উত্তাপ ছড়াবেন গ্রীষ্মের দলবদলে

ইউরোপিয় ফুটবল যতটা না আনন্দদায়ক, ঠিক তার সমপরিমান বিনোদনের পসরা নিয়ে হাজির হয় দলবদল। গুঞ্জন ভেসে বেড়ায় সমগ্র পৃথিবী। একটা চাপা চিন্তায় মত্ত থাকেন সমর্থকেরা। পছন্দের খেলোয়াড়টি কোন দলে যাবে, আদৌ কি পছন্দের দলটিতে সে যেতে পারবে কি না, নতুন দলে খেলার সময়টুকু ঠিকঠাক মিলবে কি না এসব কিছু নিয়ে যেমন খেলোয়াড় এবং তাঁর সংশ্লিষ্টরাও চিন্তা করে। তার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের সমর্থকদেরও যেন এসব ভাবতে গিয়ে রাত ঘুম কামাই হয়ে যায়।

এত উন্মাদনা! এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদল প্রচন্ড উত্তাপ ছড়িয়েছে ইউরোপ ছাপিয়ে গোটা বিশ্বে। আগামী গ্রীষ্মেও ইউরোপিয় ফুটবলের উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আজ এমন ছয়জন খেলোয়াড়দের একটা তালিকা করেছে খেলা ৭১। যারা কিনা গোটা দুনিয়ার ফুটবল অঙ্গনে আগ্নেয়গিরির লাভা ছড়িয়ে দিতে পারেন ২০২২ এর মধ্যভাগে।

  • লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)

অভিজ্ঞতা কিংবা বয়স বিবেচনায় এই তালিকায় প্রথমেই আছেন লুইস সুয়ারেজ। ৩৪ বছর বয়সী এই উরুগুয়ে তারকা স্ট্রাইকার বর্তমানে খেলছেন আতলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে। আতোয়ান গ্রিজম্যানের সংযোজনে হয়ত আতলেটিকো সমর্থকেরা নতুন আশাইয় বুক বেধেছেন। সুইয়াজ-গ্রিজম্যান জুটিতে ভর করে তাঁরা জিতে নেবেন সব ট্রফি। কিন্তু গত মৌসুমের একুশ গোল করে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা সুয়ারেজ ২০২২ পর্যন্তই কেবল মাত্র চুক্তিবদ্ধ ডিয়েগো সিমিওনের দলের সাথে।

সমর্থকরা হয়ত আশা করছেন তাঁর সাথে চুক্তি নবায়ন করবে আতলেটিকো মাদ্রিদ। কিন্তু বয়সটা বেড়ে যাচ্ছে যে। আগামি গ্রীষ্মে ৩৫ এ পদার্পণ করবেন সুয়ারেজ। তিনি হয়ত চাইবেন আরেকটু চাপ কম নিয়ে ক্যারিয়ারের শেষটায় কোন এক ছোট ক্লাবের হয়ে খেলে জেতে। কিংবা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ হয়ত খুঁজবে তরুণ কাওকে। উভয়ক্ষেত্রেই দল ছাড়তে হতে পারে সুয়ারেজকে। আগামি মৌসুমের শুরুতে তাঁর এই দলবদলে নিশ্চয়ই চোখ থাকবে সকলের।

  • অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (আর্জেন্টিনা)

গত গ্রীষ্মকালীন কাগজে-কলমে দলবদলে সবচেয়ে সফল দল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। একেবারে গোলরক্ষক থেকে শুরু করে আক্রমণভাগ অবধি সব স্থানের জন্যে খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি। মধ্যমাঠ এবং আক্রমণ বর্তমান ফুটবলে অন্যতম সেরা। তবে এতে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে ডি মারিয়াকে।

আর্জেন্টাইন এই তারকা ফুটবলারের খেলার সময় নিয়ে হতে পারে গড়মিল। । ৩৩ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় অনায়সে যেকোন বড় দলে চলে যেতে পারেন আগামী গ্রীষ্মের দলবদলে। তবে এমবাপ্পের দল ছাড়ার গুঞ্জন বেশ তীব্র। এখন দেখবার বিষয় খেলার সময়ে ছাড় দিয়ে ডি মারিয়া কি থেকে যান, নাকি বেড়িয়ে পড়বেন নতুন কোন রোমাঞ্চের উদ্দেশ্যে। তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।

  • পল পগবা (ফ্রান্স)

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা মিডফিল্ডার পল পগবা বেশ সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন রেড ডেভিলদের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর থেকে। তবে বর্তমানে তিনি তাঁর হারানো ফর্মে ফিরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওলে গুনার সোলসায়ারের পছন্দের ফরমেশন ৪-২-৩-১ এ একজন আদর্শ প্লেমেকার রুপে খেলার স্বাধীনতাতে তাঁর এমন ফিরে আসা বলে অভিমত অনেক ফুটবল বিশারদদের।

তবে এই ভাল সময় হয়ত ক্ষণস্থায়ী হতে চলেছে। এই মৌসুম পর্যন্ত পগবার চুক্তি ছিল ম্যান ইউর সাথে। তাছাড়া তাঁর এজেন্ট বেশ ক’বার গনমাধ্যমে পগবার দল ছাড়ার ইচ্ছের ইঙ্গিত করছেন। তাঁকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি থেকে শুরু করে তাঁর প্রাক্তন ক্লাব জুভেন্টাসের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে ম্যান ইউর সাথে চুক্তি নবায়নের সুযোগ রয়েছে পগবার। পগবা ওল্ড ট্রাফোর্ড ছেড়ে চলে যাবেন কি না তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আগামী জানুয়ারি অবধি।

  • পাওলো দিবালা (আর্জেন্টিনা)

আগামী গ্রীষ্মের হটকেক হতে পারেন ২৭ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড দিবালা। তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড়। তাঁকে নিজেদের করে নিতে মরিয়া হয়ে থাকবে ইউরোপের বড় দলগুলো। তবে খুব সম্ভব তিনি যেতে পারেন প্রিমিয়ার লিগের কোন ক্লাবে।

তবে দিবালার দলবদলে অন্যতম বাঁধা হতে পারে তাঁর বড় অঙ্কের বেতন চাহিদা। তবে প্রায় ২৫০ ম্যাচে জুভেন্টাসের হয়ে ১০০ গোল করা এই ফরোয়ার্ডকে দলে নিতে বড় অঙ্কের বেতনের ভার বহন করতে দ্বিধাবোধ করবে না কোন বিত্তশালী ক্লাব। তাছাড়া কোন প্রকার দলবদল বাবদ খরচ ব্যতিত তাঁকে দলে ভেড়াতে দিবালার চাহিদা কোন বাঁধার সৃষ্টি করবে না। চুক্তি নবায়ন বা নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ না হওয়ায় আগামী গ্রীষ্মে দিবালাকে দলে ভেড়াতে সুযোগ-সুবিধার ভাণ্ডার নিয়ে লড়াইয়ে নামবে ইউরোপিয় পরাশক্তি দলগুলো।

  • ওসমান ডেমবেলে (ফ্রান্স)

২০১৭ সালে নেইমারের বিকল্প হিসেবে ফরাসি তারকা খেলোয়াড় ওসমান ডেমবেলেকে দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা। রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল বার্সা তাঁর পিছনে। তবে তিনি যেন জলজ্যান্ত এক হতাশা। ধারণা করা হতো তিনি হয়ত এমবাপ্পের সমপরিমাণ একজন খেলোয়াড়ে পরিণত হবেন। তবে সবাইকে হতাশ করে দিয়ে গেলো চার বছরে মাত্র ৮১ লিগ ম্যাচ খেলেছেন ডেমবেলে কাতালানদের হয়ে।

বার্সা ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়জুড়ে তিনি ছিলেন ইনজুরির আগ্রাসনে ঘায়েল। দিতে পারেননি নিজের সেরাটুকু। তাই আগামী গ্রীষ্মে ডেমবেলের সাথে বার্সার চুক্তি শেষের সাথে ডেমবেলে হয়ত খুঁজবেন তাঁর জন্যে নতুন ঠিকানা। তাছাড়া তাঁর দলবদল মোটামুটি নিশ্চিত। কেননা তিনি না দল ছাড়তে না চাইলেও বার্সা কর্তারা তাঁকে আর রাখতে চাইবেন না খরচ কমাতে। যেই বার্সা কি না ছেড়ে দিয়েছে তাদের তুরুপের তাস, তাদের প্রান ভমরা লিওনেল মেসিকে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। সেই বার্সা নিশ্চয়ই চাইবে না ডেমবেলের মতো একজন ব্যয়বহুল একজন নিষ্ফলা খেলোয়াড়কে দলে রাখতে।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)

মেসি-রোনালদো পরবর্তী যুগে যাদেরকে ভাবা হচ্ছে ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে তাদের মধ্যে কিলিয়ান এমবাপ্পে অন্যতম। মাত্র ২২ বছর বয়সী বিশ্বকাপ জয়ী এই তরুণ তুর্কিকে এবার গ্রীষ্মেই মরিয়া হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কারিকারি অর্থের প্রলোভন দেখিয়েও পিএসজির মন গলাতে পারেনি রিয়াল সভাপতি পেরেজ। অগত্যা এবার তাঁকে দলে ভেড়াতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ।

এমবাপ্পের সাথে পিএসজির চুক্তি রয়েছে ২০২২ এর জুন অবধি। তাছাড়া এমবাপ্পে পিএসজির সাথে নতুন চুক্তি সাক্ষরে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর দল ছাড়ার বিষয়টি পরিস্কার। তবে শেষমেষ তাঁকে দলে ভেড়াতে পারেনি নাকি রিয়াল মাদ্রিদ তা হতে পারে ২০২২ এর গ্রীষ্মকালীন দলবদলের প্রধান আকর্ষণ। তাঁকে ঘিরে নানারকম গুজবে ইতিমধ্যে ছয়লাভ গনমাধ্যম থেকে শুরু করে ফুটবল পাড়া।

২০২২ সালে একটা জমজমাট দলবদলের আভাস দিচ্ছে এই তালিকা। অপ্রত্যাশিত কোন দলবদল হবার সম্ভাবনাও ফেলে দেওয়া যায় না। কিংবা নতুন কোন উদীয়মান তারকা যে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নেবেন না তা বলাটাও বেশ মুশকিল। অপেক্ষার প্রহরের সাথে সাথে চলুক ফুটবলের উন্মাদনা, সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাক সবকিছু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link