টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন বলে কী না করেছেন তিনি!
টেস্টের মায়ায় পড়ে ছেড়ে গিয়েছিলেন নিজের দেশও। কেননা তখনও আয়ারল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায়নি। ফলে পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্রিকেটের আদি ভূমি ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের হয়ে একটা বিশ্বকাপ খেললেও টেস্ট ক্রিকেটটা খেলা হয় না হিসাবের মারপ্যাঁচে।
এই মায়ার জ্বালে আঁটকে না গেলে হয়তো ইতিহাসের সেরা আইরিশ ক্রিকেটারের তকমা পেতে পারতেন। তবে ক্রিকেট নিয়তি তাঁর মাথায় হাত রেখেছিলেন একেবারে শেষ সময়ে। সেই জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের হয়েই একটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন এড জয়েস।
আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত সাহিত্যিক জেমস জয়েস। আমাদের এড জয়েসের বাবারও ঠিক একই নাম- জেমস জয়েস। যদিও এটা অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। তবে আসল কথা হচ্ছে এড জয়েসের বাবা জেমস জয়েসের সাথে সাহিত্যিক জেমস জয়েসের আদতে কোন সম্পর্কই নেই। জয়েস পরিবারকে আলোকিত করে ১৯৭৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে আসেন এড জয়েস।
নয় ভাই বোনের বিশাল পরিবার জয়েসদের। তাঁদের বেড়ে ওঠা আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। এই পরিবারটা একটা সময় আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হয়ে ওঠে। এর বীজটা মূলত গেঁথে ছিলেন এড জয়েসের মা।
তিনি নিজে জড়িত ছিলেন ক্রিকেটের সাথে। কাজ করেছেন অফিশিয়াল স্কোরার হিসেবে। এরপর জয়েসের দুই ভাই ও দুই বোনও খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। এক সময় তাঁর ভাইয়ের মুখোমুখি হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন এড জয়েস।
মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ নাম ডাক হয়েছিল জয়েসের। ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি আন অফিশিয়াল ওয়ানডে ম্যাচে খেলার ডাক পান তিনি। সেখানে অ্যালান ডোনাল্ড, শন পলকদের মত গ্রেটদের বিপক্ষে লড়েন জয়েস। ক্রিকেটের একটা দীক্ষা তিনি সেখানে পেয়েছিলেন নিশ্চয়ই।
১৯৯৯ সালে তিনি নজরে পড়েন কাউন্টি দল মিডলসেক্সের। এরপর আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। ২০০২ থেকে ২০০৬ সালে টানা পাঁচ বছর তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক হাজারের বেশি রান করে গেছেন।
এছাড়া আয়ারল্যান্ডের হয়ে আইসিসি ট্রফিতেও করেছেন রান। সেই সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেট খেলার। তখন যেহেতু আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ ছিল না, ফলে ইংল্যান্ডের হয়েই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন এড জয়েস।
সেই সুযোগও আসে জয়েসের সামনে। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার ছাড়পত্রও পান। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকটা হয় পরের বছর। সেটাও আবার নিজের জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই।
আবার সেই ম্যাচেই আয়ারল্যান্ডের হয়ে অভিষিক্ত হয়েছিলেন এড জয়েসের ভাই ডম জয়েস। ২০০৬ সালে নিজের অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন মাত্র ১০ রান। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপ দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
ওদিকে তাঁর স্বপ্নের টেস্ট ক্রিকেটের দুয়ারও খুলতে থাকে। ২০০৬-০৭ অ্যাশেজ সিরিজের স্কোয়াডেও জায়গা করে নেন তিনি। তবে সেই সিরিজের একটা ম্যাচেও একাদশে ছিলেন না। ফলে টেস্টের অপেক্ষাটা বাড়তে থাকে জয়েসের। একটা সময় ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজের জায়গা পাকা করতে ব্যর্থ হন। ওদিকে টেস্ট দলেও আর ডাক পাচ্ছিলেন না ইংল্যান্ডের হয়ে।
২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চার বছর কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই খেলতে পারেননি তিনি। পরে শেষ পর্যন্ত নিজ দেশে ফিরে আসেন জয়েস। আইসিসি বিশেষ অনুমতিতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পান। আইরিশদের হয়ে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপও খেলেছিলেন তিনি। ফলে দুইটি ভিন্ন দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলার কীর্তি গড়েন তিনি।
সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৭৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এড জয়েস। সেখানে ৩৮.০০ গড়ে করেছেন ২৬২২ রান। সর্বোচ্চ ১৬০ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস সহ আছে মোট ৬ টি সেঞ্চুরি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে মাঝে প্রায় ৫ বছর নষ্ট না হলে আয়ারল্যান্ডের সর্বকালের সেরাদের একজন হতে পারতেন তিনি।
ওদিকে তাঁর দুই ভাইও খেলেছেন আয়রল্যান্ডের হয়ে। তাঁর আরেক ভাই আয়ারল্যান্ড অনুর্ধ্ব-১৯ দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। জয়েসের দুই জমজ বোনও ক্রিকেট খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। ইসোবেল জয়েস দেশটির নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন। ফলে আয়রল্যান্ডের ক্রীড়াক্ষেত্রে সম্ভ্রান্ত এক পরিবার হয়ে ওঠে জয়েসরা।
এড জয়েস আয়ারল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন ১৮ টি। সেখানে ৩৩.৭৫ গড়ে করেছেন ৪০৫ রান। তবে জয়েসের টেস্ট ক্রিকেটের স্বপ্নটা যে পূরণই হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত সুযোগটা আসে। আয়ারল্যান্ড টেস্ট দলের স্বীকৃতি পায়। আয়ারল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচে দেশটির হয়ে খেলেন এড জয়েস। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ৪৩ রানের একটি ইনিংসও খেলেছিলেন।
সেটিই অবশ্য তাঁর প্রথম ও শেষ টেস্ট ম্যাচ ছিল। তবে যেই টেস্ট খেলার জন্য ইংল্যান্ডও পাড়ি জিমিয়েছিলেন সেই স্বপ্নটা সত্যি করেছেন জয়েস। ক্রিকেটের আদি এই সংস্করণের প্রতি ভালবাসায় যিনি জড়িয়েছেন পুরো ক্যারিয়ারে।