‘ভাইয়ার দরজা আমাদের জন্য খোলা’

মাশরাফির ভালোবাসা পাননি, তার কাছে যাওয়া এমন ক্রিকেটার খুজে পাওয়া যাবে না। তবে এর মধ্যে তাসকিন আহমেদের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। নিজের ছায়া দেখতে পেতেন যেনো মাশরাফি এই তাসকিনের মধ্যে। আর তাসকিনও সেই ছোটবেলা থেকে ভয়ানক মাশরাফিভক্ত।

এখন যখন নিজের বোলিংয়ে আরেকটু উন্নতির দরকার, সেই মাশরাফিকেই ডেকে নিলেন। মাশরাফিও শত ব্যস্ততার মধ্যে তাসকিনকে ক্লাশ করালেন যেনো। মাশরাফির অন্য এক রূপ দেখলো ক্রিকেট। তাসকিন বললেন, তিনিও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।

মাশরাফির কাছ থেকে শেখা এবং দু জনের সম্পর্ক, ম্যাশকিন উদযাপনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ।

জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে আপনার তো টিপস নেওয়ার জায়গার অভাব নেই। কিন্তু স্লোয়ার বা কাটারের জন্য মাশরাফির দ্বারস্তই কেনো হলেন?

প্রথম কথা হচ্ছে ভাইয়া (মাশরাফি) ডানহাতিদের মধ্যে সম্ভবত কাটারটা সবচেয়ে ভালো করতে পারে। ওনার অফকাটার খুব ভালো হয়। পেস ভেরিয়েশনের ব্যাপারটাও যে কারো চেয়ে মাশরাফি ভাই ভালো পারেন। আরেকটা ব্যাপার হলো, উনি আমার সম্পর্কে সব জানেন। আমি কী অ্যাকশনে বল করি, আমার জন্য কোনটা ভালো হবে; এটা উনি সবচেয়ে ভালো বোঝেন। আমাকে অনেকদিন ধরেই তো দেখছেন। ফলে আমার মনে হয়েছে যে, ওনার হেল্প নিলেই সবচেয়ে ভালো হবে।

কেমন হেল্প পেলেন?

ভাইয়াকে বললাম, একদিন মাঠে আসার জন্য। কাল সেটা এলেন। আমাকে গ্রিপটা দেখালেন। আমার ওপর কিছু চাপিয়ে দেননি। বলেছেন, একসাথে বেশি কিছু করার দরকার নেই। যে কোনো একটা নিয়ে কাজ করার জন্য। কয়েক ধরণের গ্রিপ আছে। উনি বলেছেন, যেটা আমি ভালো পারবো এবং আরাম পাবো, সেটা যেনো করি। কোন লাইনে বলটা করতে হবে, কোন লেন্থে ফেললে বেশি কাজে দেবে, এগুলোও দেখিয়েছেন। আমার কাজ করার পর মনে হয়েছে, আমি পারবো।

আপনি তো পেস, সুইং, ইয়র্কার নিয়ে ভালোই আছেন। স্লোয়ার বা কাটারের দরকার কী হলো?

একটা ব্যাপার হলো, বোলিংয়ে, বিশেষ করে সাদা বলের খেলায় যত বেশি ভেরিয়েশন থাকে, ততো ভালো। আমি এটা শিখতে পারলে আরেকটা অস্ত্র যোগ হবে। এতে আমার উপকার হবে। ব্যাটসম্যানের ওপর ডমিনেশন বেশি করতে পারবো। আরেকটা ব্যাপার হলো, ইদানিং আমাদের অনেক স্লো উইকেটে খেলতে হয়। ওসব উইকেটে শুধু পেস আর সুইং দিয়ে ভালো কিছু করা কঠিন। পেস ভেরিয়েশনটা ওখানে খুব দরকার। তাই মনে হলো স্লোয়ার-কাটার শিখতে পারলে আমার উপকার হবে।

কাটার কী আগে কখনোই ট্রাই করেননি?

করেছি। কিন্তু ধরতো না। আমার কাটার মিরপুরের উইকেটেই ধরতো না। এখানে তো মাশরাফি ভাই, মুস্তাফিজ খুব ভালো কাটার করায়। তাই আমার আসলে এটা ডেভেলপ করার দরকার ছিলো।

স্লোয়ার করতে গিয়ে আবার গতিতে প্রভাব পড়বে না তো?

না, না। গতি তো আমার মূল স্ট্রেন্থ। আমাকে তো দলে নেওয়াই হয় ফাস্ট বোলার হিসেবে। পেস আর সুইং আমার মূল ব্যাপার। এরপর বাকীটা। আমি কালও বলেছি, আমি মুস্তাফিজের মত কাটার মাস্টার হতে চাচ্ছি না। বা মাশরাফি ভাইয়ের মত দুর্দান্তও হতে চাচ্ছি না। আমি স্রেফ আরেকটা ভেরিয়েশন যোগ করতে চাচ্ছি। আসলে সাদা বলে এক ধরণের বল আপনি করে গেলে মার খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সে জন্য সবসময় ভিন্ন কিছু করতে হয়।

দ্রুতই কী এটা ম্যাচে করবেন?

আমি যদি নেটে ভালোভাবে করতে পারি এবং নিজে আত্মবিশ্বাসী থাকি, তাহলে করবো। আগে আমাকে স্বচ্ছন্দ হতে হবে। সেটা হলেই ম্যাচে করে দেখবো।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শরিফুলের সাথে চেস্ট বাম্প সেলিব্রেশন করলেন। মাশরাফির কথা মনে হচ্ছিলো?

খুব। শরিফুল এর আগে আমাকে বলছিলো, ভাই স্পেশাল একটা সেলিব্রেশন করতে চাই উইকেট পেলে। আমি বললাম, স্পেশাল সেলিব্রেশন তো জীবনে একজনের সাথেই করেছি। ওই একটাই পারি। ও বললো, চলেন, ওটাই করি। তাই করলাম। পুরোটা সময় আমার ভাইয়ার কথা মনে হচ্ছিলো।

২০১৫ সালে যখন মাশরাফির সাথে চেস্ট বাম্প (ম্যাশকিন) করলেন, তখন কী আলোচনা করে করেছিলেন?

হ্যা। ভাইয়াকে আগে বলেছিলাম, এটা করবো। কিন্তু কখন কী করবো, সে নিয়ে আমরা কথা বলিনি। ওটা হয়ে গেছে।

এটা কী প্র্যাকটিস করতে হয়? ঠিকঠাক মত যাতে বুকে বুক মেশে।

(হাসি) না, না। প্র্যাকটিস করতে হয় না। এটা হয়ে যায়।

সবমিলিয়ে মাশরাফিকে কতটা মিস করেন? আপনার জন্য তো একটা বড় গাছের ছায়া ছিলো।

খুব, ভাই খুব মিস করি। নেটে, দলে সবসময় মনে হয়, ভাইয়া থাকলে এটা বলতো, ওটা বলতো। কিন্তু এটাই তো আসলে জীবন। আমি মিস করলে ফোনে কথা বলি। প্রায়ই কথা বলি। বোলিং নিয়ে কথা হয়। এ ছাড়া অনেক কিছু নিয়ে কথা বলি।

এখন তো সে ব্যস্ত মানুষ। বিরক্ত হয় নাকি?

না, না। উনি ফোন ধরতে না পারলেও পরে ব্যাক করে। আমার কাছে তো ভাইয়াই। ভাইয়ার দরজা আমাদের জন্য খোলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link