ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ নেই এখানে

আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

দুই প্রতিবেশী দেশ লড়বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে। ফাইনালের বড় মঞ্চ, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল তবুও কী আকাঙ্খিত উত্তাপটা ছড়াতে পারছে এই ম্যাচ? ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর মনে করেন উত্তাপটা ঠিক ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মত নয়।

দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বীতা নিয়ে গম্ভীর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ’দুই দেশের ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা অতটা জোরালো না। ভারত পাকিস্তানেরটা যেমন স্পষ্ট বোঝা যায়। তাঁরাও কিন্তু প্রতিবেশী দেশ, ভারত-পাকিস্তানের মতই। তাঁরাও একে অপরের বিপক্ষে হারটা ঠিক সহজ ভাবে নিতে পারেনা। তবে বাইরে থেকে সেটা বোঝা কঠিন। এদিকে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দীতা নিয়ে উইকিপিডিয়াতে একটা পেজও আছে।’

গম্ভীর আরো যোগ করেন, ‘ফলে কোনভাবেই বলা যায়না যে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ একটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সমান উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ওদের ওখানে ম্যাচের আগে ম্যাচ নিয়ে নানারকম বিজ্ঞাপন হয় কিংবা এই ম্যাচ ওদের অর্থনীতিতে তেমন প্রভাবও ফেলে না।’

ওদিকে ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হয়ে নিজেদের সুপার টুয়েল্ভের ম্যাচেই। সেই ম্যাচের উত্তাপ ছড়িয়েছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। এই একটা ম্যাচকে ঘিরে দুই দেশের বাজার দল উথাল পাতাল হয়ে। কলকাতা থেকে করাচি টিভি সেটের সামনে আঁটকে যায় জোড়া জোড়া চোখ। ম্যাচ শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই কত আলোচনা, সমালোচনা। চায়ের আড্ডা কিংবা বিজ্ঞাপন সবখানেই এই লড়াইয়ের গল্প। এমনকি রাজনীতি গোল টেবিল কিংবা দুই দেশের সীমান্তেও উত্তেজনা বাড়ে এই এক ম্যাচকে ঘিরে।

গম্ভীর বলেন, ‘দুই দেশের এই ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪ বার এই দুই দেশ সীমান্তে যুদ্ধ করেছে। সেই লড়াইয়ের ছোয়া ক্রিকেট মাঠেও দেখা যায়। কেননা দুই দেশেই ক্রিকেটটা ভীষণ জনপ্রিয়। আমার কখনো কখনো মনে হয় ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বীতা একটা ইনডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। যেটা দিয়ে অনেক কারখানা সচল থাকে। এই ম্যাচের সময় কেউ টিভির ভলিউম কমায় না কারণ সবাই জানে তাঁদের রেভিনিউ বাড়াতে এই ম্যাচের ভূমিকা আছে।’

এছাড়া ভারত-পাকিস্তানের বিশাল জনসংখ্যাও এই উত্তাপের বড় কারণ। দুই দেশেরই আছে বিশাল জনগোষ্ঠী। ফলে এই উত্তেজনা, এই বাজার সবকিছুই তৈরি হয় তাঁদের ঘিরেই।

এই জনসংখ্যা নিয়ে গম্ভীর বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দুই দেশ মিলে তাঁদের জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি। আর শুধু পাকিস্তানের আছে ২২ কোটি মানুষ। এছাড়া ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। ফলে দুই দেশের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষও যদি ম্যাচ নিয়ে আগ্রহী হয় সেটাও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।’

ওদিকে ক্রিকেটের প্রতি সাধারণ মানুষের ভালবাসা কিংবা আবেগও এখানে বেশ বড় বিষয়। উপমহাদেশে ক্রিকেট নিয়ে যেই উন্মাদোনা দেখা যায় সেটা আর অন্য কোথাও নিশ্চয়ই নেই।

ক্রিকেট উন্মাদনা নিয়ে গম্ভীর বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে যে আবেগ কাজ করে সেটা অন্য কোথাও নেই। ওরা হয়তো ক্রিকেট নিয়ে অত বেশি আবেগী না। যেমন অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার এক বন্ধু জানাল, আজ রাতে ফাইনাল তবে এখানকার মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে অত বেশি উন্মাদনা নেই।’

যত যাইহোক, মাঠে নিশ্চয়ই কোন দলই ছেড়ে কথা বলবে না। দুই দলই লড়বে নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি শিরোপা জয়ের জন্য। ওদিকে গম্ভীর বলেছেন ফাইনালে কাকে সাপোর্ট করছেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে এই বিশ্বকাপ জয়ী ওপেনার জানান, ‘আমি চাই বিশ্বকাপটা নিউজিল্যান্ডই জিতুক। কেননা ওরা যেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে সেটা আমার পছন্দ হয়েছে।’

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link