একটা সেঞ্চুরি কিংবা একটি ফাইফার ক্রিকেট দুনিয়া একটি ম্যাচে এ সকল ব্যক্তিগত অর্জন বেশ বড় করেই দেখা হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই দলের জন্যে করা সেই সেঞ্চুরি বা পাঁচটি উইকেট তুলে নেওয়া দিনশেষে দলের জয়ের খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনা। আবার ভিন্ন চিত্রপট যে ক্রিকেটে নেই তাও কিন্তু নয়।
তবে পারফর্ম করেই আলোচনার বাইরে থাকাটা খানিকটা হতাশাজনক। আজকের আয়োজন সেই সকল খেলোয়াড়দের নিয়েই যারা কিনা বর্তমান সময়ে পারফর্ম করার পরও রয়ে যাচ্ছেন আড়ালে। সেই সকল খেলোয়াড়দের নিয়ে রীতিমত একাদশ সাজিয়ে ফেলা সম্ভব।
- ডিন এলগার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষেক হয় বর্তমান টেস্ট ওপেনার ডিন এলগারের। শুরুতেই দু’টি ডাক মেরে ছিটকে যান জাতীয় দল থেকে। এরপর কিংবদন্তি ব্যাটার গ্রায়াম স্মিথের অবসরের পর আবার জাতীয় দলের সুযোগ পান এলগার। তারপর থেকেই নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন। যদিও তাঁর সেই পারফর্মেন্স নিয়ে খুব একটা চর্চা হয় না আন্তজার্তিক ক্রিকেট মহলে।
৭২ টেস্টে প্রায় ৩৯.৮৪ গড়ে তিনি রান করেছেন ৪৫২৮। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক রানের জন্যে দ্বিশতক মিস করা এলগারের ঝুলিতে রয়েছে ১৩টি সেঞ্চুরির রেকর্ড। সম্প্রতি তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
- উসমান খাজা (অস্ট্রেলিয়া)
সামর্থ্য থাকার পরও অজানা কারণে দলের বাইরে থেকে যান বহু খেলোয়াড়। তাঁদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজা। ২০১১ সালে অভিষেক হওয়া খাজা এখন অবধি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন কেবল ৪৬টি। তাছাড়া ওয়ানডেতে খেলেছেন ৪০টি ম্যাচ। ৪৬ ম্যাচ খেলা খাজা টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি করেছেন। ক’দিন আগে দলে ফিরে অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দূর্দান্ত দুই শতক হাঁকিয়েছেন তিনি।
সেখান থেকেও তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ পাওয়া গেলেও তিনি খুব একটা বিবেচিত হন না টেস্ট দলের। সাদা পোশাকে তিনহাজার রানের মাইলফলক পেরোনো খাজা ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজেকে খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি। সেখানে সর্বোচ্চ ১০৪ রান সহ তাঁর মোট রান কেবল ১৫৫৪।
- টেম্বা বাভুমা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
তিন ফরম্যাটেই বর্তমান সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ভরসার নাম টেম্বা বাভুমা। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে খেলা ব্যাটারদের মধ্যে টেকনিক্যাল দিক থেকে বাভুমা বেশ সাবলীল একজন ব্যাটার। ২০১৬ সালে অভিষেক হওয়া বাভুমার ওয়ানডে ব্যাটিং গড়টা দূর্দান্ত। ৫০.১৫।
এ ছাড়া টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতেও বেশ কার্যকরী একজন ব্যাটার টেম্বা বাভুমা। টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ১২৩.০৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে পারেন। অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটের ৩৪.০৮ গড়ে রান করেছেন ২৩১৮। বর্তমান সময়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেও বিশ্ব ক্রিকেটের আলোতে যেন তিনি ধরা পড়েন না।
- পল স্টার্লিং (আয়ারল্যান্ড)
গেল বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক রান করা ব্যাটার পল স্টার্লিং। একেবারে নিজের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তিনি আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন। তবুও নতুন করে আইসিসির সদস্য হওয়া আয়ারল্যান্ড দলে বছর কতক আগেও ছিলো সহযোগী দেশ।
সেই কারণে হয়ত খুব একটা লাইমলাইটে আসার সুযোগ পাননি পল স্টার্লিং। তবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ থেকে শুরু করে আইসিসির বৈশ্বিক মঞ্চে দলের হয়ে হরহামেশাই পারফর্ম করতে দেখা যায় পল স্টার্লিং-কে। ১৩৬ ওয়ানডে খেলে এখন পর্যন্ত স্টার্লিংয়ের ব্যাট থেকে রান এসেছে ৫০৪৭।
- হনুমা বিহারি (ভারত)
টেস্ট ক্রিকেটে মিডল অর্ডার ব্যাটারদের উপর দায়িত্ব থাকে অনেকে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করা ছাড়াও দলের রানের চাকাটা সচল রাখাই মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটারদের কাজ। ভিভিএস লক্ষ্মণের বিদায়ের পর বেশ একটা ঝক্কি পোহাতে হয়েছে ভারতকে। সেই স্থান পূরণ করেছেন ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়া হনুমা বিহারি।
যথার্থ স্কিল নিজের মধ্যে ধারণ করেন হনুমা বিহারি। তিনি আশা জাগাচ্ছেন মিডল অর্ডারের দায়িত্বভার নিয়ে নিতে পারবেন বলে। এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলে ৩৪.২০ গড়ে তিনি রান করেছেন ৬৮৪। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অসাধারণ এক ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন হনুমা।
- ম্যাথু ওয়েড (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের আড়ালের নায়ক হিসেবে ম্যাথু ওয়েডকে বিবেচনা করাই যায়। সেমিফাইনালে তাঁর খেলা অনবদ্য ইনিংসের উপর ভর করেই তো অজিরা উঠেছিলো ফাইনালে। তবুও তিনি রয়ে যাচ্ছেন পর্দার আড়ালেই।
৯৭টা ওয়ানডে খেলেছেন ওয়েড। সেখানে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৮৬৭ রান। অন্য ফরম্যাটেও লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করা ওয়েডে স্ট্রাইকরেট এবং গড় যথার্থই বলা যায়। ১৭ বলে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৪১ রানই ওয়েডের স্বপক্ষে কথা বলে। সময় সুযোগ পেলে তিনিও হতে পারেন মেগাস্টার।
- অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়াও (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বেশ কিছু পারফর্ম করা খেলোয়াড়দের উপস্থিতি যেন এক ধারাবাহিক ঘটনা। তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রোটিয়া অনেক খেলোয়াড় খুব একটা খ্যাতি অর্জন করতে পারেন না। তেমনই একজন খেলোয়াড় হচ্ছেন অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়াও। উপেক্ষিত এই অলরাউন্ডার ২০১৬ সালে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।
মূলত সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে থিতু করতে পেরেছেন ফেহলুকওয়াও। তিনি প্রোটিয়াদের হয়ে ৭১টি ওয়ানডে ও ৩৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এখন অবধি। সেই দুই ফরম্যাটে তাঁর উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬টি ও ৪০টি। ওয়ানডেতে সে বেশ ইকোনমিকাল বোলার।
- আজাজ প্যাটেল (নিউজিল্যান্ড)
ইতিহাসের তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে দশ উইকেট নেওয়া বোলার আজাজ প্যাটেল। তবুও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের সাথে টেস্ট ক্রিকেটে তিনি জায়গা পাননি দলে। কিন্তু বেশ অল্প সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের একটা ছাপ ফেলে রেখে যাওয়ার জন্যে বদ্ধপরিকর আজাজ।
এখন পর্যন্ত তিনি ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে খেলেছেন ১১টি টেস্ট ম্যাচ। বা-হাতি এই স্পিনারের ঝুলিতে রয়েছে ৪৩টি টেস্ট উইকেট। ২৭.১৩ গড়ে তিনি উইকেট নিতে সক্ষম লাল বলের ক্রিকেটে। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে খেলা সাত ম্যাচে তিনি উইকেট নিয়েছেন ১১টি। সবচেয়ে প্রশংসনীয় বিষয় এই ফরম্যাটে তাঁর ইকোনমি রেট ৪.৫৩।
- আদিল রশিদ (ইংল্যান্ড)
আদিল রশিদ ইংল্যান্ড জাতীয় দল থেকে ছিটকে যেতে বসেছিলেন। ২০০৯ সালে অভিষেক হওয়ার পর পুনঃরায় ২০১৫ সালে ফিরেছেন দলে। তারপর থেকে নিজেকে আর হারিয়ে যেতে না দিলেও ঠিকঠাক চর্চায় তিনি কখনই আসতে পারছেন না এই লেগ স্পিনার।
বর্তমান সময়ে ছোট ফরম্যাটে তিনিই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তিনি ১১২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৫৯টি। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি ৭০ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৭৭টি উইকেট।
- শেলডন কটরেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের একজন ছিলেন শেলডন কটরেল। গতির সাথে ভ্যারিয়েশনের মিশেলে তিনি বেশ কার্যকরী একজন পেস বোলার। অন্তত তাঁর পরিসংখ্যান সে কথাই বলে।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলা এই বা-হাতি পেস বোলার একজন উইকেট সন্ধানী বোলার। ওয়ানডেতে ৩৮ ম্যাচে ৫২ উইকেটের একটি পরিসংখ্যান রয়েছে তাঁর। তাছাড়া টি-টোয়েন্টিতে এখন অবধি ৩৬ ম্যাচ খেলে ৪৫টি উইকেট নিয়েছেন কটরেল।
- জশ হ্যাজেলউড (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়া দলে সবসময়ই তারকাদের ভীড় লেগেই থাকে। এত এত তারকাদের ভীড়ে জশ হ্যাজেলউড বরাবরই বেশ উপেক্ষিত। ২০১০ সালে অভিষেক হওয়ার পর ২০১৩ সালের আগে অবধি তিনি নিয়মিত হতে পারেননি।
এরপর থেকে তিনি ওয়ানডে ও টেস্টে প্রায় ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ওয়ানডে ও টেস্টে তিনি সমান ৫৬টি ম্যাচ খেলেছেন। টেস্টে ২১৫টি উইকেটের বিপরীতে তাঁর নেওয়া ওয়ানডে উইকেটের সংখ্যা ৯৩টি। ক্রমশ নিজের পারফর্মেন্সের উন্নতি ঘটিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ২৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। সেখানেও রয়েছে ৩২টি উইকেট।