চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের গ্রুপ পর্বের জমজমাট সব লড়াই। প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে সেমির দৌড়ে থাকতে চাইছেন এগিয়ে। এদিক থেকে টুর্নামেন্টে দারুন শুরু করেছে আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ধসিয়ে দেওয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টান টান উত্তেজনার ম্যাচে আসিফ আলীর কাছে শেষ মূহূর্তের ক্যামিওতে হেরে যায় আফগানরা।
তবে সেমিফাইনালের স্বপ্নটা আফগানদের এখনো চোখ রাঙাচ্ছে।এক জয় ও এক হার নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে পাকিস্তানের পরেই অবস্থান করছে আফগানরা। কিন্তু নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে হঠাৎ করেই আসগর আফগান দিলেন এক অবিশ্বাস্য বার্তা।
জানালেন আগামীকাল নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পরই তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। অবশ্য হঠাৎ করেই টুর্নামেন্টের মাঝপথে তার এমন সিদ্ধান্তে ক্রিকেট বিশ্ব বেশ অবাকই হয়েছে। তবে আসগরের সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। এই বোর্ডের সাথে ক’দিন আগেও সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল আফগানের।
লম্বা সময় ক্রিকেট মাঠে দেশকে সার্ভিস দিয়েছেন আসগর আফগান। ৩৩ বছর বয়সী সাবেক এই আফগান অধিনায়ক ৬ টেস্ট, ১১৪ ওয়ানডে ও ৭৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলেছেন। তিন ফরম্যাটে মিলিয়ে ৪২১৫ রানের পাশাপাশি আফগানিস্তানের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১১৫ ম্যাচে।
২০১৮ সালে আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন আসগর। তার অধীনে টেস্টে ৪ ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে জয় পায় আফগানরা। টেস্টের অঙ্গনে পা রাখার শুরুতেই এমন সাফল্য ইর্ষণীয়।
৫৯ ওয়ানডেতে ৩৪ ও ৫২ টি-টোয়েন্টিতে তার অধীনে আফগানরা জয় পেয়েছে ৪২ ম্যাচে। ২০০৯ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হন আসগর। পরের বছর ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন তিনি।
অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটাও তার অধীনে। মহেন্দ্র সিং ধোনির ৪১ জয় টপকে তিনি দেখা পেয়েছেন ৪২ জয়ের। টি-টোয়েন্টিতে টানা ৪৬ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করে একটানা সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টিতে ক্যাপ্টেন্সির রেকর্ড গড়েন তিনি।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৪ রানের ইনিংস খেলেন আসগর। হাসমতউল্লাহ শাহিদির সাথে ৩০৭ রানের দুর্দান্ত এক জুটিও গড়েছিলেন তিনি। তাদের অনবদ্য জুটিতেই ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৬ উইকেটে হারায় আফগানরা। তার একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি আসে ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে দলকে ৩৪ রানের জয় এনে দিয়েছিলেন আসগর আফগান।
২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানদের ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে হটিয়ে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয় আসগর আফগানকে। প্রায় চারবছর এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে তাঁকে সরিয়ে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় গুলবাদিন নাইবকে।
তবে, বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় পাশার দান পাল্টে যায় আবার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবারো অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি এবং চলতি বছর মে মাসে তাকে সেই দায়িত্ব থেকে দেওয়া হয় অব্যহতি। বোঝাই যাচ্ছে বোর্ডের সাথে সম্পর্কের অনেক রংই দেখেছেন আফগান। শেষটাও অনেক কিছুর আভাসই দিচ্ছে। তা না হলে কেন হঠাৎ, বিশ্বকাপের মাঝপথে অবসর নেওয়ার দরকার পরল?