বিশ্বের যেকোন কন্ডিশনে, যেকোন দলে ক্রিস গেইলকে আপনি কোন পজিশনে খেলাবেন? উত্তরটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওপেনিংয়ে হওয়ার কথা। তবে এখন বিপিএলের মত একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বরিশালের হয়ে গেইল ব্যাটিং করছেন পাঁচ নম্বরে। আঁতকে উঠার মতই ব্যাপার। অথচ ক্রিস গেইল নামটা শুনলেই এখনো চোখের সামনে ভেসে আসে বিধ্বংসী এক ওপেনারের চেহারা।
আজ বিপিএলে ফরচুন বরিশালের খেলা ছিল না। ক্রিস গেইলও মাঠে নামেননি। তবে গেইলকে ওপেনিং পজিশন থেকে যিনি প্রথম সরিয়েছেন তিনি আজ খেলেছেন বিপিএলে। গেইল যে তাঁর ওপেনিং পজিশনটা যোগ্য লোকের হাতেই ছেড়ে দিয়ে এসেছেন সেটাই প্রমাণিত হলো আরেকবার। লেন্ডল সিমন্স সিলেটের হয়ে দেখালেন কেন তিনিই ওপেনার।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মিডল অর্ডারেই খেলতেন। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে সেখানে লেন্ডল সিমন্সের সেরাটা আসলে পাওয়া যায়নি। তিন-চার নম্বরে ব্যাটিং করে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল বিশের কিছু উপরে। তবে ২০১৯ সালে তাঁকে ওপেনিং পজিশনে নিয়ে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওপেনার হিসেবে লেন্ডল সিমন্স হয়ে উঠেন অনবদ্য। বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ওপেনার সিমন্সের ব্যাটিং গড় ৩৫.৬৬। এরমধ্যে ২০২০ সালে এই ওপেনার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিং করেছেন ৬৬.৩৩ গড়ে। এই সময়ে ৫ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১৯৯ রান।
বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই এখন অন্যতম আকর্ষণীয় ওপেনার সিমন্স। এবার বিপিএলেও খেলতে এসেছেন সিলেট সানরাইজার্সের হয়ে। আজ ইনিংসে শুরুতেই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে যেন ঝড় উঠিয়ে ফেললেন। মিনিস্টার ঢাকার পেসারদের আঁচড়ে ফেলছিলেন বাউন্ডারির ওপারে। রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা এমনকি নিজের সতীর্থ আন্দ্রে রাসেলের বলেও সপাটে ব্যাট চালিয়েছেন।
ঢাকার বোলিং লাইন আপকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে ৫৯ বলেই তুলে নিলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। এবাদত হোসেনের বলে পরপর দুই বাউন্ডারি মেরে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের এই ম্যাজিক ফিগার। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এছাড়া এবারের বিপিএল প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেল লেন্ডল সিমন্সের ব্যাটে চড়ে।
বিপিএলের ঢাকা পর্বে মোটামুটি বোলারদের রাজত্বই চলেছে। সেখানে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়াটাও যেন কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে চট্টগ্রামের উইকেটে রান হবে এমন আশা ছিল। প্রথম দিনেই সেই আশা পূরণ করলেন লেন্ডল সিমন্স। ক্যারিবীয়দের প্রতিনিধি হয়ে আরেকবার ঝড় তুললেন বিপিএলের মঞ্চে।
অন্যদিকে ক্রিস গেইল বিপিএলে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৭ সালে। তবে দ্য ইউনিভার্স বস এই লিগে করেছেন ৫ টি সেঞ্চুরি। অন্যদিকে বিপিএলে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি সিমন্সের। শেষ পর্যন্ত সতীর্থ আন্দ্রে রাসেলের বলেই ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন তিনি।
তবে আউট হবার আগে খেলেন ১১৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। এই ম্যাচে সিমন্স ব্যাটিং করেছেন ১৭৮.৪৬ স্ট্রাইকরেটে। ৬৫ বলের এই ইনিংসটিতে ছিল ১৪ টি চার ও ৫ টি ছয়। তাঁর এই ইনিংসে চড়ে বিশাল সংগ্রহই করেছে সিলেট। এমনিতেই বিপিএলে খুব একটা ভালো শুরু পায়নি তামিম, রিয়াদ, মাশরাফিদের নিয়ে গড়া ঢাকা। আজ সিমন্সের ব্যাটিং যেন আরো এলোমেল করে দিল ঢাকাকে।