮ সত্ত্বেও ভারত হারতে পারতো রাহুল দ্রাবিড় ও যুবরাজ সিংয়ের জুটি না তৈরি হলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সচিন ৫০ করার পরেও হারতে পারতো। আবারো দ্রাবিড় ৭২ বলে ৬২ বা যুবরাজের শেষ দিকে ঝোড়ো ব্যাটিং না থাকলে। এই দুটি না থাকলে ২৫০ হয় না। সুপার সিক্সে তো সচিন যথেষ্ট ম্রিয়মান ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জেতান দ্রাবিড় ও মোহাম্মদ কাইফ।

কেনিয়ার বিরুদ্ধে সৌরভ ও যুবি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রত্যেকেই ভালো ব্যাট ও বল করেন। একজন বা দুজনের ব্যক্তিগত দক্ষতায় ২০০৩ বিশ্বকাপে জয়ের সংখ্যা শূন্য। সেখানে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে সিধুর ৯৭ সত্ত্বেও ভারত হেরে যেতে পারতো, জাদেজার ওই ৪৫ না থাকলে। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সিধুর ৯৭ এর চেয়েও জাদেজার ৪৫ ওই ম্যাচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, ওই ইনিংসটি ২৬০ এবং ২৮৭’র মধ্যে তফাৎ গড়ে দেয়। এবং স্কোর ২৬০ হলে সম্ভবত পাকিস্তান একটু হলেও এগিয়ে থাকে। তাছাড়া সেই ম্যাচে আকরাম ছিলেন না। তবুও এই জয় কে বেনিফিট অফ ডাউট দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ বাদে মাত্র এই একটা দলগত জয়। এছাড়া বোলিংয়ের কথা তো বলছিই না। ২০০৩ বিশ্বকাপে তরুণ বোলিং নিয়েও ভারত দারুন খেলে।

আর তাছাড়া চেনা ও অচেনা পরিবেশের তফাৎ ছেড়েই দিচ্ছি। তা যিনি সৌরভ বিদ্বেষী, তিনি সৌরভ যে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের চেয়েও খারাপ ব্যাটসম্যান, এটা প্রমান করেই ছাড়তে পারেন। কিন্তু নিছক ক্রিকেটীয় বোধ থেকে বোধহয় ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাওয়ার চেয়ে কিঞ্চিৎ এগিয়ে থাকবে। আপনারা কি বলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link