সাগরিকার স্মৃতিতে সেই দুই ট্রাজেডি

সাগরিকায় টেস্ট ম্যাচ মানেই যেনো এক অন্যরকম রোমাঞ্চ। চট্টগ্রামের এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবারো টেস্ট ম্যাচ খেলতে পৌছে গিয়েছে বাংলাদেশ। এবারে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী পাকিস্তান। যদিও সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থাটা সুখকর না। সবকিছু যেন একটা এলোমেলো, অপরিকল্পিত অবস্থায় পড়ে আছে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের টানা ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ দলের ঘুরে দাঁড়ানোর বড় সুযোগ হতে পারে এই চট্টগ্রাম টেস্ট। তবে একটু স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলেই রোমাঞ্চকে ঠেলে সরিয়ে সামনে চলে আসে কালো মেঘ। কেননা এই জহুর আহমেদ চৌধুরে স্টেডিয়ামে শেষ দুই টেস্টের স্মৃতি যে ভয়াবহ। সেই স্মৃতিকে স্রেফ একটা দুঃস্বপ্ন মনে করে ভুলে যেতেও চাইতে পারে বাংলাদেশ।

এমনিতে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের সাফল্য হাতে গোনা। তবে ২০১৬-১৮ সালের মধ্যে ঘরের মাঠে বড় কিছু সাফল্যও পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বাইরেও টুকটাক কিছু সাফল্য মিলতে শুরু করেছিল সবে। তবে সাফল্যের সেই ধারা যেনো এক ধাক্কায় ভেঙে চুড়মার হয়ে গিয়েছিল এই চট্টগ্রামেই।

২০১৯ সালে বর্ষা মৌসুম পার করার পরেই বাংলাদেশে একটি টেস্ট খেলতে এসেছিল আফগানিস্তান। সাদা বলের ক্রিকেটে আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই নিজেদের জায়ান্ট কিলার হিসেবে পরিচিত করতে পেরেছে। তবে লাল বলের সেই ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই সবার বাজি ছিল সাকিব, মাহমুদুল্লাহদের নিয়ে গড়া অভিজ্ঞ বাংলাদেশ দল।

সাগরিকায় সকাল দিকে বয়ে যাওয়া বাতাসের কথা জেনেও সেদিন সাহস দেখিয়েছিল আফগানিস্তান। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। বল হাতে তাইজুল শুরুটাও ভালোই করেন। আফগানিস্তান স্কোরবোর্ডে ৫০ রান জমা করার আগেই তাঁদের দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলে। তবে এরপর প্রতিরোধ গড়েন রহমত শাহ। পাক্কা ২১০ মিনিট ব্যাটিং করে খেলেন ১০২ রানের ইনিংস। এরপর আজগর আফগানের ব্যাট থেকেও আসে ৯২ রান। দুইজনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৩৪২ রানের ভালো সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলে আফগানরা।

তবে বাংলাদেশ হোঁচটটা খায় ব্যাট করতে নেমে। সাগরিকায় সেদিন রশিদ খান হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোদ্ধ। এক মুমিনুল বাদে কেউ পার করতে পারেনি ৫০ রানের গন্ডিও। তবুও মুমিনুলের ৫২ ও মোসাদ্দেকের ৪৮ রানে টেনেটুনে দুইশর ঘরে পৌছায় বাংলাদেশ। রশিদ খান একাই তুলে নিলেন ৫ উইকেট।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের শক্তি জানান দেয় আফগানিস্তান। এবার ইব্রাহীম জাদরান খেলেন ৮৭ রানের ইনিংস। এরপর আবার আজগর আফগানের হাফ সেঞ্চুরিতে ২৬০ করে আফগানিস্তান। চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৮ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য নূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। এবারো রশিদ খানের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করে ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় সাকিবরা। দুই ইনিংস মিলে রশিদ খান একাই নেন ১১ উইকেট।

সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই এইবছরের শুরুতে আবার চট্টগ্রামে আসে বাংলাদেশ দল। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটা দ্বিতীয় সারির দল আসে বাংলাদেশে। এই ম্যাচে অবশ্য ফেভারিট দলের মতই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আট নম্বরে নেমে মিরাজে সেঞ্চুরিতে ৪৩০ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।

বোলিং করতে নেমেও অপ্রতিরোধ্য মিরাজ। একাই তুলে নেন ক্যারিবীয়দের চাই উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ২৫৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর তখন জয়ের কথাই ভাবছিল বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ইনিংসেও আরো ২২৩ রান যোগ করলে চতুর্থ ইনিংসে ক্যারিবীয়দের সামনে ৩৯৫ রানের বিশাল পাহাড়। ব্যাট করতে নেমে ৫৯ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন শুধু বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা।

তবে তখন এক বিশাল কালো মেঘ হয়ে সাগরিকায় হাজির হয় কাইল মায়ার্স। সেদিনের আগে বোধহয় এই নামটা ঠিক করে জানতোও না ক্রিকেট বিশ্ব। নিজের অভিষেক ম্যাচে ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে বসলেন তিনি। চট্টগ্রামের উইকেটে মিরাজ, তাইজুল, নাঈমদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করে দানবীয় এই ব্যাটসম্যান। ফলে তিন উইকেটের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

ফলে চট্টগ্রাম টেস্টের রোমাঞ্চে দুর্বিষহ স্মৃতিও আছে বাংলাদেশের। সেই স্মৃতি মাথায় রেখেই মাঠ নামবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সময়টাও ভালো যাচ্ছেন বাংলাদেশের। তাও আবার প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে শক্তিশালী পাকিস্তানকে। তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই তো মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়, ঝড়ই তো মানুষকে বেঁচে থাকার লড়াই শেখায়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link