ফরহাদ রেজা থেকে জিয়াউর রহমান এরপর মাশরাফি মুর্তজাকে দিয়েও চেষ্টা করা হয়েছিলো পেস বোলিং অলরাউন্ডার সংকট কাটানোর। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গোড়াপত্তন থেকেই একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের বড্ড অভাব! ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গুটি কয়েকজন সম্ভাবনা দেখালেও ঝড়ে পড়েছেন অকালেই। সেই তালিকায় সম্ভাবনাময়ী তরুণ পেস অলরাউন্ডার হিসেবে নাম লেখান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পেস বোলিং অলরাউন্ডারের শূন্যস্থান পূরণ করছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার পরই সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব ঘুচানোর। তবে ইনজুরি তাঁকে থমকে দিচ্ছে বার বার। একই সাথে টিম কম্বিনেশনের কারণে দলে জায়গা পেতেও বেশিরভাগ সময়ই বেগ পেতে হয়েছে সাইফউদ্দিনকে। তবে, সম্ভাবনাময়ী এই অলরাউন্ডার আছেন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা ২০১৭ সালে। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে পাঁচ বছর খেললেও অভাবনীয় কোনো সাফল্যর এখন পর্যন্ত দেখা পাননি সাইফউদ্দিন। চোটের কারণে বাইরে না থাকলে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে প্রায় নিয়মিত মুখ তিনি। পেস অলরাউন্ডারের তকমা গায়ে নিয়ে এলেও তার কতটা এখন পর্যন্ত দেখাতে পেরেছেন সেটি নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
এখন পর্যন্ত ২৫ টি-টোয়েন্টিতে ১৭ গড়ে ১৭২ রান করেছেন তিনি। বল হাতে শিকার করেছে ২৬ উইকেট। তবে ইকোনমি রেট টাও বেশ চড়া! ৮.৪৮ ইকোনমি রেটে টি-টোয়েন্টিতে বল করেছেন সাইফউদ্দিন। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে হতে পারেননি দলের নিয়মিত মুখ। অবশ্য এর পেছনে ইনজুরিটাই দায়ী। ২০১০ সাল থেকেই পিঠের ইনজুরি বয়ে বেড়াচ্ছেন সাইফউদ্দিন। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলার সময় সিটি ক্লাব মাঠে ড্রাইভ করার পর কবজি ফেটে যায় সাইফের। পিঠের সমস্যাটাও ছিলো আগ থেকেই।
চোটের কারণে খেলতে পারেননি সবশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত সিরিজেও চোটের কারণে খেলতে পারেননি তিনি। এমনকি পিঠের চোটের কারণে বিশ্বকাপের পরে পাঁচ মাস ছিলেন মাঠের বাইরে। ক্যারিয়ারে চোটের সাথে লড়াই করতে করতে ইতিমধ্যেই কেটে গেছে লম্বা সময়।
এই চোট নিয়েই পাড়ি জমিয়েছেন আরব আমিরাতে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। স্কোয়াডে থাকলেও কিছুটা ইনজুরি আছে বলেও শোনা যায়। সেদিক বিবেচনায় বিশ্বকাপের আগে খুব যে স্বস্তিতে আছেন সাইফউদ্দিন এমনটাও নয়। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন চার ম্যাচে! এই চার ম্যাচে ১৩ ওভার বল করে ৭ এর কাছাকাছি ইকোনমিতে ৫ উইকেট শিকার করেন ৮৭ রানের বিনিময়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা ১ ম্যাচেই শিকার করেন ১৩ উইকেট।
ব্যাট হাতে চলতি বছর নামার সুযোগ পেয়েছেন ৫ ম্যাচে। আর এই ৫ ম্যাচে ১৬ গড়ে ৬৪ রান করেন সাইফউদ্দিন। ক্যারিয়ারে বোলার হিসেবে নিজেকে জানান দিলেও ব্যাট হাতে সেভাবে সুযোগ পাননি সাইফ। সাত কিংবা আটে খেলানোয় খুব কম সময়ই ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন আরেকটু পরের দিকে ব্যাটিং করতে চান। অবশ্য এই পজিশনে সাইফ নিজেও খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, এমনটা তিনি নিজেই ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাইফ নিজের সেরাটা দিবেন এমনটাই সবার প্রত্যাশা। তবে ব্যাট হাতে সাইফের যে ভূমিকা সেখানে নিজের সেরাটা দিতে পারবেন তো তিনি? সাত কিংবা আটে একজনকে খেলানো হয় স্লগার কিংবা ফিনিশার হিসেবে। সেই কাজটি লম্বা সময় ধরে করে আসছেন সাইফ। তবে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে তার বোলিং টাই সবার বিশেষ নজরে থাকবে। সাইফের বোলিং পেস বিভাগে যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা।
ইনজুরি বার বার থমকে দিতে চাইলেও নিজের সামর্থ্যের সবটা দিয়ে আবারো ২২ গজে ফিরেছেন সাইফউদ্দিন। চোটের সাথে লড়াই করার অভ্যাসটা তাঁর পুরোনো। চোটে জর্জরিত হয়ে কখনোই তিনি দমে জাননি, বরং ফিরেছেন লক্ষ্য অটুট রেখে। আপাতত লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিতে পারা এবং দলের জয়ে অবদান রাখা।