টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনভাবেই মিলছে না সাফল্য। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংটাই আজ অবধি করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সেই ব্যাটসম্যান কিংবা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার তৈরি করার জন্য আগামী মাসে বিপিএল আয়োজন করা চাই-ই চাই। কেননা বছরখানেক বাদেই আছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কি আদৌ ক্রিকেটার তৈরির টুর্নামেন্ট?
ভারতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার তৈরি করার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে একাধিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়। সেখানে ক্রিকেটারদের তৈরি করে আইপিএলে নিয়ে আসা হয়। আইপিএলে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের সাথে খেলে, একটা আবহাওয়ায় থেকে ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জন্য প্রস্তুত হন। তবে আমাদের দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচিতে আজ অবধি কোন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট নেই। তাই ক্রিকেটার তৈরি করার জায়গায় পরিণত হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ-বিপিএল।
এ পর্যন্ত আলোচনটা সয়ে নেয়া যাচ্ছিল। তবে এই আগুনে এখন নতুন করে ঘি পড়েছে। বলা হচ্ছে সময় স্বল্পতার কারণে ভেন্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে বিসিবি। অর্থাৎ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের যেকোনো একটি ভেন্যু বাতিল করা হতে পারে। ওদিকে আইপিএলে প্রতিটি দলের আছে আলাদা মাঠ।
তাও যদি বাতিল করতেই হয় বিসিবি কি কখনো মিরপুরকে বিশ্রাম দেয়ার সাহস দেখাবে? কেননা বিপিএল থেকে আমাদের মূল চাহিদা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মেজাজটা বুঝতে পারেন এমন ২-১ জন ব্যাটসম্যান পাওয়া। কিন্তু মিরপুরের পিচে খেলে কী সেই ব্যাটসম্যান পাওয়া সম্ভব?
সিলেট কিংবা চট্টগ্রামের উইকেটও যে খুব ভালো সেটা না। তবে সিলেট, চট্টগ্রামে চাইলে অন্তত ভালো একটা উইকেট বানানো সম্ভব। মিরপুরের চেয়ে অন্তত ঢের এগিয়ে। আমাদের অনেক ব্যাটসম্যানই প্রায়ই আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই, এই পিচে খেলে ভালো ব্যাটসম্যান পাওয়া সম্ভব না।’ বিপিএলে ১২০-১৩০ রান করে তো আর বিশ্বকাপে গিয়ে ১৬০ রান করা সম্ভব না।
এমনিতেই বিপিএল আয়োজন নিয়ে সবসময়ই থাকে নানারকম জটিলতা। এছাড়া বড় মাপের ক্রিকেটারদেরও তাঁদের সেরা সময় পাওয়া যায় না এই লিগে। এবারো ক্রিস গেইল, হরভজন সিংদের মত বুড়িয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে সাজানো হচ্ছে দল। ফলে বিপিএলে ক্রিকেটের মান নিয়েও থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন। এমন মন্থর পিচে, এই মানের ক্রিকেট খেলে আদৌ কি দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চেহারা বদলাবে?
বিপিএলে মাঠ কমিয়ে আনার ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন বলেন,’ আরেকটা হতে পারে তিনটা ভেন্যুর জন্য আমাদের ৬ দিন ভ্রমণ আছে। হয়তো ভেন্যু একটা কমালে আমরা দুদিন সেফ করতে পারি। এটা করব বলছি না। তৃতীয় হচ্ছে ৬ টার জায়গায় ৫টা দল করলে আমরা আবার ৪-৫ দিন সময় পাই। এগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। ২১ তারিখে সিদ্ধান্তটা জানার পরে আপনাদের নির্দিষ্ট করে জানাব।’
ওদিকে আবার আইপিএল তাঁদের ফ্র্যাঞ্চাইজি সংখ্যা বাড়াচ্ছে। আর আমরা আলোচনা করছি ফ্র্যাঞ্চাইজি কমানোর। এমনিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলার কোন সুযোগ নেই। তারপর আবার যদি বিপিএলের দলও কমে তাহলে মোটামুটি জাতীয় দলের বাইরের কিংবা নতুন ক্রিকেটারদের জন্য টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলার দরজাই বন্ধ হয়ে যায়।
আগামী মাসে বিপিএল মাঠে গড়ানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সবই অনিশ্চয়তার চাদরে ঢাকা। ফলে মাঠের ক্রিকেটের মান, ভেন্যু কিংবা দল কমানো অথবা বুড়িয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়েই হয়তো বসতে যাচ্ছে বিপিএল। হয়তো জমকালো উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের সফল আয়োজনও হবে। তবে আমাদের মূল যেই চাওয়া, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উন্নয়ন সেটা আপাতত স্বপ্নেই থাকুক।