একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। আপনি কি মনে করেন ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিনতম ফরম্যাট কোনটি? যদি টেস্ট ক্রিকেট হয় আপনার উত্তর তাহলে মশাই ঠিকই ধরেছেন। একটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে হয় পুরো পাঁচটি দিন ধরে, পনেরোটি সেশন। একাগ্রতা, ধৈর্য আর স্কিল এ সবকিছুর সমন্বয়ে একজন খ্যাতিমান টেস্ট ক্রিকেটার হওয়া যায়। এসব গুণ কিছু খেলোয়াড়দের মাঝে থাকে একেবারে শুরু থেকেই।
আর কিছু খেলোয়াড় পরবর্তী জীবনে রপ্ত করেন টেস্ট খেলার সব গুণাবলী। সময়ের পরিক্রমায় ক্রিকেটে যুক্ত হয়েছে নতুন সব ফরম্যাট। খেলোয়াড়রা সেই সকল ফরম্যাটে নিজেদেরকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ শুধু টেস্ট ক্রিকেটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
পরিশেষে টেস্ট ক্রিকেটের উজ্জ্বল এক তারকা হয়েই বিদায় জানিয়েছিলেন ভদ্রলোকের খেলাটিকে। আজকে সে সকল খেলোয়াড়দেরকে ঘিরেই হবে আলোচনা, যারা শুধুমাত্র লাল বলের ক্রিকেটেই নিজেদের পুরোটা মেলে ধরেছিলেন।
- জাস্টিন ল্যাঙ্গার (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাটিং অর্ডারের এক দূর্গ গড়ে তুলেছিলেন ম্যাথু হেড আর জাস্টিন ল্যাঙ্গার। প্রায় দশটা বছর এই জুঁটি টেস্ট ক্রিকেটে ছিল অজিদের ভরসার একটা বড় জায়গা। তাঁর ক্যারিয়ারে ল্যাঙ্গার টেস্ট খেলেছেন ১০৫টি। এ সময়ে তিনি প্রায় ৪৫.২৭ গড়ে রান করেছেন ৭৬৯৬ রান।
নিজের ইনিংস গুলোকে লম্বা করার একটা প্রবণতা ছিল তাঁর। ২৩টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩০টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে জাস্টিন ল্যাংগারের টেস্ট পরিসংখ্যানে। অন্যদিকে, ওয়ানডে পরিসংখ্যানটায় খুব একটা চাকচিক্য নেই। মাত্র আট ওয়ানডের ক্যারিয়ার। ৩২ গড়ে করেছেন ১৬০ রান। ল্যাঙ্গারের ধীরস্থির ব্যাটিং ধরণই এর প্রধান কারণ বলে অনেকে মনে করেন। অথচ সেই স্বভাবেই তিনি টেস্ট ক্রিকেটে সাড়ে সাত হাজার রানের মালিক।
- ভিভিএস লক্ষ্মণ (ভারত)
ভারতের সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটারদের একজন ছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। কব্জির যথাযথ ব্যবহারে টেস্টে ক্রিকেটে তাঁর সাবলীল ব্যাটিং যেন ছিলো চোখের শান্তি। কিংবদন্তি এই ব্যাটার বেশ সাফল্যমন্ডিত টেস্ট ক্যারিয়ার পার করেছেন। সেখানে ম্যাচের সংখ্যা ১৩৪টি। রান করেছেন ৮৭৮১। গড়টা ছিল প্রায় ৪৬।
কিন্তু, মুদ্রার ভিন্ন পিঠ লক্ষ্মণের ওয়ানডে ক্যারিয়ার। যেখানে নিজের ব্যাটিং দক্ষতাটা খুব একটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। লক্ষ্মণ অপেক্ষাকৃত স্বল্প ফরম্যাটে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি কখনোই। সাদা বলের ক্রিকেটে লক্ষ্মণের ম্যাচের সংখ্যা কেবল ৮৬টি। ৩০.৭৬ গড়ে রান পেরিয়েছে ২৩ শতকের ঘর। তাই তো কোন ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ভারতের প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ পাননি।
- সুনীল গাভাস্কার (ভারত)
ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ওপেনারদের একজন নিঃসন্দেহে সুনীল গাভাস্কার। তিনি বাঘাবাঘা সব বোলারদের সামলেছেন বিনা হেলমেটে। সেই যাই হোক নিজের ইনিংসটা একটু দেখে শুনে খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন গাভাস্কার। তাইতো ১২৫ টেস্টে তাঁর রান ছাড়িয়েছে ১০ হাজার রানের মাইল ফলক। তাছাড়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ত্রিশটি শতক হাঁকানো ব্যাটারও কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার।
শেষমেশ টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩৪ টা শতক করে থেমেছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাট খুব একটা হাসেনি। কেননা ফরম্যাট বিচারে তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল মন্থর গতির। সেজন্যে তাঁর মতো দারুণ একজন ব্যাটারের ওয়ানডে রান মাত্র ৩০৯২, তাও আবার ১০৮ টি ম্যাচ খেলে।
- ডেনিস লিলি (অস্ট্রেলিয়া)
গতিশীল আতংক হিসেবেই ডেনিস লিলিকে আখ্যায়িত করা শ্রেয়। তাঁর সময়ে অন্যতম দ্রুতগতির বোলার ছিলেন লিলি। গতি আর বাউন্সে ব্যাটারদের কুপোকাত করাই যেন ছিল লিলির প্রধান উদ্দেশ্য। দুর্দান্ত এই বোলার নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে ম্যাচ খেলেছেন ৭০ টি।
যার মধ্যে থেকে ২৩.৯২ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৩৫৫ টি। অপরদিকে, তাঁর খেলা ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৩টি। এই ফরম্যাটে তাঁর নেওয়া উইকেটের সংখ্যা ১০৩ টি। যা তাঁর মতো একজন বোলারের পরিসংখ্যান হিসেবে বড্ড বেমানান। তিনি মনে করতেন ওয়ানডে ক্রিকেটটা শুধুমাত্র দর্শকদের জন্য। সেখানে একজনে খেলোয়াড়ের স্কিল এবং টেকনিক প্রদর্শনের সুযোগ স্বল্প।
- জেফ থমসন (অস্ট্রেলিয়া)
সুনীল গাভাস্কার, ইমরান খান, ভিভিয়ান রিচার্ডসদের মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের মতে সবচেয়ে দ্রুতগতি বোলার অস্ট্রেলিয়ার জেফ থমসন। রড মার্শ একবার দাবি করেছিলেন জেফ থমসন প্রায় ১৮০ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করেন। ভাবা যায়! কি পরিমাণ দানবীয় শক্তি তিনি জেনারেট করতে পারতেন। সেই সাথে তাঁর অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশন। এই দুইয়ের মিশেলে তিনি ছিলেন ব্যাটারদের সাক্ষাৎ যমদূত।
তারকা এই বোলার লাল বলের ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন পুরোপুরি। ২৮ গড়ে ৫১ টেস্টে নিজেছিলেন ২০০ উইকেট। তাঁর বিধ্বংসী রূপ তো এখান থেকেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়। অন্যদিকে, ওয়ানডে ক্রিকেটটায় খুব একটা ভাল সুবিধা করতে পারেননি জেফ। সেখানে ৫০ ম্যাচের বিপরীতে তাঁর উইকেট সংখ্যা কেবল ৫৫টি।