রাজস্থান রয়্যালসের দেওয়া ১৮৬ রান তাড়া করতে নেমে শেষ দুই ওভারে পাঞ্জাব কিংসের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮ রান। তাদের হাতে ছিল ৮ উইকেট। ১৯ তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান ৪ রান দিলে শেষ ওভারে প্রয়োজন দাঁড়ায় ৬ বলে মাত্র ৪ রানের। অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ ওভারের এই সহজ সমীকরণ মেলাতে না পেরে ২ রানে হেরেছে পাঞ্জাব।
অবিশ্বাস্য এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে উঠে এসে প্লে অফের দৌড়ে টিকে রইলো রাজস্থান। আর প্রায় জেতা ম্যাচে হেরে প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল পাঞ্জাব কিংসে। আজ হেরে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম স্থানে নেমে গেছে লোকেশ রাহুলের দল।
তবে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ১৮৬ রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল পাঞ্জাব। উদ্বোধনী জুটিতে ৭১ বলে ১২০ রান যোগ করেন দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
১২তম ওভারের শেষ বলে চেতন সাকারিয়াকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় কার্তিক তিয়াগীর হাতে রাহুল ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি। ৩৩ বলে ৪৯ রান আসে পাঞ্জাবের অধিনায়কের ব্যাট থেকে। তবে এই ইনিংস খেলার পথে তিন বার জীবন ফিরে পেয়েছিলেন রাহুল।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে চেতন সাকারিয়ার বলে রাহুলের ক্যাচ ছাড়েন এভিন লুইস, পঞ্চম ওভারে ক্রিস মরিসের বলে ক্যাচ ছাড়েন রায়ান পরাগ ও ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ ছাড়েন চেতন সাকারিয়া।
১২০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পরের ওভারেই ফিরে যান আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল। রাহুল তেওয়াতিয়ার প্রথম শিকারে পরিণত হয়ে এই ওপেনার ফিরে যান ৪৩ বলে ৬৭ রান করে। এরপর নিকোলাস পুরান ও এডেন মার্করামের ৫৭ রানের জুটিতে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে পাঞ্জাব।
জয় থেকে ৩ রান দূরে থাকতে ২২ বলে ৩২ রান করে আউট হয়ে যান পুরান। এরপর শেষের সমীকরণ মেলাতে না পেরে ২ রানে হেরে যায় পাঞ্জাব। পুরান করেন ২২ বলে ৩২ রান এবং মার্করাম অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ২৬ রান করে। রাজস্থানের হয়ে দুটি উইকেট শিকার করেছেন কার্তিক তেয়াগী। আর একটি করে উইকেট শিকার করেছেন রাহুল তেওয়াতিয়া, চেতন সাকারিয়া।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা রাজস্থান রয়্যালসকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার এভিন লুইস ও যশস্বী জ্যাসওয়াল। উদ্বোধনী জুটিতে দু’জন সংগ্রহ করেন ৫৪ রান। দারুণ খেলতে থাকা লুইস আর্শদীপ সিংকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। লুইসের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ৩৬ রান।
এই জুটি ভাঙার পর উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সাঞ্জু স্যামসন। পরের ওভারে কিশান পোরেলের বাউন্সার কাট করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ৫ বলে ৪ রান করে বিদায় নেন রাজস্থানের অধিনায়ক। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও থেমে যায়নি রাজস্থানের রানের গতি। লিয়াম লিভিংস্টোনকে সাথে নিয়ে
দ্রুত রান তুলতে থাকেন জ্যাসওয়াল।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২৮ বলে ৪৮ রান যোগ করেন দু’জন। ১৭ বলে ২৫ রান করে লিভিংস্টোন ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। ১১৬ রানে তিন উইকেট হারানোর পর উইকেটে এসেই ঝড় তোলেন মহিপাল লোমরর। ১৭ তম ওভারে ফিরে যাওয়ার আগে মাত্র ১৭ বলে ৪৩ রান করেন তিনি।
তবে এর আগেই ফিরে যান জ্যাসওয়াল এবং রায়ান পরাগ। ৩৬ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৯ রান আসে জ্যাসওয়ালের ব্যাট থেকে আর ৫ বলে ৪ রান করেন পরাগ। ১৬৯ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর শেষের দিকে আর ঝড় তুলতে পারেনি রাজস্থান। শেষের তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান সংগ্রহ করা রাজস্থান ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে সংগ্রহ করে ১৮৫ রান।
শেষের দিকে ৬ বলে ৭ রান করেন চেতন সাকারিয়া ও ক্রিস মরিস করেন ৫ বলে ৫ রান। পাঞ্জাব কিংসের বোলারদের ভিতর চারটি উইকেট শিকার করেন আর্শদীপ সিং। এছাড়া মোহাম্মদ সামি তিনটি ও একটি করে উইকেট শিকার করেন হরপ্রীত ব্রার ও কিশান পোরেল।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজস্থান রয়্যালস: ১৮৫/১০ (ওভার: লুইস- ৩৬, জ্যাসওয়াল- ৪৯, স্যামসন- ৪, লিভিংস্টোন- ২৫, লোমরর- ৪৩, পরাগ- ৪, রাহুল-২, মরিস- ৫) (সামি- ৪-০-২১-৩, সিং- ৪-০-৩২-৫)
পাঞ্জাব কিংস: ১৮৩/৪ (ওভার: ২০; রাহুল- ৪৯, আগারওয়াল- ৬৭, মার্করাম- ২৬*,পুরান- ৩২) (রাহুল- ৩-০-২৩-১, সাকারিয়া- ৩-০-৩১-১, কার্তিক- ৪-০-২৯-২)
ফলাফল: রাজস্থান রয়্যালস ২ রানে জয়ী।