প্রথম ‘আন্তর্জাতিক’ ক্রিকেট ম্যাচ

১৮৪০ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জ ক্লাবের নামে, কানাডার মি. ফিলিপটটসের তরফ থেকে একটি চিঠি এলো। বলা চলে একটি প্রস্তাব এলো। প্রস্তাবটা ছিল, একটি একটি ম্যাচ খেলবার। তারিখ ধার্য করা হয়েছে, ২৮ আগস্ট ১৮৪০ সাল আর স্থান? টরোন্টো। মানে কানাডা।

১৮৪০ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জ ক্লাবের নামে, কানাডার মি. ফিলিপটটসের তরফ থেকে একটি চিঠি এলো। বলা চলে একটি প্রস্তাব এলো। প্রস্তাবটা ছিল, একটি একটি ম্যাচ খেলবার। তারিখ ধার্য করা হয়েছে, ২৮ আগস্ট ১৮৪০ সাল আর স্থান? টরোন্টো। মানে কানাডা।

বললেই তো হলো না! এত দূরের যাত্রা! প্রথমে নিউইয়র্ক থেকে স্টেজ-কোচে, তারপর স্টিমারে করে ওন্টারিও লেক পার করে, আবার ট্রেন যাত্রা। রাস্তায় খাবার-দাবারের অসুবিধা হতে পারে। তা, সমস্ত বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে যখন সেন্ট-জর্জ ক্লাব ২৮ তারিখ টরোন্টোতে পৌঁছালো, দেখা গেল, টরোন্টো ক্লাবের কেউ এ ধরনের কোন প্রস্তাবের কথা জানেই না!

যা! এ কেমন রসিকতা! টরোন্টো ক্লাবের সেক্রেটারি জর্জ এ. ফিলিপটটস এই রকম কোন প্রস্তাব পাঠানই নি, কখনো সেন্ট জর্জ ক্লাবকে। কে এই মি. ফিলিপটটস বোঝা না গেলেও, তিনি যে একজন ভণ্ড, প্রতারক তা বোঝা গেল। তা শেষ পর্যন্ত খেলা হল।

তাড়াহুড়ো করে একটা দল খাড়া করে খেললো, টরোন্টোর ক্লাবটি। কিন্তু ম্যাচ জিতলো, নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জ ক্লাব। স্বাভাবিক। প্রস্তুতি করে এসেছে। একটা তিক্ততার সৃষ্টি হতে পারতো। তবে দুটি ক্লাবের মধ্যে, এই খেলা দিয়ে একটা হৃদ্যতার সৃষ্টি হলো। শুরু হলো চিঠি চালাচালি। চার বছর ধরে চললো, চিঠিচাপাটির আদানপ্রদান। তারপর সৃষ্টি হলো এক ইতিহাস।

ইতিহাসের সৃষ্টি যখন হয়, তখন খুব বেশি শোরগোল হয় না। শোরগোল হয়, বহু পরে। মানুষ যখন সেটাকে ইতিহাস বলে, একটা নতুন কিছু বলে ভাবতে শেখে, বুঝতে শেখে। এক্ষেত্রেও তাইই হলো। ঠিক হলো, এবার আর, ক্লাব নয়। খেলা হবে দুই দেশের মধ্যে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কানাডার। প্রসঙ্গত, সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় এই খেলাটিকে দুই দেশের খেলা (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা) হিসেবেই দেখেছে এবং লিখেছে। দুটি ক্লাবের খেলা হিসেবে নয়।

দিনক্ষণ স্থির হলো, ২৪ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৪৪ আর স্থান? এবার ঠিক হলো, সেন্ট জর্জ ক্লাবের মাঠ। চারিদিকে প্রচার করা হলো। বিভিন্ন ক্লাব থেকে ঝাড়াই-বাছাই করে দল তৈরী হলো। প্রস্তুত হলো ‘ন্যাশনাল টিম’। চললো প্রস্তুতি।

দেখতে দেখতে দিন চলে এলো। প্রায় পাঁচ হাজার লোক সকাল সকাল জড়ো হলো মাঠে, এই ম্যাচ দেখতে। দশটায় শুরু হবার কথা। কিন্তু শুরু হলো, প্রায় আরো পৌনে দু’ঘন্টা পরে। শুরু হলো, পৃথিবীতে প্রথম দুই দেশের মধ্যে খেলা। প্রথম ‘আন্তর্জাতিক’ ম্যাচ।

তা, খেলার ফলাফলটা খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়। তবু স্কোরটা বলি। কানাডা প্রথম ইনিংস – ৮২ রান। আমেরিকা প্রথম ইনিংস – ৬৪ রান। কানাডা দ্বিতীয় ইনিংস – ৬৩ রান। আমেরিকা দ্বিতীয় ইনিংস – ৫৮ রান। কানাডা ২৩ রানে জিতেছিল ম্যাচটি।

দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টি হবার জন্য, একদিন পরে মানে ২৬ তারিখ ম্যাচ শেষ হয়, ম্যাচ। এর পরেও এই দুই দেশ বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছে নিজেদের মধ্যে। তারপর ১৮৪৬ সালে, একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে অসন্তোষের জেরে বন্ধ হয়, দুই দেশের ‘টাই’। যদিও আরো, বিভিন্ন গল্প জুড়ে আছে, এই ম্যাচ ঘিরে, এই ম্যাচের মানুষদের নিয়ে।

তবে সব আছে, ইন্টারনেটে। এবার সে সব গল্পের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। ইন্টারনেটে সব আছে। একটু কষ্ট করে পড়ে ফেলুন। আর মনে মনে ভাবুন। যে খেলাটা সব চেয়ে বেশী পছন্দ করেন। সেই ক্রিকেট।

হ্যাঁ, সেই ক্রিকেট। প্রথম ‘আন্তর্জাতিক’ খেলা, যে কোন খেলার মধ্যে।

যে কোন কুইজের আসরের প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া, প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের (ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, ১৫-১৯ মার্চ ১৮৭৭) থেকেও তেত্রিশ বছর আগে আর প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল ম্যাচের (প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল ম্যাচ, ইংল্যান্ড বনাম স্কটল্যান্ড, ৩০ নভেম্বর ১৮৭২) আঠাশ বছর আগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link